অস্ত্র প্রতিযোগিতার আশঙ্কা

রুশ-যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক চুক্তি বাতিল

স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে স্বাক্ষরিত রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে গেলো যুক্তরাষ্ট্র। দুই পরাশক্তির পারমাণবিক চুক্তিটি ভেস্তে যাওয়ায় নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ও সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভের শাসনামলে দ্য ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস ট্রিটি (আইএনএফ) নামে এই রুশ-যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তির আওতায় ৫০০ থেকে ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন নিষিদ্ধ হয়েছিল।

২০১৯ সালের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটো রাশিয়ার বিরুদ্ধে এই চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে। তাদের দাবি, মস্কো নতুন ধরনের ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে। তবে ক্রেমলিন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, তাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে রাশিয়া এসএসসি-৮ নামের পরিচিত ৯এম৭২৯ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে। এই অভিযোগ ন্যাটোর কাছে তুলে ধরলে তারাও যুক্তরাষ্ট্র দাবির পক্ষে অবস্থান নেয়।

শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, এই চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার জন্য রাশিয়া এককভাবে দায়ী। ন্যাটো মিত্রদের পূর্ণ সমর্থনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত হয়েছে যে চুক্তির শর্ত ভঙ্গের জন্য রাশিয়া দায়ী। এর ফলে এই চুক্তির শর্ত মানতে যুক্তরাষ্ট্রের আর কোনও দায়বদ্ধতা নেই। রুশ বার্তা সংস্থা রিয়া নভোস্তি জানিয়েছে, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছেন চুক্তিটি ‘আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত’।

এর আগে চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চুক্তিটি পুনরায় বাস্তবায়নযোগ্য করে তোলার জন্য রাশিয়াকে ২ আগস্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। ট্রাম্পের ওই আলটিমেটামের পরই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চুক্তির প্রতি দায়বদ্ধতার বিষয়টি বাতিল করেন।

চুক্তিটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল হওয়ার পর জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, পারমাণবিক যুদ্ধের গতিরোধের একটি অমূল্য প্রতিবন্ধকতা হারিয়ে গেলো। এখন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে এই যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়বে, কমবে না। আন্তর্জাতিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন একটি সমঝোতার জন্য সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মহাসচিব।

বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, ঐতিহাসিক এই চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার ফলে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের মধ্যে নতুন করে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে। রুশ সামরিক বিশ্লেষক পাভেল ফেলজেনহর বলেন, এখন চুক্তির প্রতি দায়বদ্ধতা নেই। আমরা নতুন নতুন অস্ত্র উৎপাদন দেখতে পাবো। রাশিয়া তো ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে।

গত মাসে ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল জেন্স স্টোলেনবার্গ বলেছিলেন, রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তিটি লঙ্ঘন করেছে। যা পারমাণবিক বোমা বহনে সক্ষম এবং সহজে পরিবহনযোগ্য। এছাড়া শনাক্ত করা কঠিন এবং মিনিটের মধ্যেই ইউরোপীয় শহরে পৌঁছাতে পারবে।

তবে ইউরোপে ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের আপাতত কোনও পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন ন্যাটো প্রধান। যদিও সামরিক জোটটি প্রচলিত আকাশ ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা মোতায়েন করেছে এবং যেকোনও ধরনের পদক্ষেপ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে মহড়া দিয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button