‘নতুন বিপদে’ এয়ারলাইন্স ব্যবসা

সম্প্রতি ইউরোপ ভ্রমণ করেছেন এমন বিদেশি নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের দেওয়া নতুন নিষেধাজ্ঞায় বিশ্বব্যাপী এয়ারলাইন্স ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। করোনাভাইরাইসের কারণে এমনিতে চাপে থাকা ইউরোপের এয়ারলাইন্সগুলোই যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এ নিষেধাজ্ঞায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়বে বলেও আশঙ্কা তাদের। যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপের সব দেশের নাগরিক ও দেশগুলো ভ্রমণ করে আসা বিদেশিদের ওপর আজ শুক্রবার মধ্যরাত থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা। গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে চীনের উপরও একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়ায় নিষেধাজ্ঞায় আটলান্টিকের ওপারের মহাদেশটিকেও যুক্ত করল যুক্তরাষ্ট্র।

শিল্পখাত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন এ নিষেধাজ্ঞা তাৎক্ষণিকভাবে ইউরোপের কয়েক ডজন বিমানবন্দরে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার আগে অনেকের শেষ মুহুর্তে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলে অনুমান তাদের। বুধবার ঘোষিত নতুন এ পদক্ষেপের পরও ইউরোপ থেকে যাওয়া বিমানগুলো বিস্তৃত পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা যুক্তরাষ্ট্রের স্বল্প সংখ্যক বিমানবন্দগুলোতে নামতে পারবে; তবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, স্থায়ী বাসিন্দা এবং তাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন ছাড়া অন্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না বলে জানিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় বিমানবন্দরগুলো ও পর্যটন খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলেও বলছেন পর্যবেক্ষকরা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র ‘সংকটকালীন মুহুর্তে’ প্রবেশ করায় ইউরোপের ওপর এ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রে এরই মধ্যে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ২৮১ জনে পৌঁছেছে; মৃত্যু হয়েছে ৩৮ জনের। “চীনের বিরুদ্ধে আগাম পদক্ষেপ নিয়ে আমরা প্রাণ-রক্ষাকারী ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। এখন ইউরোপের বিরুদ্ধেও আমাদের একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা দেরি করতে পারবো না,” জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প এমনটাই বলেছেন। পরে টুইটারে দেওয়া ব্যাখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রেসিডেন্ট জানান, তাদের নতুন এ নিষেধাজ্ঞা কেবল ইউরোপ থেকে আসা মানুষের ওপরই আরোপ করা হয়েছে, পণ্যের ওপর নয়।
ইউরোপে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের এয়ারলাইন্সগুলো ইতালিতে তাদের ফ্লাইটসংখ্যায় কাঁটছাট করেছে; নতুন এ নিষেধাজ্ঞার পর তাদের ফ্রান্স ও জার্মানির ফ্লাইটগুলোর চাহিদাও কমতে থাকবে। তবে নতুন এ নিষেধাজ্ঞা সবচেয়ে বেশি বিপাকে ফেলবে জার্মানির লুফথানসা ও ফ্রান্সের এয়ার ফ্রান্স কেএলএমের মতো প্রভাবশালী এয়ারলাইন্সগুলোকে। ইউরোপের মূল ভূখ- ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার ফ্লাইটের বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে আসা এ দুটো ক্যারিয়ারের কয়েক ডজন উড়োজাহাজকে ‘গ্রাউন্ডেড’ রাখতে হচ্ছে বলেও বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন। “ইউরোপের ফ্লাইটগুলোর ওপর এ নিষেধাজ্ঞা মূলত বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোকে শেষ করে দেবে,” বলেছেন বয়েড গ্রুপ ইন্টারন্যাশনালের এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ মাইক বয়েড। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশ ও তাদের এয়ারলাইন্সগুলো চীনা নাগরিকদের প্রবেশাধিকারে প্রয়োজনীয় বিধিনিষেধ না দেওয়ায় করোনাভাইরাস ইউরোপে বিস্তৃত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে বলেও অনুমান তার।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button