রাজনৈতিক কুটকৌশলে জিতেছেন দুই নেত্রী, হেরেছে জনগণ

Hasina Kaledaএস.এম সাজু আহমেদ: দেশের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি গণভবনে বসে তার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তেমনি ২০ দলীয় জোট প্রধান বিএনপির সভানেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, যিনি তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড গত তিন মাস ধরে গুলশান কার্যালয় থেকে পরিচালনা করে এখন তার বাসভবন ফিরোজায় ঠাঁই নিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক কুটকৌশল দিয়ে দেশ পরিচালনা করছেন এবং এর সাথে কিভাবে বিরোধীজোটের আন্দোলন দমিয়ে ঝামেলাবিহীন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকা যায় সেই চিন্তায় সর্বদা যেন চিন্তিত ও ব্যতিব্যস্তও বটে। তেমনি বিরোধীজোট প্রধান বেগম খালেদা জিয়া কিভাবে দেশকে তার অর্থনৈতিকসহ উন্নয়নের চাকা ঘোরানো থেকে সাময়িক বিরত রাখা যায় এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতার সেই মসনদ দখল করে শান্তিতে থাকা যায় সেই চিন্তায় তিনিও মহাচিন্তিত ও মহাব্যস্ত।
প্রকৃতপক্ষে বাংলার রাজনৈতিক অঙ্গনের সবচেয়ে আলোচিত, সমালোচিত এবং সমাদৃত শেখ হসিনা এবং খালেদা জিয়া এই ‘দরদী’ দুই নেতা নিজ নিজ জায়গা থেকে তাদের চিন্তাচেতনা প্রায়ই একই রেখে একই সমান্তরাল পথে চলছেন। দুজনই যেমন একই পথের পথিক তেমনি দুটি মেরু থেকে তাদের চিন্তা চেতনাও প্রায় একই। তাদের যেন একই চিন্তায় ঘুমোতে যাওয়া আর ঘুম থেকে উঠে সেই পূর্বের চিন্তায়ই ব্যস্ত থেকে মহাব্যস্ত হয়ে ওঠা।
তাদের কি চিন্তা? কিসের চিন্তা? কেমন চিন্তা? কোথাকার চিন্তা? এসব বিষয় আমাদের প্রায় কারোরই অজানা নয়। তাঁদের একজনের ব্যস্ততা ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে, আর অন্যজনের ব্যস্ততা তাকে ক্ষমতা থেকে দূরে সরিয়ে দিতে। দুই ভিন্ন-মেরু থেকে তাদের দু’জনের ব্যস্ততা যেন একদম মাত্র একটা বিষয়েই সীমাবদ্ধ।
বাংলার সাধারণ খেটে খাওয়া দিনমজুর, কষ্টে ভোগা সাধারণ জনতার মতে, এই হলো আমাদের মহান দরদী, জাতির আশা-আকাঙ্খার মুর্ত প্রতীক দুই নেত্রীর চিন্তা, চেতনা, ব্যতিব্যস্ততার কথা। কিন্তু তাদের স্বার্থসিদ্ধির এই স্বার্থলোভী ব্যস্ততার বাইরে কখনো একটুও তারা ভেবেছেন কি? যে সে্ই অজোপাড়া গাঁয়ে বুড়ি মা, অসহায় বিধবাটি, পঙ্গু মানুষটি, অথবা সাধারণ খেটে খাওয়া দিনমজুরটি আজ কি আহার করেছে? সারাদিনের কষ্টের গ্লানি ভুলে একটু শান্তিতে ঘুমোতে পারছে কি? অসহায় মানুষটির লজ্জা নিবারণের বস্ত্র আছে কি? স্বাধীন দেশে বাস করে আসলে কোন স্বাধীনতা পাচ্ছে কি? সকালে কাজে বের হয়ে আবার কাজ শেষে ঘরে ফিরে আসতে পারবে এমন কোন গ্যারান্টি আছে কি? সর্বোপরি গণতান্ত্রিক দেশে বাস করে সাধারণ মানুষ গণতন্ত্রের কোন সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারছে কি? প্রিয় নেত্রীদ্বয় এমনই সব হাজারো প্রশ্ন আপনাদের উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে দেয়া যায় কিন্তু এর কোনো সদুত্তর আপনাদের কাছে জানা নেই। আপনাদের কাছে আছে রাজনৈতিক ভাষায় উত্তর, তবে জনগণের স্বার্থে কোনো উত্তর আপনাদের সম্পূর্ণই অজানা।
