এবার মোদি উদ্বিগ্ন!

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এখন পর্যন্ত ভারতের জনসংখ্যার ওপর সীমিত প্রভাব ফেলেছে। এই তুলনামূলক কম সংখ্যক আক্রান্ত বা মৃত্যুবরণ করলেও ভারতের মুসলিম সম্প্রদায় করোনাভাইরাস সঙ্কটে অনলাইন ও শারীরিক আক্রমণের শিকার হচ্ছে। আর এসব ঘটনায় ক্ষমতাসীন বিজেপির সদস্যরাও জড়িত রয়েছে।

আক্রমণটি এসেছে নয়া দিল্লির নিজামুদ্দিনে মার্চের শুরুর দিকে একটি সম্মেলনকে কেন্দ্র করে। তখন ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকানোর জন্য বিভিন্ন দেশ সমাবেশের ওপর বিধিনিষেধ জারি করা শুরু করেছিল। সম্মেলনে কয়েকটি দেশের অতিথিসহ প্রায় তিন হাজার লোক ঘিঞ্জি স্থানে সমবেত হওয়ায় করোনাভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণে একটিকে একটি প্রধান উৎস বিবেচনা করা হচ্ছে। ভাইরাসটি সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা থাকা সত্ত্বেও এ ধরনের সভা আয়োজনের যৌক্তিকতা থাকে সামান্য। কিন্তু পুরো ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়কে এজন্য প্রকাশ্যে ও নির্লজ্জভাবে দায়ী করার ফলে মধ্যপ্রাচ্য এবং বিশেষ করে উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে সতর্কভাবে প্রণীত কূটনৈতিক সম্পর্ক এখন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রিন্সেস হেন্দ আল-কাসেমি বিরল এক প্রকাশ্য পদক্ষেপ গ্রহন করে ভারতীয়দের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ইসলামফোবিয়া নিয়ে তার অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। তিনি ৪ মে ট্যুইট করেন, আমি শান্তিপূর্ণ ভারতকে মিস করছি। তিনি এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন আমিরাতে বসবাসকারী এক ভারতীয় নাগরিকের টুইটের প্রতিক্রিয়ায়। হেন্দ আল কাসেমি ওই টুইটকে ‘স্পষ্টভাবে বর্ণবাদী ও বৈষম্যমূলক’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তার ফলোয়ারদের বলেন যে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের শাস্তি হতে পারে জরিমানা এবং এমনকি বহিষ্কার। এসব বিবৃতির পর ইসলামি সহযোগিতা সংস্থাসহ (ওআইসি) মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে ভারতীয় মুসলিমদের প্রতি বিজেপির আচরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এতে মুসলিম সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষা করার জন্য জরুরি ভিত্তিকে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এই শেষ সমালোচনাটি বিশেষভাবে তীব্র।
এসব ঘটনা মোদি সরকারের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের কারণ হবে। তথাকথিত ‘থিঙ্ক ওয়েস্ট’ নীতির আলোকে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক জোরদার করার পাশাপাশি ইরানের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করেছে এবং ইসরাইলের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে। ২০১৫ সালে ৩৪ বছরের মধ্যে মোদি প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমিরাত সফর করেন। এরপর তিনি ২০১৮ ও ২০১৯ সালে আবার সফর করেন। তার শেষ সফরের সময় তিনি দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার স্বীকৃতি হিসেবে আমিরাতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান অর্ডার অব জায়েদে ভূষিত হন। মোদি সৌদি আরব, কাতার, ওমান, বাহরাইন ও ইরানও সফর করেন। এই সময়ে ওইসব দেশ থেকেও ফিরতি সফর হয়।
মোদির আমলে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করাটা কেবল প্রতীকী ও বাগাড়ম্বড়তার মধ্যেই আবদ্ধ ছিল না। বরং বড় বড় চুক্তি ও গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সুবিধাও অর্জিত হয়। সৌদি আরব ও আরব আমিরাত হয় যথাক্রমে ভারতের চতুর্থ ও তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। তারা এই দুটি দেশ ভারতের তেল আমদানির বৃহত্তম উৎসেও পরিণত হয়। গত ৫ বছরে জ্বালানি ও শিল্প খাতে অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য এই দুই দেশ মোট ১৭০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে প্রতিশ্রুতি দেয়। ভারত ও উপসাগরীয় এলাকার মধ্যে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো বিপুলসংখ্যক ভারতীয় নাগরিকের ওই অঞ্চলে বাস করা। সৌদি আরবে প্রায় ২০ লাখ এবং আমিরাতে প্রায় ৩০ লাখ ভারতীয় বাস করে। তারা প্রতি বছর এই দুটি দেশ থেকে যথাক্রমে ১১.২ বিলিয়ন ডলার ও ১৩.৮ বিলিয়ন ডলার পাঠায়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button