স্পেনে ইউরোপপন্থি দলের জয়, ইউরোপে স্বস্তি

ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনের ঠিক আগে স্পেনে সমাজতন্ত্রী দল জয়লাভ করেছে৷ তবে সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে তাদের জোট সরকার গঠনের উদ্যোগ নিতে হবে৷ চরম দক্ষিণপন্থি দলের উত্থান সীমিত থেকেছে৷ সাম্প্রতিককালে ইউরোপের কোনো দেশে সাধারণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির পাশাপাশি অন্য একটি বিষয় বাকি ইউরোপের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পায়৷ ইউরোপপন্থি না, অর্থাৎ ইউরোপবিরোধী কোনো শক্তি ক্ষমতায় আসছে কিনা, এই মৌলিক প্রশ্ন সবাইকে ভাবায়৷ বিশেষ করে ব্রেক্সিটের চূড়ান্ত পর্যায়ে ও আসন্ন ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনের ঠিক আগে স্পেনের সাধারণ নির্বাচন তাই যেন এক প্রতীকী বার্তা বহন করছে৷ মাত্র ৪ বছরের মধ্যে তৃতীয় সাধারণ নির্বাচন সত্ত্বেও সে দেশের ভোটাররাও রবিবার বিপুল সংখ্যায় তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন৷

স্পেনের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেস তার সমাজতান্ত্রিক দলকে সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন বটে, কিন্তু সরকার গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেননি৷ ইউরোপপন্থি এই নেতার সামনে এবার বড় চ্যালেঞ্জ ছিল চরম দক্ষিণপন্থি ও ইউরোপবিরোধী ভক্স দলের উত্থান৷ নতুন এই দল প্রায় ১০ শতাংশ ভোট পেলেও সরকার গড়ার ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা পালন করতে পারবে না বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ উল্লেখ্য, গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে স্বৈরাচারী শাসক ফ্রাংকোর পতনের পর স্পেনে এই প্রথম কোনো চরম দক্ষিণপন্থি দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে৷

প্রধানমন্ত্রী সানচেস ইউরোপে সামাজিক গণতন্ত্রী শক্তির জন্যও কিছুটা আশার আলো বয়ে আনতে পেরেছেন৷ প্রায় গোটা মহাদেশে কোণঠাসা হয়ে পড়ার পর সম্প্রতি ফিনল্যান্ড ও এবার স্পেনে তারা সরকার গড়ার উদ্যোগ নিতে পারছে৷ নির্বাচনের ফলাফল স্পষ্ট হয়ে যাবার পর সানচেস মাদ্রিদে দলীয় কার্যালয়ে বলেন, বর্তমানেও সামাজিক গণতন্ত্রের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে এবং স্পেন তার দৃষ্টান্ত৷ তিনি ইউরোপকে দুর্বল না করে এক ইউরোপপন্থি সরকার গঠনের অঙ্গীকার করেন৷

চরম বামপন্থি ‘পোদেমোস’ বা ‘আমরা পারি’ দল জোট সরকার গড়ার লক্ষ্যে সমাজতান্ত্রিক দলের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে, যদিও এই দুই হাত মেলালেও প্রায় ১১টি আসনের অভাবে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না৷ কাটালুনিয়া রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদী দল মাদ্রিদে কোনো জোট সরকারের শরিক হতে আগ্রহী কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ মধ্যপন্থি ‘সিউদাদানোস’ বা নাগরিক দলও এমন জোট সরকারের তৃতীয় শরিক হতে পারে৷ মে মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার পর সরকার গঠনের আনুষ্ঠানিক প্রচেষ্টা শুরু হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷

দেশ হিসেবে স্পেন সাম্প্রতিককালে যথেষ্ট সাহসী সংস্কারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কাঠামো জোরালো করতে পেরেছে৷ ফলে এবারের নির্বাচনে অর্থনীতি বিষয় হিসেবে তেমন গুরুত্ব পায়নি৷ নির্বাচনি প্রচার জুড়ে ছিল অভিবাসন, ইউরোপ সংক্রান্ত নীতি ও কাটালুনিয়া রাজ্যের স্বাধীনতার প্রচেষ্টার কারণে জাতীয় ঐক্যের মতো বিষয়৷ দু’টি কাটালান বিচ্ছিন্নতাবাদী দল এবারের নির্বাচনে আরো ভালো ফল করায় নতুন সরকারকে এই সংকটের সমাধানসূত্রের লক্ষ্যে বাড়তি উদ্যোগ নিতে হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button