গত টানা তিন মাস গণতন্ত্র রক্ষার নামে, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার রাজনৈতিক প্যাঁচানো নামে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিশ দলীয় জোটের ডাকে টানা হরতাল-অবরোধ, মারামারি, হাঙ্গামা, সংঘর্ষ, বোমা, পেট্রেলবোমা, আহত, নিহতের মত ঘটল ভয়ানক সকল প্রকার পৈশাচিক কর্মকাণ্ড। অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, পরিবহণ ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থাসহ প্রত্যেকটি অবকাঠামো ছিল সর্বকালের অন্যতম ঝুঁকির মধ্যে। দেশের প্রতিটি উন্নয়ন অবকাঠামো যেন একদমই নড়বড়ে হয়ে গেছে। দেশ হারিয়ে ফেলেছে উন্নয়নের সেই অগ্রযাত্রা। বাংলার মানুষ হারিয়ে ফেলেছে পথ চলার সব ধরনের সাহস।
এই যখন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের রাজনৈতিক প্যাঁচের কর্মকাণ্ডের অবস্থা তখন অপরদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকারইবা কম কিসে? সরকার তার নিয়ন্ত্রনাধীন বাহিনী দিয়ে সন্ত্রাসীদের আন্দোলন দমনে কঠোর ব্যবস্থা নামক বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ারের মহোৎসব। আন্দোলন দমনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বের হলেই প্রায় প্রতিটি সকালেই খবর আসত দেশের কোনো না কোনো স্থানে বন্দুকযুদ্ধের কবলে পড়ে মৃত্যুর সংবাদ। ক্ষমতাসীনদের আন্দোলন দমনের নামে কতজন মানুষকে আহত, নিহত, পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে তা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মানিত কর্তা ব্যক্তিরাই জানেন। হত্যা, গুম, খুন, রাহাজানি, সন্ত্রাসীসহ সকল প্রকার অন্যায় অত্যাচারের এক অভয়ারণ্যে যেন পরিণত হয়েছে আমাদের এই প্রিয় সোনার মাতৃভূমি।
প্রধান বিরোধীজোট বিএনপির বড় কর্তা খালেদা জিয়া তার গুলশান কার্যালয় থেকে দীর্ঘ তিন মাস যেমনি গণতন্ত্র রক্ষার নামে সাধারণ মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে শত শত মূল্যবান জীবনকে নষ্ট করে সর্বশেষে তার আবাসস্থল ফিরোজায় গিয়ে বসবাস শুরু করেছেন আর ‘রাজনৈতিক গেম’ উন্নয়নে ব্যস্ততার উচ্চ শিখরে রয়েছেন। তেমনি অপরদিকে মহামূল্যবান ক্ষমতা নামক চাঁদে বসে আওয়ামী সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন দমনের নামে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তার নিয়ন্ত্রিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা বন্দুকযুদ্ধ নামক ক্রসফায়ারের মাধ্যমে আন্দোলন দমিয়ে রেখেছিলেন এবং এখন বিএনপির আন্দোলন বেশ কিছুটা স্তিমিত হয়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন তার মসনদটি আরো পাকাপোক্ত মনে করেই মনে মনে হাসছেন।
সর্বোপরি দুটি মেরু থেকে একই পথের পথিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীজোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তারা তাদের রাজনৈতিক কুটকৌশলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জয়লাভই করেছেন। তাদের মধ্যে একজন রাজনৈতিক খেলায় জয়ের পথে এগিয়ে রয়েছেন অপরজন তার অবস্থান থেকে জয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। অর্থ্যাৎ তাঁহারা তাদের রাজনৈতিক কৌশলে হারেননি, জয়লাভই করেছেন। কিন্তু অতীব কষ্টের বিষয় দেশ দরদী এই সম্মানিত নেত্রীদ্বয়ের রাজনৈতিক প্যাঁচানো কারিশমায় হেরে যাচ্ছি আমরা এবং আমাদের মত সাধারণ জনতা।
লেখক: সাংবাদিক ও কলাম লেখক
(প্রকাশিত বক্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব মতামত ,  দা সানরাইজ টুডে’র সম্পাদকীয় বিভাগের আওতাভূক্ত নয়।)

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button