শক্তিশালী ভূমিকম্প ও সুনামির আঘাত

আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন ইন্দোনেশিয়ার

এক হাজারেরও বেশি নিহত

ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসিতে শক্তিশালী ভূমিকম্প ও এর প্রভাবে সৃষ্ট সুনামি আঘাত হানার পর ব্যাপক বিপর্যয় মোকাবেলায় কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছে।
এদিকে দেশটির স্বেচ্ছাসেবকরা সোমবার এক হাজারেরও বেশি লাশের জন্যে গণকবর খুঁড়েছে।
সরকারি হিসেব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে অন্তত ৮৩২ জন মারা গেছে।

ইন্দোনেশিয়ায় প্রায়ই প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে এবং জাকার্তা সাধারণত আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন না জানিয়ে নিজেই এসব দুর্যোগ মোকাবেলা করে থাকে। এবারেও দেশটি এই দুর্যোগ কাটাতে সক্ষম এমনটাই জানান দেয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের চার দিন পরও কিছু কিছু দুর্গম এলাকার সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে এবং ভারী সরঞ্জামাদির অপর্যাপ্ততার কারণে উদ্ধারকর্মীদের উদ্ধারকাজে ও ধসে পড়া ভবনের ভেতর চাপা পড়া মানুষদের উদ্ধারে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। চাপা পড়া মানুষরা ভেতর থেকে সাহায্যের জন্য চিৎকার করছে।
চলমান সংকট মোকাবেলায় ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ও এনজিওকে জীবনরক্ষাকারী সহায়তা দেয়ার অনুমোদন দিয়েছেন।

সরকারের সিনিয়র কর্মকর্তা টম লেম্বং টুইটারে জানান, ‘গতরাতে প্রেসিডেন্ট জোকো জরুরি দুর্যোগ মোকাবেলা ও ত্রাণ তৎপরতায় আন্তর্জাতিক সহায়তা গ্রহণের অনুমোদন দিয়েছেন।’
উদ্ধারকর্র্র্মীদের ইমেইল ও টুইটার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে বলেছেন।
আগামী দিনগুলোতে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে কর্মকর্তারা আশঙ্কা করেছেন। তারা এই খারাপ পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

পুবোয়ায় স্বেচ্ছাসেবীরা মৃতদের দাফনের জন্য ১শ মিটার দীর্ঘ কবর খুঁড়েছে। তাদেরকে ১ হাজার ৩শ’ লাশের জন্য কবর খুঁড়তে বলা হয়েছে।
এদিকে কর্তৃপক্ষ ১৪ দিনের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। পচাগলা লাশ থেকে যেন কোন রোগ ছড়িয়ে না পড়ে সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত সতর্কাবস্থায় রয়েছে।
পালুর একটি উপশহর বালারোয়ায় বিপুল ক্ষতি হয়েছে। শহরময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে উপড়ানো গাছ ও ডালপালা, কংক্রিটের ধ্বংস্তুপ, ধাতব দুমড়ানো ছাদ, দরজা ও ভাঙ্গা আসবাবপত্র।
এখনো যারা ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে বেঁচে আছে তাদের উদ্ধারে উদ্ধারকর্মীরা প্রাণপনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
শক্তিশালী ভূমিকম্পে একটি হোটেল মাটির নিচে দেবে গেছে। শুধু এই হোটেলের নিচেই ৬০ জন চাপা পড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইন্দোনেশিয়ার তল্লাশী ও উদ্ধারকারী সংস্থা জানিয়েছে, হোটেল রোয়া-রোয়া থেকে দুজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে আরো মানুষ জীবিত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যারা বেঁচে আছেন তারা খাবার, পানি ও জ্বালানীর মতো অতি প্রয়োজনীয় জিনিস দোকান থেকে লুট করছে। পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করছে।
পালুর এক বাসিন্দা বলেন, ‘কোন সাহায্য পৌঁছেনি। আমাদের খাবার নেই। বাধ্য হয়েই আমাদের খাবার লুট করতে হচ্ছে। এছাড়া আমাদের আর কোন পথ নেই।’
তিনি একটি দোকান থেকে খাবার চুরি করে ঝুড়িতে ভরছেন।
২৬ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশ ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে দুর্যোগপ্রবণ দেশ।
ওই এলাকায় ২০০৪ সালে শক্তিশালী ভূমিকম্পের প্রভাবে সৃষ্ট সুনামিতে ২ লাখ ২০ হাজার লোক প্রাণ হারায়। এদের মধ্যে কেবলমাত্র ইন্দোনেশিয়ায় ১ লাখ ৬৮ হাজার মারা যায়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button