সিলেটে পুলিশী নির্যাতনে যুবকের মৃত্যু, স্ত্রীর মামলা

পুলিশের দাবি করা গণপিটুনির চিত্র মেলেনি সিসি ক্যামেরায়

সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে আখালিয়া নেহারিপাড়ার রায়হান উদ্দিন (৩৪) নামের যুবককে নির্যাতন করে হত্যা করার অভিযোগে থানায় মামলা করেছেন নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি (২২)। রোববার দিবাগত (১২ অক্টোবর) রাত আড়াইটার দিকে সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়।
এদিকে সিলেট নগরের কাষ্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে আহত হয়ে কোতোয়ালি থানার বন্দরবাজার ফাঁড়িতে রায়হান উদ্দিন আহমদ (৩৪) নামের যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। তবে ওই এলাকায় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের স্থাপন করা ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় এমন কোনো গণপিটুনির চিত্র পাওয়া যায়নি।

কাষ্টঘর এলাকা সিলেট সিটি করপোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। এই এলাকার পুরোটাই ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার আওতাভুক্ত। এসব ক্যামেরার মনিটর রয়েছে ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের কার্যালয়ে। রোববার রাতে তাঁর কার্যালয়ে গিয়ে শনিবার রাত ১২টা থেকে রোববার সকাল ৭টা পর্যন্ত কাষ্টঘর এলাকার সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজে কোনো গণপিটুনির দৃশ্য পাওয়া যায়নি। এমন কী এই সময়ে কাষ্টঘর এলাকায় পুলিশের কোনো টহলও দেখা যায়নি।
মামলায় রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি উল্লেখ করেন, প্রতি দিনের মতো গত শনিবার (১০ অক্টোবর) বিকাল ৩টার দিকে তার স্বামী রায়হান আহমদ নিজ কর্মস্থল নগরীর স্টেডিয়াম মার্কেটস্থ ডা. গোলাম কিবরিয়া ও ডা. শান্তা রাণীর চেম্বারে যান। পরদিন (১১ অক্টোবর) ভোর ৪টা ৩৩ মিনিটে ০১৭৮৩৫৬১১১১ মোবাইল নাম্বার থেকে শ্বাশুড়ি (রায়হানের মা সালমা বেগম)-এর ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার (০১৭৮৭৫৭০৯৪৯)-এ কল দিলে সেটি রিসিভ করেন রায়হানের চাচা হাবিবুল্লাহ।
এ সময় রায়হান আর্তনাদ করে বলেন, তিনি বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে আছেন। তাঁকে বাঁচাতে দ্রুত টাকা নিয়ে বন্দর ফাঁড়িতে যেতে বলেন রায়হান। এ কথা শুনে রায়হানের চাচা ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে রায়হান কোথায় জানতে চাইলে দায়ত্বিরত একজন পুলিশ বলেন, সে ঘুমিয়ে গেছে। আর যে পুলিশ রায়হানকে ধরে নিয়ে এসেছেন তিনিও চলে গেছেন। এ সময় হাবিবুল্লাহকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফাঁড়িতে আসার কথা বলেন ওই পুলিশ।
পুলিশের কথামতো হাববিুল্লাহ আবারও সকাল পৌনে ১০ টার দিকে ফাঁড়িতে গেলে দায়িত্বরত পুলিশ জানান, রায়হান অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সঙ্গে সঙ্গে রায়হানের চাচা ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে জরুরি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, রায়হানকে সকাল ৬ টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সকাল ৭ টা ৫০ মিনিটে তিনি মারা যান। এসময় হাবিবুল্লাহ পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনকে খবর দিলে তারা গিয়ে ওসমানীর মর্গে রায়হানের ক্ষত-বিক্ষত লাশ দেখতে পান।
তানিয়া আক্তার তান্নি মামলায় আরও বলেন, ‘আমার স্বামীকে কে বা কারা বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে পুলিশি হেফাজতে রেখে হাত-পায়ে আঘাত করে এবং হাতের নখ উপড়ে ফেলে। পুলিশ ফাঁড়িতে রাতভর নির্যাতনের ফলে আমার স্বামী মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের দাবি জানান রায়হানের স্ত্রী তানিয়া আক্তার তান্নি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button