বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কি দুই পরাশক্তির ‘বলির পাঁঠা’

নভেল করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের দ্বন্দ্বের ফাঁদে আটকা পড়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ওয়াশিংটন বলছে, কভিড-১৯ ঠেকাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে ডব্লিউএইচও। শুধু তা-ই নয়, সংস্থাটির প্রধান টেড্রোস অ্যাডহ্যানমের পদত্যাগসহ এর আমূল সংস্কার দাবি করেছে। চীনের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে এর অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্যদিকে ডব্লিউএইচওর বিরুদ্ধে বেইজিংয়ের অভিযোগেরও শেষ নেই। চীনা কর্মকর্তাদের দাবি, পশ্চিমা বিশ্বের স্বার্থেই করোনা বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করা হয়েছে।

দুই পরাশক্তির নজিরবিহীন এ দ্বন্দ্বে ‘বলির পাঁঠা’ হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্যের অভিভাবক সংস্থাটি। তবে জাপান বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র অর্থায়ন বন্ধ রাখলেও সংস্থায় তহবিল কমাবে না তারা। নভেল করোনাভাইরাস ঠেকানোর প্রচারে ভূমিকা রাখায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সমর্থন জানিয়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেন, একমাত্র ডব্লিউএইচও আন্তর্জাতিক একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে মহামারীর বিষয়টি তুলে ধরায় ভূমিকা রাখতে পারে। এ সময়ে আমাদের ডব্লিউএইচওকে দৃঢ় সমর্থন দিতে হবে।
গত বছরের ডিসেম্বরে মহামারীর শুরু থেকেই এর মোকাবেলায় নানা স্বাস্থ্যবিধি ও নির্দেশনা জারি এবং সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে ডব্লিউএইচও। বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, কর্মকর্তা ও চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের নিয়ে নিয়মিত জরুরি সভা আয়োজন এবং মহামারী বিষয়ে হুঁশিয়ারি ও সতর্কতা জারি করেছে।
সভায় আলোচনা ও বিতর্কের মাধ্যমে গৃহীত তথ্য-উপাত্ত সদস্য দেশগুলোর কাছে পৌঁছে দিয়েছে। জরুরি বৈঠক ডেকে এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে কভিড-১৯-কে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা দেয়। কিন্তু শুরু থেকে সংস্থার কোনো হুঁশিয়ারিতে কান না দিলেও এখন সংস্থাটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আনছে যুক্তরাষ্ট্র। সর্বশেষ চলতি সপ্তাহে অর্থ দেয়া বন্ধ করে দিলেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ‘আপাতত ওই সংস্থাকে অর্থ দেবে না আমেরিকা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছে এমন অভিযোগও তোলেন তিনি। ডব্লিউএইচওর প্রতি সর্বশেষ আক্রমণ শানানোর ক্ষেত্রে তাইওয়ান ইস্যু সামনে এনেছেন ট্রাম্প।
শুক্রবার এক টুইটে ট্রাম্প বলেন, নভেল করোনাভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হতে পারে, ডিসেম্বরের শেষের দিকে তাইওয়ানের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের পাঠানো ই-মেইলে কেন পাত্তা দেয়নি ডব্লিউএইচও? জাতিসংঘ ১৯৭১ সাল থেকে এক চীন সমর্থন করায় তাইওয়ানের অনুরোধে সাড়া দিতে কূটনীতিক সংকটে ছিল জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ডব্লিউএইচও। অবশ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পূর্ণ সদস্য না হলেও সংস্থাটির বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করে তাইওয়ান।
উহানে ভাইরাস সংক্রমণের শুরুতে তথ্য গোপন করা ও স্বচ্ছতার অভাব সত্ত্বেও চীন ও দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বের নিরন্তর প্রশংসা করার মাধ্যমে ডব্লিউএইচওর প্রধান টেড্রোসের বিরুদ্ধে সমালোচনা বেড়েছে। এছাড়া জানুয়ারির শুরুতে বিতর্কিত একটি টুইট সংস্থাটির সক্ষমতা ও আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে। গত ১৪ জানুয়ারি ওই টুইটে বলা হয়, চীনে প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষে মানুষে ভাইরাসটি সংক্রমণের সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে চীনের পক্ষ হয়ে তথ্য গোপন করেছে ডব্লিউএইচও, ট্রাম্পের এ দাবির পক্ষে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণাদি পাওয়া যায়নি। গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ডব্লিউএইচওর সঙ্গে কাজ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসির এক ডজনেরও বেশি চিকিৎসক।
কভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের শুরুতে বেশকিছু ব্যর্থতা সত্ত্বেও পরবর্তী সময়ে দায়িত্বশীল আচরণ করতে শুরু করে ডব্লিউএইচও। কিন্তু এক্ষেত্রে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র দুই পরাশক্তির দ্বন্দ্ব বাগড়া দেয়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button