বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, ঈদ মোবারক ও কিছু ভাবনা

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম: ঈদ মোবারক ঈদ মোবারক। মুসলিম জাহানে ঈদুল আযহা এক বিষ্ময়কর ত্যাগের প্রতিক। লক্ষ কোটি পশুর রক্তে দুনিয়া লাল হয়ে যাবার উপক্রম হবে। কিন্তু মানুষ তার অন্তরের পশুত্বকে কোরবানী করতে পারবে কিনা কে জানে? অথচ আল্লাহর নির্দেশে মানুষের অন্তরের পশুত্বকে কোরবানী করাই কোরবানীর মুল লক্ষ্য। কিন্তু অনেকক্ষেত্রে কোরবানীর ত্যাগ তিতিক্ষা কোন প্রাধান্য পায়না। প্রাধান্য পায় কোরবানীর মাংস। সারা দেশে বা সারা দুনিয়ায় কোরবানীর সময় যে ফ্রীজ বিক্রি হয় অন্যকোন সময় তার নজির পাওয়া যাবেনা। আমাদের এ এক বিচিত্র জীবন। তবু ঈদুল আযহা সবার জন্যে মঙ্গলময় নিরাপদ হোক।

আগস্ট আমার জীবনের এক মর্মান্তুদ বেদনার মাস। মানুষের অর্থ-বিত্ত-সম্পদ খোয়া গেলে বা হারালে আবার তা পাওয়া বা অর্জন করা যায়। কিন্তু যৌবন একবার চলে গেলে তা আর ফিরে পাওয়া যায়না। ’৭৫ এর ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার মধ্যে দিয়ে জাতি যেমন এতিম হয়েছিল, আমি এবং আমার পরিবার সব হারিয়ে সর্বশান্ত, মুল্যহীন হয়েছিলাম। কি দুঃখ, কষ্ট ও নির্যাতন ভোগ করেছি তা লিখে বুঝাতে পারবোনা। কবি নজরুল লিখেছিলেন, ‘সকাল বেলার আমীর রে ভাই ফকির সন্ধ্যাবেলা’। আমার বা আমাদের ক্ষেত্রে ঘটনাটা উল্টো। ’৭৫ এ জাতির পিতা দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচী নিয়ে জেলা গভর্নর পদ্ধতি চালু করেছিলেন। আমাকে করেছিলেন টাংগাইলের গভর্নর। ১৫ তারিখ শুক্রবার বহু বছর পর চ্যান্সেলর হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার কথা ছিল। সেই হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অপরুপ সাজে সেজেছিল। কিন্তু তার আর যাওয়া হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার বদলে তিনি পরপারে গেলেন। ১৪ই আগস্ট গভীর রাতে আমি গিয়েছিলাম তার কাছে। অনেক কথা হয়েছিল। রাত ১.৪০ মিনিটে ধানমন্ডির বাড়ী থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। সেই ছিল পিতার সাথে পুত্রের শেষ দেখা। সকালে শুনলাম আসমান ভেঙ্গে খানখান হওয়া সেই খবর ‘বঙ্গবন্ধু নেই। তাকে নির্মমভাবে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়েছে।’ প্রথম দিকে খবরটা বিশ্বাস করতে পারিনি। কিন্তু যা সত্য তা বিশ্বাস না করে উপায় কি? যখন বুঝলাম বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশ, পিতাহীন সংসার তখন নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। ওর আগে কত ব্যথা পেয়েছি, কষ্ট পেয়েছি। কিন্তু অমন কলিজার বোটাছেড়া ব্যথা কখনো পাইনি। এ-বাড়ী ও-বাড়ী এখানে সেখানে করে ঢাকাতেই কাটিয়েছিলাম ৪-৫ দিন। সেই সময় প্রচারপত্র ছেড়েছিলাম ‘খুনীরা কামাল-জামাল-রাসেলকে হত্যা করতে পারলেও বঙ্গবন্ধুকে নির্বংশ করতে পারেনি। আমি কাদের সিদ্দিকী তার চতুর্থ সন্তান। বাঙালীরা পিতৃহত্যার বদলা নেবেই নেবে।’ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এক কাপড়ে ঘর থেকে বেরিয়েছিলাম। ১২-১৩ দিন পর ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহিয়ষী নারী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সাথে দেখা হয়। তিনি আমার কাধে হাত রেখে বলেছিলেন, ‘তুমি বেঁচে আছো আমরা খুশী হয়েছি। তোমাদের সম্মান রক্ষা করে যতটা সম্ভব যেভাবে সম্ভব আমরা সহযোগিতা করবো।’ প্রায় ৩ বছর অবিরাম প্রতিরোধ চলেছিল। প্রতিরোধ যুদ্ধে ১০৮ জন শহীদ, ৫০০-র বেশি আহত হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য! এক সময় ইন্দিরা গান্ধীর সরকারের পতন ঘটিয়ে মোরারজী দেশাইর সরকার গঠিত হলে জিয়াউর রহমানের সাথে চুক্তি করে প্রায় ৮ হাজার যোদ্ধাকে তুলে দেয় এবং আরো ৪-সাড়ে ৪ হাজার প্রতিরোধ যোদ্ধা ভারতের নানা স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। সে এক অকল্পনীয় অভাবনীয় ব্যাপার। চলে দুঃখ-কষ্ট, চলে সংগ্রাম। ’৮১ সালের ১৭ই মে জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরেন। আমি ফিরি ’৯০ সালের ১৬ই ডিসেম্বর হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পতনের ১০ দিন পর।

আবার শুরু হয় নতুন অধ্যায়। এক মাসের মাথায় সামরিক আদালতের এক সাজার কথা বলে আমাকে কারাগারে পাঠানো হয়। হাইকোর্ট সুপ্রীম কোর্টে আইনের লড়াই করে প্রায় এক বছর পর মুক্তি পাই। কারাগার থেকে বেরিয়েই যাই টুঙ্গীপাড়া পিতার কবরে। সে কি দুরাবস্থা, আজকের টুঙ্গীপাড়া পিতার সমাধি দেখে সেটা আন্দাজ করা যাবেনা। বঙ্গবন্ধুকে যে কফিনে টুঙ্গীপাড়ায় নেয়া হয়েছিল ঘুণে ধরা সে বাক্স পড়েছিল গোয়াল ঘরে। বঙ্গবন্ধুর কবর থেকে ১৫-২০ হাত পশ্চিমেই ছিল গোয়াল ঘর। জায়গাটা তখন ব্যবহারের মতো ছিল না। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে গামছা কাধে ঘুরতাম। সেই কাধের গামছা দিয়ে কতবার পিতার অপরিষ্কার কবর পরিষ্কার করেছি। কারাগার থেকে বেরিয়ে উল্কার মতো ছুটেছি। কখনো দিনাজপুর, কখনো রাজশাহী, কখনো আবার জনাব মোহাম্মদ নাসিমের কাজীপুর। পরদিন সেখান থেকে পিরোজপুরের পারেরহাট। গভীর রাতে আবার টুঙ্গীপাড়া। এই ছিল আমার রোজকার কর্মসূচী। রাস্তাঘাটের মানুষজন অপরিসীম ভালবাসা দিতো। যেখানেই যেতাম বঙ্গবন্ধুর পোলা বলে বুকে টেনে নিতো। এখনো হাজার হাজার মানুষ টেনে নেয়। গত মাসের ২০ তারিখ জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে ফেরার পথে কাওরান বাজার যানজটে দাড়িয়েছিলাম। এক রিক্সাওয়ালা ছুটে এসে হাতে চুমু খেয়ে চিৎকার করছিল ‘গরীবের বন্ধু, গরীবের বন্ধু’ তার কথা কানে আসতেই আমার শরীর নাড়া দিয়েছিল, কি বলে লোকটি! দেশের জন্যে কিছুই করতে পারলাম না। রিক্সাওয়ালা বলছে গরীবের বন্ধু। আমার আর কি চাই, এরচাইতে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে? বুক ভরে গিয়েছিল আনন্দ আর প্রশান্তিতে।

