নির্বাচনের আগেই দুজন বা তিনজনের ফাঁসি কার্যকর করা হবে : ইকোনমিস্ট

জাতীয় নির্বাচনের আগেই যুদ্ধাপরাধের দায়ে দু’জন বা তিনজনের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে। এছাড়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিহিংসা সহিংসতা বাড়বে। বুধাবার লন্ডনের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন ইকোনমিস্ট ‘বাংলাদেশ’স ওয়ার ক্রাইমস ট্রায়ালস : ফাইনাল সেনটেন্স’ শীর্ষক নিবন্ধে এসব কথা লিখেছে।
নিবন্ধে বলা হয়, ‘মনে হচ্ছে কাদের মোল্লার জন্য জেল নয়, ফাঁসিকাষ্ঠই অপেক্ষা করছে। ১৭ সেপ্টেম্বর তার সাজা পুনর্বিবেচনা করে সুপ্রিমকোর্ট ত্রুটিপূর্ণ কিন্তু জনপ্রিয় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালকে কঠোর শিক্ষা দিয়েছে। যখন যুদ্ধাপরাধের অপরাধ ও সাজার ব্যাপারে কঠোরতার প্রসঙ্গটি চলে আসে, তখন সুপ্রিমকোর্ট আর কোনো কিছুকেই অস্বীকার করবে না।’
নিবন্ধে আরও বলা হয়, আবদুল কাদের মোল্লার অপরাধের প্রেক্ষিতে তার জেল না হয়ে ফাঁসি হবে সব সময়ই এমনটা মনে করা হয়েছিল। ১৭ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট সেই কাজটিই করেছে। কাদের মোল্লার শাস্তি পর্যালোচনা করতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট কঠোর এক শিক্ষা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিটি)-কে। এই আদালত ত্রুটিপূর্ণ।
নিবন্ধে বলা হয়, কাদের মোল্লাকে গত ৫ ফেব্র“য়ারি যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়ার পর তার মৃত্যুদন্ডের জন্য আন্দোলন শুরু হয়। এরপর তার বিপরীতে উত্থান ঘটে হেফাজতে ইসলামের। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ৫০ জনের মতো হেফাজতকর্মী নিহত হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের জনসমর্থনে ধস নামে।
নিবন্ধে বলা হয়, কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যে তিনটি অভিযোগ আনা হয়, তা ছিল জনশ্র“তি বা গুজবনির্ভর। যে মামলায় তাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে, তার সাক্ষী মাত্র একজন। তিনি আবার ঘটনার সময় মাত্র ১৩ বছর বয়সী ছিলেন।
নিবন্ধে বলা হয়, পূর্ণাঙ্গ রায়ের আগে কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়া যাবে না। তিনি প্রেসিডেন্টের অনুকম্পাও চাইতে পারেন। এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই মনে হচ্ছে আগামী নির্বাচনের আগে ২-৩ জনের বেশি ফাঁসির রায় কার্যকর করা যাবে না।
নিবন্ধে বলা হয়, কাদের মোল্লার পরই সম্ভবত তার ভাগ্য বরণ করতে যাচ্ছেন জনপ্রিয় ইসলাম প্রচারক আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। গত ২৮ ফেব্র“য়ারি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে ফাঁসি দেয়ার পর আধুনিক বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতার সৃষ্টি হয়।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষকরা বলছেন, (নির্বাচনের আগেই) আরও দুজনের মৃত্যুদন্ডের আয়োজন হতে পারে। এদের একজন জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম এবং অন্যজন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী।
নিবন্ধে বলা হয়, আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। আগামী নির্বাচনে জনমত জরিপে এগিয়ে রয়েছে বিএনপি। তাছাড়া বাংলাদেশে কোনো দলই পরপর দুবার ক্ষমতায় আসেনি। তবে বিএনপি ক্ষমতায় এলেও বিচার বন্ধ করা কঠিন হবে। গত এপ্রিলে এসি নেলসন পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের দুই-তৃতীয়াংশ লোক যুদ্ধাপরাধের বিচারকে অস্বচ্ছ বা খুবই অস্বচ্ছ বলে মন্তব্য করেছেন। তবে বিচার অব্যাহত রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন ৮৬ শতাংশ ভোটার।
নিবন্ধে বলা হয়, বিএনপি বলছে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। তবে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয়ই আগ্রহী। ফলে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা কম। সেনাবাহিনীও ক্ষমতা দখলে আগ্রহী নয়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button