যারা ইমাম আবু হানিফার সমালোচনা করে তারা অজ্ঞ

মাজহাব নিয়ে ধর্মীয় বিরোধ সৃষ্টির অবকাশ নেই

Abdul Muntaqeemসিলেটে জামেয়াতুল খাইর আল ইসলামিয়ার উদ্যোগে আয়োজিত ‘ফিকহী ইসলামীর গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ র্শীষক সেমিনারে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদরা বলেছেন, মাজহাব বিরুধীতার নামে আজ ইসলাম বিরোধীতার শুরু হয়েছে। ইসলামের বিধি-বিধান মেনে চলতে হলে মাজহাব মানতেই হবে। কারন মাযহাব না মেনে কেউ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না, সমাজে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবে। বক্তারা ইমাম আবু হানিফা (রহ)কে কুরআন হাদিসের বিভিন্ন বিষয়ের ব্যাখ্যাকার উল্লেখ করে বলেন, মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টির মাধ্যমে দাঙ্গা হাঙ্গামা সৃষ্টির জন্যই ইহুদিরা আরেকটি ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। বাংলাদেশের মুসলমানদের মধ্যে রাজনৈতিক ভাবে দাঙ্গা-বিভেদ শুরু করে দিয়েছে, এখন মাজহাব নিয়ে ধর্মীয় বিরোধ সৃষ্টি করে পরস্পরের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টিই তাদের মুল উদ্দেশ্য।
মঙ্গলবার সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত সেমিনারে আলোচকগন এসব কথা বলেন।
দুই পর্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন, যথাক্রমে শায়খুল হাদীস মুকাদ্দাস আলী ও মাওলানা আব্দুল মুছাব্বির।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন, জামেয়ার পরিচালক মুফতি আব্দুল মুনতাকিম। মুলপ্রবন্ধ পাঠ করেন, মুফতি মুহাম্মদ জমীর উদ্দীন।
আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, দারুল উলুম মিরপুর ঢাকার পরিচালক মুফতি দেলাওয়ার হোসাইন, ইসলামী রিসার্চ সেন্টার ঢাকার মহাপরিচালক মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, জামেয়া কাসিমুল উলুম দরগাহে হযরত শাহজালাল এর পরিচালক মুফতি আবুল কালাম জাকারিয়া, শায়খুল হাদীস নুরুল ইসলাম খান, বিশিষ্ট সাংবাদিক দৈনিক ইনকিলাবের সহ সম্পাদক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী, মাওলানা প্রফেসর আহমদুল হক, মাওলানা শায়খ জিয়াউদ্দীন, মাওলানা বদর ইবনে ইসহাক, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবুল হাসান, মুফতি আব্দুল্লাহ,মাওলানা তাফহিমুল হক, মাওলানা আব্দুস সবুর, সিলেট ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা হাবিব আহমদ শিহাব।
জামেয়ার সহকারী পরিচালক মাওলানা শাহ নজরুল ইসলাম ও মাওলানা আব্দুল মুক্তাদিরের যৌথপরিচালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে সঙ্গীত পরিবেশন করেন, হাফিজ আব্দুল করিম দিলদার ও আমান উল্লাহ আমান।
মূল প্রবন্ধে মুফতি জমীর উদ্দীন বলেন, ফিক্বহে ইসলামী হল মুসলিম উম্মার অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই মাজহাব অনুসরণ করা ওয়াজিব। লা-মাজহাবীরা সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টি করছে।