যখনই একটু সময় পাই তখনই এটা ওটা দেখি অতীতের অনেক কড়কড়ে সত্য হাতের কাছে এলেই কেমন যেন মনে হয়। সেদিন হঠাৎই ইউটিউবে মাননীয় মন্ত্রী জনাব হাসানুল হক ইনুর বঙ্গবন্ধু হত্যার পরবর্তী এক সাক্ষাৎকারের ভিডিও দেখছিলাম। তিনি বড় গর্ব করে বিলেতের চ্যানেল ফোর’কে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। সে কি জঘন্য ভাষায় বঙ্গবন্ধুকে গালাগালি, অল্প বয়সে তার সে কি তেজ। তিনি এখন আমার বোনের মন্ত্রীসভার প্রভাবশালী মন্ত্রী। ভাবতে কি খারাপই যে লাগে। কাদেরিয়া বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা তালিকাভুক্ত হতে পারেনা, আমি সরকার বিরোধী। আগে পারতোনা বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ প্রতিরোধ করছি। কাদেরিয়া বাহিনী শুনলেই জেল। মুক্তিযুদ্ধের বীর সন্তানদের সেকি করুণ অবস্থা। শুধু আমার কারণে ’৭৫-এর প্রতিরোধ সংগ্রামীদেরও কোন মূল্য নেই, মূল্যায়ন নেই। চারিদিকে এক প্রতিহিংসা অব্যবস্থা। এর অবসান কোথায়, কবে কিভাবে হবে বুঝতে পারিনা।

এরমধ্যে আবার দেশজুড়ে এক মহাপ্রলয় বয়ে গেল। নিরাপদ সড়কের দাবীতে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্তানেরা রাস্তায় নেমেছিল। এক মহাপ্রলয় সুনামীর চাইতে ভয়াবহ। রক্ষা যে তারা পরম শৃঙ্খলার পরিচয় দিয়েছে যা ছিল অভাবনীয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমাদের শিশুরা চোখ খুলে দিয়েছে।’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথা যদি আন্তরিক হয় তাহলে নিরাপদ সড়কের দাবীতে রাস্তায় নামা সন্তানদের নিয়ে টানাটানি কেন, তাদের রিমান্ডে নেয়া কেন, মামলা কেন? তাদের তো পুরস্কার পাবার কথা। জাতির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন জানানো উচিত। ঈদের আগেই যাদের নামে মামলা আছে, যাদের জেলে নেয়া হয়েছে তাদের স-সম্মানে ছেড়ে দেয়া উচিত। তাদের গ্রেফতার নয়, তাদের প্রাপ্য পুরস্কার। তারও আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের যেভাবে এগুনো উচিত ছিল সেভাবে এগুয়নি। সব কোটা উঠিয়ে দেবার কথা বলে আরো এক বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব গোজামিলে লাভের চাইতে বরং ক্ষতিই বেশি হচ্ছে। যদিও সরকার গলা ফাটিয়ে বলছে উন্নয়নের কথা। এই বিশৃঙ্খল উন্নয়ন কিছু মানুষের পেট ভরা আপামর জনসাধারণের কাম্য নয়। আপামর জনসাধারণ চায় শান্তি স্বস্তি ও সম্মানের জীবন। যে দেশে মানুষের স্বাভাবিক মুত্যুর নিশ্চয়তা নেই, যে দেশে আধুনিক জামানায় রাস্তার গতি ঘন্টায় ১৫-২০ কিলোমিটারের বেশি নয়, সে দেশে উন্নয়ন কোথায়? ঈদে বাড়ী ফেরা যাত্রীদের সে যে