ট্রাম্প প্রশাসনে পদত্যাগের হিড়িক

Trumpযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনে পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় সময় শুক্রবার আকস্মিকভাবেই পদত্যাগ করেছেন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র (প্রেস সেক্রেটারি) শন স্পাইসার। জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর ছয় মাস পেরুতে না পেরুতেই পদত্যাগী বা বরখাস্তকৃত ‘হাই-প্রোফাইলের’ সরকারি কর্মকর্তাদের রদবদলে বারবারই কেঁপে উঠেছে ট্রাম্প প্রশাসন। তারই সর্বশেষ সংযোজন হলেন স্পাইসার। হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ পরিচালক হিসেবে অ্যান্থনি স্কারামুচির নাম ঘোষণার পর স্পাইসার পদত্যাগ করেন। তার এই পদত্যাগে সহকর্মীরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ এবং ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার শিবিরের সঙ্গে রাশিয়ার যোগসাজশের অভিযোগ নিয়ে হোয়াইট হাউস এখন তদন্তের ?মুখে। আর ঠিক সেই সময় প্রেসিডেন্টের যোগাযোগ শিবিরে এই রদবদল ঘটল। রুশ-মার্কিন সম্পর্ক বিষয়ক একের পর এক সৃষ্ট প্রশ্নে হোয়াইট হাউসের প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি স্পাইসারই তদারক করতেন। সংবাদসূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, সিএনএন, রয়টার্স
স্কারামুচির নিয়োগকে বড় ধরনের ভুল বলে অভিহিত করেছেন স্পাইসার। ট্রাম্প স্পাইসারকে দায়িত্ব চালিয়ে নেয়ার জন্য বললেও তিনি তাতে রাজি হননি। গত ৩০ মে মাইক দুবকে যোগাযোগ পরিচালকের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর থেকে পদটি শূন্য রয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, স্পাইসারের পদত্যাগের পর হোয়াইট হাউসের বিভিন্ন পদে আরও পরিবর্তন আসতে পারে। বিশেষ করে, নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের ছেলে ও জামাতার সঙ্গে রুশ আইনজীবীর বৈঠক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতি টালমাটাল। এরই মধ্যে স্পাইসারের পদত্যাগ হোয়াইট হাউসের অস্থিতিশীল অবস্থারই ইঙ্গিত বহন করছে।
হোয়াইট হাউসে মেয়াদের বেশিরভাগ সময় প্রেস সেক্রেটারি এবং যোগাযোগ পরিচালক_ দুই দায়িত্বই পালন করেছেন স্পাইসার। তার পদত্যাগের ‘বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল’ এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, ট্রাম্প তার দীর্ঘদিনের সমর্থক, ওয়াল স্ট্রিটের অর্থ যোগানদাতা অ্যান্থনি স্কারামুচিকে নতুন যোগাযোগ পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়ায় নাখোশ হয়েছেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি স্পাইসার। নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, ৪৫ বছর বয়সী স্পাইসার শীর্ষ ওই পদটিতে স্কারামুচিকে নিয়োগের ঘোরবিরোধী ছিলেন। স্পাইসারের ঘনিষ্ঠ এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই স্কারামুচির নিয়োগ নিয়ে কানাঘুষা চলছিল। কিন্তু স্পাইসারসহ হোয়াইট হাউসের আরও দুইজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তখনও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কিছুই জানতে পারেননি।
গত জানুয়ারি মাসে দায়িত্ব নেয়ার পর নানা কারণেই আলোচনায় ছিলেন স্পাইসার। বিশেষ করে, সংবাদ সম্মেলনগুলোতে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তার বাক্যবাণ ও কটাক্ষ নিয়ে সব সময়ই সমালোচনা হয়েছে। তবে তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে তাকে তার এতদিনের কাজের জন্য ধন্যবাদ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
এর আগে, ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী দলের মুখপাত্র মার্ক কোরেলো স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করেন। রাশিয়াবিষয়ক তদন্তে ট্রাম্পের আইনজীবী দলের অবস্থান নিয়ে মতবিরোধের জেরে কোরেলো পদত্যাগ করেছেন বলে মার্কিন গণমাধ্যমে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। গত বছর অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে কংগ্রেস ও বিচার বিভাগের চলমান তদন্তে ট্রাম্পের আইনজীবী মার্ক ক্যাসোউইৎজের মুখপাত্র হিসেবে আগে দায়িত্ব পালন করেছেন কোরেলো।
ট্রাম্পের আইনজীবী দলের কৌশল এবং বিভিন্ন পদে থাকা আইনজীবীদের অবস্থান নিয়ে কোরেলোর মধ্যে আগে থেকেই হতাশা বাড়ছিল। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের ‘স্পেশাল কাউন্সেল’ রবার্ট মুয়েলারের ঘনিষ্ঠ বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। রাশিয়াবিষয়ক তদন্ত দলের শীর্ষ কর্মকর্তা মুয়েলার সাম্প্রতিক সময়ে কোরেলোর প্রশংসাও করেছেন।
এর আগে, ১ জুন ট্রাম্পের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন এলোন মাস্ক। জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ট্রাম্পের প্যারিস চুক্তিবিরোধী অবস্থানের কারণ দেখিয়ে তিনি পদত্যাগ করেন। গত ৯ মে এফবিআই প্রধান পদ থেকে বরখাস্ত হন জেমস কোমি। একটি চিরকুটে তার বরখাস্তের খবর পাঠান ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প কোমির কাছে বারবার ‘আনুগত্য’ চেয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন। কোমি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ সংশ্লিষ্টতার তদন্তের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।
গত ৩০ মার্চ হোয়াইট হাউসের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ পদ ছেড়ে দেন কেটি ওয়ালশ। ১১ মার্চ বরখাস্ত হন ‘সাউদার্ন ডিসট্রিক্স অব ম্যানহাটনের’ অ্যাটর্নি জেনারেল প্রিট ভারারা। তিনি ওবামা আমলে নিয়োগ পেলেও ট্রাম্পের যুগে পদত্যাগ করতে অনীহা প্রকাশ করেছিলেন। ফলে ট্রাম্প তাকে চাকরিচ্যুত করেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি সিআইএ বিশ্লেষকের পদত্যাগ করেন এডওয়ার্ড প্রাইস। ওয়াশিংটন পোস্টে এক সাক্ষাৎকারে প্রাইস জানান, ট্রাম্পের জন্যই তিনি পদত্যাগ করেছেন। একই দিনে পদত্যাগ করেন ট্রাম্পের নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন। রুশ সংশ্লিষ্টতার কারণে তাকে পদত্যাগ করানোর জন্য চাপ দেয়া হয়েছিল।
গত ৩০ জানুয়ারি বরখাস্ত হন যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল স্যালি ইয়েটস। তিনি মার্কিন বিচার বিভাগকে ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পক্ষাবলম্বন না করতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু সেই অনুরোধের ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই তিনি পদচ্যুত হন। উল্লেখ্য, ট্রাম্পের ওই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার নির্বাহী আদেশে সাতটি মুসলমান অধ্যুষিত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ ঠেকানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। তবে আদালতের বিরোধিতায় তা ব্যর্থ হয়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button