ফের সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

অনূর্ধ-১৫ সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। শনিবার নেপালে অনুষ্ঠিত ফাইনালে পাকিস্তানকে টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশী বালকরা। আক্রমণ পাল্টা আক্রমণের ফাইনালে নির্ধারিত সময়ে খেলা ১-১ গোলে ড্র ছিলো। অতিরিক্ত সময়ে কোন গোল না হওয়ায় খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। টাইব্রেকারে বাংলাদেশের গোলরক্ষক মেহেদী হাসান পাকিস্তানি ফুটবলারদের ৩টি শট ঠেকিয়ে দেন।

নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হতে তখনও ইনজুরি টাইমটুকু বাকী। খেলা গড়াচ্ছে টাইব্রেকারে- এটা অনুমান করেই ৯০তম মিনিটে গোলরক্ষক মিতুল মারমাকে তুলে দ্বিতীয় গোলরক্ষক মেহেদী হাসানকে মাঠে নামান কোচ পারভেজ বাবু। সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে টাইব্রেকারে দুটি শট ঠেকিয়ে বাংলাদেশকে ফাইনালে তুলেছিলেন এই মেহেদী।

শনিবার পাকিস্তানের বিপক্ষে ফাইনালেও কোচের আস্থার প্রতিদান এই যশোরের বেনাপোলের বালকের। এবার দুটি নয় পরম দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়ে ঠেকালেন পাকিস্তানের তিনটি শট। বিপক্ষ দলের পঞ্চম শট নিতে আসা মুদাসসর নজরের শটটি ডান দিকে ঝাপিয়ে পড়ে যেভাবে ঠেকালেন তাতে বলা যায় স্রেফ তার একক কৃতিত্বে ফের সাফ শিরোপা পুনরুদ্ধার করল বাংলাদেশ। নেপালের কাঠমান্ডুর আনফা কমপ্লেক্সে পাকিস্তানকে টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে হারিয়ে আবার সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হলো লাল সবুজরা। নব্বই মিনিটের খেলা ১-১ এ শেষ হওয়ার পর পেনাল্টি শ্যুট আউটে এই ট্রফি জয়ের উল্লাস নেপালের মাঠে।

এই জয় একই সাথে ২০১১ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলের সেমিতে পাকিস্তানের কাছে হারের বদলাও। বাংলাদেশ এর আগে ২০১৫ সালে সিলেটে অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ সাফেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সেবারও তারা টাইব্রেকারে জিতেছিল, প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। উল্লেখ্য গতবছর থেকে অনূর্ধ-১৬ আসরকেই সংস্কার করে অনূর্ধ্ব-১৫ বছর বয়সীদের জন্য করা হয়েছে। বাংলাদেশ ২০০৩ এর সিনিয়র সাফও জিতেছিল টাইব্রেকারে।

সেমিফাইনালে বাংলাদেশ দলের একাদশের গোলরক্ষক ছিলেন মেহেদী; কিন্তু সাসপেনশন কাটিয়ে ফেরা মিতুলের জন্য ফাইনালে তাকে জায়গা ছেড়ে দিতে হয়। এরপরও বদলী হিসেবে নেমে বড়ই কঠিন সময়ে দলের ত্রাতা হয়ে গেলেন এই দীর্ঘদেহী গোলরক্ষক। ভারতের সাথে ম্যাচে লাল সবুজদের কোনো ফুটবলাররই টাইব্রেকারে শট মিস করেননি। কিন্তু ফাইনালে পারভেজ বাবুর শীষ্যদের স্পটকিক শুরুই হয় মিস দিয়ে। প্রথম শট পোস্টের উপর দিয়ে মারেন সেমিতে গোল করা রাজন হালদার।

এই ধরনের পরিস্থিতিতে ম্যাচে ফেরাটা বেশ কঠিন; কিন্তু ঠিকই তা করে দেখালেন গোলরক্ষক মেহেদী হাসান। বামদিকে শরীর ভাসিয়ে রুখে দেন পাকিস্তানি ফুটবলার জুনায়েদের নেয়া প্রথম শট। দ্বিতীয় শটে তৌহিদুল ইসলাম হৃদয় গোল করার পর লাল-সবুজদের লিডটা ধরে রাখেন এই আত্মবিশ্বাসী কিপার। এবার ডান দিকে শরীর ফেলে প্রতিহত করেন আদনানের শট। এরপর রাজা আনসারী এবং রুস্তম ইসলাম দুখু মিয়া গোল করেন।

পাকিস্তানের গোলদাতা মহিবুল্লাহ এবং ওয়াসিভ। টাইব্রেকারে তখন স্কোর ৩-২। শট নিতে আসেন বাংলাদেশ দলের রবিউল আলম। তিনি গোল করলেই চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ; কিন্তু রবিউল বল মারেন পাকিস্তানী গোলরক্ষকের শরীর সোজা। এই অবস্থায় বিপক্ষ ফুটবলারের শট ঠেকালেই শিরোপা বাংলাদেশ দলের হাতে। এই ক্ষেত্রে আবার চীনের প্রচীর হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন মেহেদী। মুদাসসরের শট প্রতিহত করে নেপালের মাঠে উপস্থিত বাংলাদেশসহ সকলকে উল্লাসে মাতান মেহেদী। আর রানার্সআপে সন্তুষ্ট হতে হয় ২০১১ এর চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানকে।

এর আগে ম্যাচে বাংলাদেশ ২৬ মিনিটে লিড নেয় পাকিস্তানের অধিনায়ক হাসিব আহমেদ খানের আত্মঘাতী গোলের মাধ্যমে। বাংলাদেশের কর্নার কিক ঠেকাতে গিয়ে নিজ জালে বল পাঠান টুর্নামেন্ট সেরা হওয়া এই ডিফেন্ডার। এরপর ৫৪ মিনিটে সমতা পাকিস্তানের। বাংলাদেশের হেলাল আহমেদ অযথাই বক্সে ফাউল করেন পাকিস্তানের এক খেলোয়াড়কে। ফলে পেনাল্টি থেকে গোল মহিবুল্লার। ৭৪ মিনিটে বাংলাদেশ লিডের সুযোগ পেলেও হেলালের হেড বিপক্ষ কিপার আটকে দেয়। পাকিস্তানও পায় কয়েকটি সুযোগ। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেনি।

আসরে ৪ গোল দিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন বাংলাদেশের নিহাত জামান উচ্ছ্বাস। তার এই চার গোলই মালদ্বীপের বিপক্ষে। ফেয়ার প্লে ট্রফির জিতেছে বাংলাদেশ। রোববার দেশে ফিরবে শিরোপা বিজয়ীরা।

এই শিরোপার মাধ্যমে দেশী কোচরাও যে সাফল্য আনতে পারেন তা ফের প্রমান করলেন পারভেজ বাবু। ২০১৫ তে চ্যাম্পিয়ন দলের কোচ ছিলেন সৈয়দ গোলাম জিলানী।

শনিবার তৃতীয় স্থান নির্ধারনী ম্যাচে নেপালকে ১-০ তে হারিয়েছে ভারত।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button