কি দুর্ভোগ সহ্যের অতীত। সেদিন আমার গাড়ির চালক যীশু বলছিল, রাস্তাঘাটে মানুষের চাইতে গরুগুলোর কষ্ট বেশি। সেই কোথা থেকে গরুগুলো গাড়িতে তুলে, ২-৩ দিন গাড়িতে থাকে। অনেক গরু পথেই মারা যায়। সত্যিই তো একটা গরু ৩-৪ দিন শুধু তার পায়ের উপর দাড়িয়ে থাকে কি কষ্টই না হয়। তারপর ফেরী পারাপারে দুর্ভোগ তো আছেই। আজ ক’দিন থেকেই লেগে আছে যানজট। চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ-টাংগাইলের রাস্তায় কত কিলোমিটার যে যানজট এক অভাবনীয় ব্যাপার, দুর্ভোগের শেষ নেই।

সামনে নির্বাচন। নানা ধরনের নির্বাচনী তৎপরতা। সরকার ভাবছে তারাই সব। যেভাবে আগের হাল গেছে পরের হালও সেভাবে যাবে। ’১৪ সালের মতো একইভাবে তারা তরী পাড় করে নেবেন। অন্যদল ভাবছে যেকোন উপায়ে সরকারের পতন ঘটাতে হবে। কারো চিন্তা এবং চেষ্টা সুস্থ নয়। অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি এই উপমহাদেশে যখনই সরকার একা হয়েছে তখনই তাদের পরাজয় হয়েছে। যখনই সব বিরোধী দল এক হয়েছে তখনই সরকারের পতন হয়েছে। অর্থবহ একত্র হবার একটা প্রচন্ড প্রয়োজনীতা আছে। রাজনৈতিক নানা মেরুকরণ নির্বাচনের আগে হয়, সেই মেরুকরণ অর্থবহ হলে অবশ্যই ভাল হবে। আর অর্থবহ না হলে ব্যর্থতা অনিবার্য। সবাই সুর তুলেছেন জাতীয় ঐক্য। খুবই সত্য কথা। অর্থবহ জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। শুধু সরকার বদলের জন্যেই জাতীয় ঐক্য নয়, অর্থবহ সুষ্ঠ রাজনীতির জন্যে একটি জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন। যে যাই বলুন, আওয়ামী লীগ আর বিএনপি নিঃসন্দেহে দু’টি জনসমর্থিত বড় দল। প্রায় সব জায়গায়ই দেখা যায় এক বাড়ী আওয়ামী লীগ, পাশের বাড়ী বিএনপি। সমাজে এমন এক মারাত্মক বিভাজনের সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে নীতি আদর্শের কোন বালাই নেই। বিরোধী দলের যেমন এক ধরনের ভাষা থাকে ঠিক তেমনি সরকার এবং সরকারী দলের রেকর্ড করা গদ থাকে। সব সময় সরকার হয় দেশপ্রেমিক, সব বিরোধী দল সরকারের চোখে দেশদ্রোহী। এটা আয়ুব আমলের বস্তাপচা কথা। কিন্তু এখনো আমাদের সরকারও সেই বস্তাপচা কথাই বয়ে বেড়াচ্ছে। বর্তমান সরকারও বলছে বিএনপি ষড়যন্ত্রকারী, ড. কামাল হোসেন ষড়যন্ত্রকারী, আমরা সবাই ষড়যন্ত্রকারী। তাহলে ভাল কে? যাদের নাক টিপলে এখনো দুধ পড়ে তারাও আমাদের নিয়ে কথা বলে। আমি সব সময় চেয়েছি দেশে একটি ভারসাম্যের অর্থবহ রাজনীতি। মানী লোকের মান, দেশের মানুষের মর্যাদা, দেশের মানুষের মালিকানা। আমার চাওয়া যদি কারো কাছে বা কারো চোখে খারাপ লাগে লাগবে। যাদের জন্যে সব সময় মন আনচান করে সেই জনগণের কাছে ভাল হলেই হলো।