মুফতি আবুল কালাম জাকারিয়া বলেন, শুধু হাদীসের দোহাই দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। সব হাদীস আমল যোগ্য নয়, প্রকৃত পক্ষে হাদীস যদি সুন্নাহ মোতাবেক হয়, তা হলেই তা গ্রহণীয়, অন্যথায় বর্জনীয়। আর রাসুল (সা)এর নিয়মিত আমলকে সুন্নাহ বলে।
তিনি বলেন, আমাদের পুর্বেকার মুজতাহিদগণ উদ্ভাবিত প্রায় সকল সমস্যার কোরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক মৌলিক সমাধান দিয়ে গেছেন। বর্তমান-ভবিষ্যতে আমাদেরকেও তাদের পথই অনুসরন করতে হবে।
শায়খুল হাদীস নুরুল ইসলাম খান বলেন, প্রতিটি বিষয়েই একটি আদর্শ থাকে, তেমনি ইসলামী বিধান অনুসরনের জন্যও মুসলমানদেরকে মাযহাবকে আদর্শ হিসেবেই অনুসরণ আবশ্যক। সকল ফেকাহবীদদের একই মতামত যে, ফিকহী শাস্ত্রে ইমাম আবু হানিফা (রহ) এর বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, আমরা এই কারণে ভাগ্যবান যে, ইমাম আবু হানিফার মতো উচ্চ পর্যায়ের মুজতাহিদের অনুসারী। একজন মুজতাহিদের যে কয়টি গুণাগুণ থাকা প্রয়োজন তার সবকটিই আবু হানিফা (র)র মাঝে বিদ্যমান ছিলো।
তিনি মাজহাব অমান্যকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সব হাদীস আমলযোগ্য নয়, যারা ইমামে আজম আবু হানিফার সমালোচনা করেন তারা কোরআন-সুন্নাহর জ্ঞান সম্পর্কে সম্পূর্ন অজ্ঞ ও অন্ধ। মুফতি আবুল হাসান বলেন, তথাকথিত আহলে হাদীসের অণুসারীরা ফিতনাবাজ।
মুফতি মিজানুর রহমান সাইদ বলেন, ফিকহে ইসলামী মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য। ফিকহী ইসলামীকে অস্বীকার করা মানে কোরান-সুন্নাহকে অস্বীকার করার নামান্তর।
মুফতি দেলওয়ার বলেন, যুগে যুগে ইসলামের বিরোধীতা হয়েছে, বর্তমানেও হচ্ছে, ভবিষ্যতেও এক শ্রেণির লোকের দ্বারা তা হবে। তবে হক্কানী উলামায়ে কেরামদের, যুগের এসব ফেতনার মোকাবেলায় বুদ্ধি বৃত্তিক ভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী বলেন, আমাদের মাজহাবের ইমাম আবু হানিফা (র) সর্বযুগে সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। সৌদি আরবে রাষ্ট্রিয়ভাবে অন্য মাজহাবের অনুসারী হলেও তারা বিভিন্ন জটিল সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে হানাফি মাজহাবের মতামত গ্রহনের রীতি বিদ্যমান এবং অনুসরণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি মাজহাবের বিরুদ্ধে যারা কথা বলেন, তারা অনেক সময় নিজেদের আহলে হাদীস বলে দাবী করে অথচ তাদের অনেকেই হাদীস বা সুন্নাহ শব্দটি আরবীতে লিখতেও অক্ষম। অজ্ঞ, মুর্খ লোকদের মুখে ইমামে আজম ও মাজহাবের বিরোধীতা হাস্যকর বলে তিনি মন্তব্য করেন।
হযরত আবু হানিফা (র) কে ইসলামের ব্যাখ্যাকার উল্লেখ করে মাওলানা নদভী বলেন, মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টির জন্যই মাজহাব নিয়ে ইহুদিদের আরেকটি ষড়যন্ত্র। বাংলাদেশের মুসলমানদের মধ্যে রাজনৈতিক ভাবে দাঙ্গা-বিভেদ শুরু করেছে। কতিপয় লোক মাজহাব বিরুধীতার নামে প্রকৃতপক্ষে ইসলাম বিরোধীতা শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, ইসলামের নিয়ম মেনে চলতে হলে মাজহাব মানতেই হবে। ইসলাম কখনো চরম পন্থাকে সমর্থন করেনা।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button