পুতিনের হাতে যেমন চলছে ক্রিমিয়া

Putin২০১৪ সালে গণভোটের মাধ্যমে রাশিয়ায় যোগ দিয়েছিল ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ। কৃষ্ণসাগরের তীরে অবস্থিত এই উপদ্বীপ নিয়ে তখন থেকেই চলে আসছে নানা রকম জল্পনা-কল্পনা। সেই সঙ্গে উত্তেজনাও। ঐতিহাসিকভাবেই ওই অঞ্চল গ্রিক, রোমান, মোঙ্গল, তুর্কি এবং রুশসহ বিভিন্ন সাম্রাজ্য দ্বারা শাসিত হয়েছে। তাই বিশ্বের ইতিহাসে এই উপদ্বীপটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। সম্প্রতি সেই ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিনের তিন দিনের সফরে নড়েচড়ে বসেছেন অনেকেই।
ক্রিমিয়ায় পুতিনের সফরকে ‘শক্তি প্রদর্শনী’ হিসেবেই দেখছে পশ্চিমাপন্থী বিরোধী পক্ষগুলো। এমনকি ইউক্রেনের ইউরোপ-আমেরিকাপন্থী সরকারও এই সফরের নিন্দা জানিয়েছে। তারা দাবি করেছে, ২০১৪ সালের মার্চের গণভোটের সময় ক্রিমিয়ার রাস্তা ছিল সশস্ত্র যোদ্ধাদের দখলে। আর ওই গণভোট ছিল ইউক্রেনের সংবিধানের পরিপন্থী। তাই ক্রিমিয়াকে একদিন ইউক্রেনে ফেরত আনা হবে বলে আবারো হুঙ্কার দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, রাশিয়ার সঙ্গে ক্রিমিয়ার একীভূত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতেই রাশিয়ার ওপর একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে থাকে আমেরিকা ও ইউরোপ।
কিন্তু একে দৃশ্যত কোনো পাত্তা দেননি পুতিন। গোলযোগপূর্ণ ওই অঞ্চলে যথেষ্ট ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও এই সফরই তার ইঙ্গিত দেয়। তার ওপর ক্রিমিয়ায় পেঁৗছে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ‘এই ভূমিতে বসবাসকারী মানুষের সিদ্ধান্তের ওপরই ক্রিমিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। তারা রাশিয়ার সঙ্গে একীভূত হওয়ার জন্য ভোট দিয়েছে। আর এটাই শেষ কথা।’
ক্রিমিয়ায় শুধু আনুষ্ঠানিকতায় থেমে থাকেনি পুতিনের কর্মসূচি। বরং মিনি-সাবমেরিনে (ডুবোজাহাজ) করে কৃষ্ণসাগরের গভীরেও ভ্রমণ করেছেন তিনি। আনুষ্ঠানিকভাবে একে সমুদ্রতলে ভাঙা জাহাজ পরিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করা হলেও সমালোচকরা বলছেন, এটি শক্তি প্রদর্শনেরই নামান্তর। উল্লেখ্য, ক্রিমিয়া একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
সম্প্রতি প্রত্যক্ষ পর্যালোচনায় জানা গেছে, সেখানকার বেশিরভাগ নাগরিকই মস্কোর প্রতি সহানুভূতিশীল। তাই অনেকের কাছেই, সোভিয়েতের পতনের পর একীভূত হওয়ার মাধ্যমে, ক্রিমিয়া আবার রাশিয়ায় ‘ফিরে গেছে’। আর এমন মতামত সেখানে বেশ জনপ্রিয়ও। মস্কোর পক্ষ থেকেও ওই অঞ্চলের মানুষের প্রতি সমান আগ্রহ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। এ ক্ষেত্রে তারা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করছে।
ক্রিমিয়ার ধূসর নুড়িপাথরের সৈকত ইউক্রেনীয়দের জন্য সব সময়ই ছিল আকর্ষণীয়। তবে বর্তমানে ইউক্রেনের পর্যটকদের সেখানে দেখা যাচ্ছে না। অবশ্য এগিয়ে এসেছে রাশিয়া। ছুটির দিনে ক্রিমিয়ার সৈকতে ভ্রমণের জন্য দেশটি নাগরিকদের উৎসাহিত করছে। ক্রিমিয়া ভ্রমণে আসা রুশ নাগরিক ওলগা বলেন, ‘আমরা পারিবারিকভাবে সাধারণত বুলগেরিয়ায় ছুটির দিনগুলো কাটাতাম। কিন্তু এবার যখন ক্রিমিয়া আমাদের হলো, তখন আমরা এখানে আসার সিদ্ধান্ত নিই।’
ইউক্রেন ছাড়ার পর লক্ষণীয় দুরবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল ক্রিমিয়ায়। তাৎক্ষণিকভাবে ক্রিমিয়ার অনেক অধিবাসীর ইউক্রেনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমানো অর্থ আটকে যায়। তাছাড়া ফোন নাম্বার, মাস্টারকার্ড ইত্যাদিও অকেজো হয়ে পড়ে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও কেনাকাটায় তীব্র সংকট দেখা দেয়। তাছাড়া সেখানকার স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নেয়া শিক্ষার্থীদের ইউরোপে বয়কটের চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। আরো দেখা যায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। তবে মজুরি বৃদ্ধির মাধ্যমে কিছু সমস্যার আপাত সমাধানের চেষ্টা করছে রাশিয়া। স্থানীয় হোস্টেল মালিক নাতালিয়া কিরিচেঙ্কো বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে এখানে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। ইউক্রেনের ব্যাংক থেকে অর্থ ফেরত আনা যাচ্ছে। রাশিয়া থেকে দেয়া হয়েছে নতুন ফোন নাম্বার ও মাস্টারকার্ড। আমরা এখন অনলাইন থেকেও বিভিন্ন পণ্য কেনাকাটা করতে পারছি।’
আবার কিছু ক্রিমিয়াবাসীর কাছে রাশিয়ার সঙ্গে এই অন্তর্ভুক্তি একটি ‘বিপর্যয়’। বিশেষ করে ইউরোপের সঙ্গে যাদের জমজমাট ব্যবসা ছিল, তারা এমন ধরনের মন্তব্য করে থাকেন। এমনই একজন হলেন ক্রিমিয়ান ব্যবসায়ী দিমিত্রি সেমিওনোভ। আগে তিনি ইউরোপের বাজারে কাঠের তৈরি সুভিনিয়ার ফ্লাক্স এবং মধু রাখার পট সরবরাহ করতেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ইউক্রেন থেকে বের করে আনা হয়েছে। সেই সময় অনেকে বলেছিল, চিন্তা করো না, ইউরোপের বাজার বন্ধ হলে রাশিয়ায় তোমাদের ভাগ্য খুলে যাবে। কিন্তু বাস্তবে আমরা তেমন অগ্রাধিকার পাচ্ছি না।’ বর্তমানে দিমিত্রি তার পরিবার নিয়ে ইউক্রেনে গিয়ে বসতি স্থাপনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। -বিবিসি

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button