বর্তমানে অর্থবহ একটি নির্বাচন দেশের জন্যে সবথেকে বেশি জরুরী। মনে হয় তারচাইতে জরুরী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্যে। মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন না হলে সবচাইতে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন তিনি। তিনি কোন সামরিক ব্যারাক থেকে এসে নেতা হননি, তিনি এদেশের অবিসংবাদিত নেতা, দেশের পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা, রাজনৈতিক ঘরানার সন্তান। রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থেকেই এতদূর এসেছেন। তার পরিচয় রাজনীতি। রাজনীতির বাইরে তার চিন্তা করার কোন সুযোগ নেই। দেশের মানুষের সমর্থন তার শাক্তি। দারোগা-পুলিশ-ওসি-ডিসি দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার কোন উপায় নেই তার। মানুষের মন জয় করে তাকে ক্ষমতায় থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে অবাধ নিরপেক্ষ সরকারী প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের বিকল্প নেই। বর্তমান ভোট ছাড়া সংসদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্যে কোন কাজে আসবে বলে মনে হয়না। যে যাই বলুন দেশের অর্থনীতি খুব একটা ভাল না। চমক সৃষ্টির জন্যে পদ্মা সেতু প্রকল্প নেয়া হয়েছে তার অগ্রগতি খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। ১৬ তারিখ টুঙ্গীপাড়া যাবার পথে পদ্মা সেতুর যেটুকু দৃশ্যমান দেখলাম এই ডিসেম্বরে তো দূরের কথা, আগামী ডিসেম্বরেও পদ্মা সেতু গাড়ি চলাচলের জন্যে তৈরী হবেনা। রেলের কাজ কিছুই হয়নি শুধু আশপাশের কিছু বাড়ী-ঘর ভাঙ্গা ছাড়া। তাই বড় বড় কথা বলা যত সোজা সেটাকে বাস্তবে রূপ দেয়া অত সোজা বা সহজ নয়। এসব কারণে বর্তমান সরকারের জন্যে আগামী নির্বাচন মস্তবড় চ্যালেঞ্জ। এটা ঠিক প্রধান বিরোধী দল বিএনপি-র অবস্থা খুব বেশি ভাল নয়। ২০১৫ সালের লাগাতার অবরোধ হরতালের কর্মসূচী দিয়ে তারা সাধারণ মানুষের চোখে কিছুটা অপ্রিয় হয়েছে। সেখানে থেকে ঘুরে দাড়ানো বিএনপি-র জন্যেও খুব একটা সহজ নয়। আমরা কিছু মানুষ একটি অর্থবহ জাতীয় ঐক্যের আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছি। এখন বিএনপি যদি জাতীয় ঐক্যের জন্যে পাগল হয় তাহলে সে ঐক্য আর আমাদের ঐক্য এক নয়। কারণ এখনও কেউ কারো চরিত্র বদল করেনি। এখনো কেউ কারো ভুল স্বীকার করেনি। কেউ সাধারণ মানুষকে তেমন একটা গুরুত্ব দেবার কথা চিন্তা করেনা। সেজন্যে সামনের দিনগুলো খুব একটা কুসুমাস্তীর্ণ নয়, বরং বেশ অনিশ্চিত। তাই ভেবে চিন্তে কাজ করতে হবে। সাধারণ ছাত্রদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কোটা সংস্কারের আন্দোলন এসবের প্রকৃত সমাধান না করে ধামাচাপা দেয়া এক মারাত্মক ভুল। ছাইচাপা আগুন থেকেও মাঝে মধ্যে বিরাট বিশাল অগ্নিকান্ড হতে পারে। সেদিকে দৃষ্টি রাখা উচিত। দেশবাসীর জন্যে ঈদ আনন্দময় নিরাপদ হোক দয়াময় আল্লাহর কাছে সেই প্রার্থণাই করি-আমিন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button