বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ

শীতে করোনার দ্বিতীয় প্রবাহ সামলাতে অপ্রস্তুত যুক্তরাজ্য

একগুচ্ছ হুমকি নিয়ে যুক্তরাজ্যের দিকে ধেয়ে আসছে শীত। দেশটিতে করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রকোপ ধীরে ধীরে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শীতে ভাইরাসটির দ্বিতীয় প্রবাহ বইবে যুক্তরাজ্যে। এখন অবধি সর্বজনীন ব্যবহারের জন্য কার্যকরী কোনো টিকা আবিষ্কার হয়নি ভাইরাসটির। বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদদের ভাষ্য, পরীক্ষা, ট্রেসিং ও সরকারি বার্তা যুক্তরাজ্যে করোনার পুনরুত্থান মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত নয়। এর পাশাপাশি শীতে ফ্লু’র হুমকিতো আছেই।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির মেডিসিন বিষয়ক রেজিয়াস অধ্যাপক স্যার জন বেল সতর্ক করেছেন, খুবই কঠিন শীতের মুখোমুখি হতে চলেছে বৃটেন। রয়েল সোসাইটি অব মেডিসিনের একটি ভার্চুয়াল সেমিনারে তিনি বলেন, আমার ধারণা যে, আমরা করোনার দ্বিতীয় প্রবাহের শিকার হবো। সে প্রবাহ ঠেকাতে যথাসময়ে টিকা পাওয়া যাবে না।
তিনি আরো বলেন, নতুন ‘হোম-টেস্টিং’ বা বাড়িতে বসে পরীক্ষার ব্যবস্থাও যথাসময়ে প্রস্তুত থাকবে কিনা তা নিয়েও আমার সন্দেহ রয়েহে।

অধ্যাপক বেল বলেন, তিনি ধারণা করছেন যে, করোনার টিকা আগামী বছরের শুরুর দিকে পাওয়া যেতে পারে। তবে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন, ওই টিকা মানুষজনকে করোনার বিরুদ্ধে পুরোপুরি প্রতিরোধক্ষমতা দেবে না, হয়তো রোগটির প্রভাব কমিয়ে দিতে পারে। তিনি বলেন, টিকাটি একটি নির্দিষ্ট জনসংখ্যার ওপর প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে এটি করোনা সমস্যার সমাধান করবে না।
অধ্যাপক বেলের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন রোগ নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ ড. ভারত পাঙ্খানিয়া। তিনি স্কাই নিউজকে বলেন, তার বিশ্বাস, জনগণকে করোনার হুমকি নিয়ে আত্মতৃপ্তির বোধে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, শীতের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। সেপ্টেম্বর প্রায় চলে এসেছে, কিন্তু এখনো স্থানীয় পর্যায়ে পর্যাপ্ত পরীক্ষা ও ট্রেসিং নেই।
ড. পাঙ্খানিয়া আরো বলেন, সরকার ‘ইট আউট টু হেল্প আউট’ প্রকল্পের মতো জিনিস করছে। এগুলো সবই ঠিক আছে কিন্তু শরৎ ও শীতে সংক্রমণ বৃদ্ধি নিয়ে সরকারি বার্তাগুলো আরো জোরদার হওয়া উচিৎ। মানুষজনকে ফ্লু, মেনিনোকোকাল রোগের টিকা নিতে, সামাজিক দূরত্ব বিষয়ক নিয়ম গুরুত্বের সঙ্গে মেনে চলতে আরো জোরালোভাবে প্রচারণা চালানো উচিৎ।
বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও তার প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা প্যাট্রিক ভ্যালান্স স্বীকার করেছেন যে, শীতে দেশটিতে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পারে। করোনার পুনরুত্থান মোকাবিলায় জনসন ১লা আগস্ট থেকে বিধিনিষেধ শিথিলের পরিকল্পনা বাতিল করে দেন। শীতে সংক্রমণের সময় হাসপাতালের দুর্ঘটনা ও জরুরি বিভাগগুলোর জন্য ৩০ কোটি পাউন্ড দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। একইসঙ্গে তার সরকার ইংল্যান্ডের ৩ কোটি মানুষের জন ফ্লু’র টিকাদান কর্মসূচী চালু করেছে। সরকার জানায়, এ কর্মসূচী করোনা পরীক্ষা জোরদার করবে।
জনসন সরকার জাতীয় পর্যায়ে তাদের পরীক্ষা ও ট্রেসিং পদ্ধতি নতুন করে সাজানোর ঘোষণা দিয়েছে। নতুন ঘোষণা অনুসারে, দেশজুড়ে নিয়োজিত ৬ হাজার ট্রেসার সরিয়ে ফেলা হবে। বাকিদের স্থানীয় পর্যায়ের ট্রেসিং দলগুলোয় নিয়োগ দেওয়া হবে। ড. পাঙ্খানিয়া বলেন, এসব পদক্ষেপ আরো আগেই নেওয়া উচিৎ ছিল। তিনি জানান, শীতে কী আসতে পারে তা নিয়ে তিনি ভীত।
গত মাসে বৃটিশ সরকারের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা অনুমোদিত ও ৩৭ জন বিশেষজ্ঞ সমর্থিত, একাডেমি অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী বছর যুক্তরাজ্যে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া করোনা রোগীর সংখ্যা সর্বোচ্চ হতে পারে। প্রতিবেদনটিতে সতর্ক করা হয়, সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে মারা যেতে পারেন আরো ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ।
ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশের কয়েক সপ্তাহ পর প্রকাশিত অপর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে করোনার দ্বিতীয় প্রবাহ প্রাথমিক মহামারির তুলনায় দুই গুণ বেশি বড় হতে পারে। প্রতিবেদনটিতে সতর্ক করা হয়, করোনা পরীক্ষা ও ট্রেসিং কর্মসূচী জোরদার না করে সেপ্টেম্বরে স্কুল খোলা হলে এমনটি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
চিকিৎসকরা সতর্ক করেছেন যে, দ্বিতীয় প্রবাহ সামলাতে প্রাথমিক মহামারির তুলনায় ভিন্ন ঘরানার প্রস্তুতি প্রয়োজন। কেননা , শীতে করোনার পাশাপাশি ফ্লু আক্রান্তদের সংখ্যাও বাড়বে। উভয় রোগীদের উপসর্গ প্রায় একরকম থাকায় তাদের আলাদা চিকিৎসা নিশ্চিত কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
উল্লেখ্য, এখন অবধি যুক্তরাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ। মারা গেছেন ৪১ হাজারের বেশি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button