প্যারোলেও মুক্তি পাবে না ব্রেন্টন ট্যারান্ট

৫১ মুসলিম হত্যাকারী ব্রেন্টন ট্যারান্টের যাবজ্জীবন

নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে এই প্রথম যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ দুটি মসজিদে ব্রেন্টন ট্যারান্ট নামের এক শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তির ভয়াবহ বন্দুক হামলায় নিহত হন ৫১ জন। মসজিদে নামাজ পড়ার সময় মুসল্লিদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালানো ব্রেন্টনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের আদালত। ব্রেন্টন নিউজিল্যান্ডের প্রথম ব্যক্তি, যাকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার সুযোগ না রেখে আজ বৃহস্পতিবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হলো। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

ক্রাইস্টচার্চ হাইকোর্টে ব্রেন্টনের সাজা ঘোষণার চার দিনের শুনানি শুরু হয়েছিল গত ২৪ আগস্ট সোমবার। শুনানির প্রথম দিন গত সোমবার ওই হামলার বিষয়ে নতুন বিবরণ তুলে ধরা হয়। এ সময় আদালতের এক প্রসিকিউটর জানান, মুসল্লিদের হত্যার পর মসজিদগুলো পুড়িয়ে ফেলার ইচ্ছা ছিল বন্দুকধারীর। কারণ, ব্রেন্টন আরো বেশি সংখ্যক মানুষকে হত্যা করতে চেয়েছিল।
সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছিল, ব্রেন্টন স্বীকার করেছে, দুটি নয়, তিনটি মসজিদে সে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল। তার ইচ্ছে ছিল, গুলি করে মানুষ মেরে মসজিদগুলো জ্বালিয়ে দেওয়ার। সে কাজ করতে পারেনি বলে পুলিশের সামনে রীতিমতো আফসোস করেছে ব্রেন্টন ট্যারান্ট। পুলিশকে ব্রেন্টন জানিয়েছে এবং আদালতের কাছেও স্বীকার করেছে, নুর ও লিনউডের পর অ্যাশবার্টন মসজিদে হামলার পরিকল্পনা ছিল তার।
শুনানির সময় এই প্রথমবারের মতো ক্রাইস্টচার্চের হামলায় নিহতদের মধ্যে কয়েকজনের পরিবার এবং বেঁচে যাওয়াদের বন্দুকধারীর মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। আজ বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার দিনও তাঁরা উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার আগে ট্যারান্টের কিছু বলার আছে কিনা জানতে চান আদালত। ট্যারান্ট কোনো কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।
৫১টি হত্যা, ৪০টি হত্যাচেষ্টা এবং সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয় ২৯ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ান ব্রেন্টন হ্যারিসন ট্যারান্ট। এটি ছিল নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে প্রথম সন্ত্রাসবাদের ঘটনা।
২০১৯ সালের হামলার দিন জুমার নামাজের সময় মুসল্লিদের ওপর বন্দুক হামলার ঘটনা সরাসরি অনলাইনে সম্প্রচার করেছিল বন্দুকধারী ট্যারান্ট। মর্মান্তিক ওই হামলায় স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিল পুরো বিশ্ব।
২০১৯ সালের ১৫ মার্চ শুক্রবার আর পাঁচটা জুমার নামাজের দিনের মতোই দিন শুরু হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে। কিন্তু দিনের শেষে মানুষের স্মৃতিতে ঢুকে গিয়েছিল রক্তের ভয়াবহতা আর মৃতদেহ ছড়িয়ে থাকার ছবি।
ওই হামলার বিষয়ে জানা গেছে, হঠাৎ করে এ কাজ করেনি ব্রেন্টন। এক মাস ধরে হামলার পরিকল্পনা করেছিল সে। প্রতিটি মসজিদের ফ্লোর প্ল্যান জোগাড় করে নিখুঁত নকশা তৈরি করেছিল সে। কীভাবে গোটা ঘটনা অনলাইনে দেখানো যাবে, তারও ছক কষেছিল ব্রেন্টন। বাস্তবে তা-ই ঘটেছে। অবাক হয়ে গোটা বিশ্ব দেখেছে, কীভাবে জুমার নামাজ পড়তে আসা সাধারণ মানুষ গুলিতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছেন, লুটিয়ে পড়ছেন মাটিতে। ভিডিওতে দেখা গেছে, প্রথম মসজিদ থেকে দ্বিতীয় মসজিদে পৌঁছে আবারও গুলি চালাচ্ছে সন্ত্রাসবাদী ব্রেন্টন। মেরে ফেলছে কৃষ্ণাঙ্গ ও এশীয়দের। কিন্তু শ্বেতাঙ্গদের দিকে বন্দুক তাক করেও শেষ পর্যন্ত গুলি চালাচ্ছে না ব্রেন্টন। দ্বিতীয় মসজিদের বাইরেই পুলিশ ধরে ফেলে ব্রেন্টনকে। সে কারণেই তৃতীয় মসজিদে পৌঁছতে পারেনি সে।
ওই ঘটনার পর গ্রেপ্তার হওয়ার পরও নিরুত্তাপ ছিল ব্রেন্টন। প্রথমবার শুনানির সময় আদালত চত্বরে তাকে হাসতে দেখা গিয়েছিল, যা দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছিল নিহতদের পরিবার। সাধারণত সর্বাধিক ১৭ বছর পর্যন্ত কারাবাসের সাজা হয় নিউজিল্যান্ডে। ব্রেন্টনের রায়ের ক্ষেত্রে এই প্রথম গতানুগতিকের চেয়েও কড়া সাজা শোনালেন নিউজিল্যান্ডের আদালত। এই প্রথম সারা জীবনের জন্য কাউকে কারাবাসের সাজা শোনানো হলো। কারাবাসকালে প্যারোলেও মুক্তি পাবে না ব্রেন্টন ট্যারান্ট।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button