লকডাউন বিশ্বব্যাপী মানুষের প্রথাগত ক্রয়াভ্যাস পাল্টে দিয়েছে

ই-কমার্সের সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় লকডাউন

মহামারীর প্রভাবে যখন প্রথাগত বৃহৎ খুচরা বিক্রেতারা বিপুল কর্মী ছাঁটাইয়ে পথে হাঁটছে, তখন ঠিক এর বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে বিশ্বের ই-কমার্স খাতে। ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে জারীকৃত লকডাউন কার্যত ই-কর্মার্সের জন্য খুলে দিয়েছে নতুন দিগন্ত। কান্টার কনসাল্টিং গ্রুপের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, লকডাউনের মাত্র তিন মাসে আন্তর্জাতিক ই-কমার্সের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪১ শতাংশ। অথচ এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ২০২০ সালের খাতটির প্রবৃদ্ধির হার ২২ শতাংশ। এ উপাত্তই প্রমাণ করছে, লকডাউন বিশ্বব্যাপী মানুষের প্রথাগত ক্রয়াভ্যাস পাল্টে দিয়েছে।

ব্রিটিশ খুচরা বিক্রেতা কোম্পানি মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার গত ১৮ আগস্ট জানায়, ভাইরাসের সংক্রমণ ও লকডাউনজনিত ক্ষতির কারণে তারা তাদের সাত হাজার কর্মী ছাঁটাই করতে যাচ্ছে। কিন্তু এর কয়েক ঘণ্টা পরই যুক্তরাষ্ট্রে সাড়ে তিন হাজার কর্মীকে কাজে নেয়ার কথা জানায় অনলাইন জায়ান্ট আমাজন। মূলত শুধু মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সারই নয়, যুক্তরাজ্যের আরো বেশকিছু খুচরা বিক্রেতা কোম্পানি লকডাউনজনিত ক্ষতির কারণে কর্মী ছাঁটাই করছে। যেমন আড়াই হাজারের মতো কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে ডিপার্টমেন্ট স্টোর ডেবেনহ্যামস। অথচ ব্রিটেনের বৃহত্তম সুপারমার্কেট চেইন টেসকো জানিয়েছে, অনলাইনে তাদের কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা ১৬ হাজার স্থায়ী চাকরি সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। ফলে ভাইরাস ও লকডাউন সার্বিকভাবে প্রথাগত বিক্রয়কেন্দ্রের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনলেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে অনলাইনভিত্তিক কোম্পানিগুলোর প্রবৃদ্ধিতে।
আলভারেজ অ্যান্ড মার্সাল করপোরেট ট্রান্সফরমেশন সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিতরণ বিশেষজ্ঞ হার্ভ গিল্গ বলেন, এখন এ বিষয়ে আর কোনো সন্দেহ নেই যে বাণিজ্যের ডিজিটাইজেশন খুব দ্রুতগতিতে বাড়ছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে সেই সব কোম্পানি, যারা আগে থেকেই তাদের কার্যক্রমের একটি বড় অংশ অনলাইনে পরিচালনা করছে। অনলাইনভিত্তিক বিক্রি কার্যক্রমে এখন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে আমাজন। কোম্পানটি এরই মধ্যে এ বছরের প্রথমার্ধে নিট মুনাফা দ্বিগুণ করেছে। এছাড়া জার্মানির ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ই-কমার্স কোম্পানি জালান্দোও তাদের কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখেছে। ২০২০ সালের প্রথমার্ধে কোম্পানিটির সক্রিয় ক্রেতা-ভিত্তি ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩ কোটি ৪০ লাখে পৌঁছেছে। এদিকে মার্কিন জায়ান্ট ওয়ালমার্টও অনলাইন বাজারের চাঙ্গা ভাবের সুবিধা গ্রহণে ই-কমার্সের দিকে ঝুঁকছে। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এক্ষেত্রে তাদের বিক্রি প্রত্যাশা ছাড়িয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে ৯৭ শতাংশ।
কান্টার জানিয়েছে, ২০১৯ সালে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, স্পেন ও চীনে ই-কমার্সের গড় বাজার অংশীদারিত্ব ছিল ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। অথচ ২০২০ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এ অংশীদারিত্ব এসে দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৪ শতাংশে। বিশেষ করে চীনে আগে থেকেই ভোগ্যপণ্য ক্রয়ের এক-চতুর্থাংশ অনলাইনে সম্পন্ন হচ্ছিল। ফলে কভিড-১৯ সংক্রমণের আগেই মানুষ যে ই-কমার্সের দিকে ঝুঁকছিল, তা স্পষ্ট। কিন্তু ভাইরাস সংক্রমণ ও লকডাউনের মধ্যে খাতটি আরো শক্তিশালী হতে শুরু করে।
এ বিষয়ে বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের (বিসিজি) জ্যেষ্ঠ সহযোগী পরিচালক স্টেফান চার্ভেরিয়াট বলেন, ই-কমার্সের এই অভূতপূর্ব অগ্রগতির ফলে এখন সব খুচরা বিক্রেতাই অনলাইনের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছে। সত্যি বলতে, এখন আর তাদের পক্ষে অনলাইনের অপরিহার্যতা অস্বীকার করা সম্ভব নয়। বরং এক্ষেত্রে তারা যত শক্তিশালী অবস্থান গড়তে পারবে ততই মঙ্গল। চার্ভেরিয়াটের মতে, ই-কমার্স বর্তমানে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এখন খাতটিতে উল্লেযোগ্য পদক্ষেপ ও বিনিয়োগ প্রয়োজন। কিন্তু এক্ষেত্রে সমস্যা হলো, কোম্পানিগুলোর অর্থভাণ্ডার এখন ফাঁকাই বলা চলে।
এ অবস্থায় ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, কোম্পানিগুলোকে ডিজিটাইজ করতে ভর্তুকি ও সরকারি বিনিয়োগ ব্যাংকের সহায়তা হিসেবে কয়েকশ কোটি ইউরো সরবরাহ করা হবে। আশা করা হচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে আমাজনের মতো কোম্পানিগুলোর সঙ্গে টক্কর দেয়া যাবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button