আজ হিরোশিমা দিবস

hiroshimaমাত্র একটা বোমা যে কীভাবে মুহূর্তের মধ্যে একটি শহরকে গ্রাস করে ফেলতে পারে তা বিশ্ববাসীর কাছে ছিল অজানা। এর ভয়াবহতা যে কী পরিমাণ তা ছিল চিন্তার বাইরে। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট সকালের স্নিগ্ধতায় মানুষ প্রত্যক্ষ করলো পৃথিবী জুড়ে ক্ষমতার লড়াইয়ের চূড়ান্ত বিভৎসতা। ক্ষমতার লড়াই কতটুকু হিস্যা আর অমাণবিক হতে পারে।
একটি মাত্র আণবিক বোমা যার নাম ‘লিটল বয়’। সেই লিটল বয়ের বিষাক্ত ছোবলে ক্ষত বিক্ষত হয় জাপানের হিরোশিমা নগরী। এর মাত্র তিনদিন পরে নিক্ষেপ করা হয় “ফ্যাটম্যান” নামক দ্বিতীয় আণবিক বোমাটি। এটি ফেলা হয় নাগাসাকি শহরের ওপর। সেই রক্তস্নাত শোকাহত স্মৃতি আজো বিশ্বব্যাপী স্মরণ হয় শোক আর বেদনার অভিব্যক্তিতে। যুগে যুগে যুদ্ধ বিরোধী প্রচার এবং আন্দোলনে হিরোশিমার সেদিনের ভয়াল স্মৃতিকে তুলে ধরা হয় যুদ্ধকে ঘৃণা জানাতে।
কী ঘটেছিল সেই দিন?
১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা তখন জোরেশোরে বাজছে। জাপানের হিরোশিমা শহরে স্থানীয় সময় সকাল আটটা ১৫ মিনিট। ভয়ংকর নির্দেশটা আগেই দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান। বাকি ছিল শুধু বাস্তবায়ন। বোমারু বিমান ‘এনোলা গে’ বয়ে নিয়ে এল গণবিধ্বংসী সেই মারণাস্ত্র। হিরোশিমায় ফেলা হলো আণবিক বোমা ‘লিটল বয়’। মুহুর্তেই পুরে ছারখার হেয়ে যায় হিরোশিমা অঞ্চল। দেখে বুঝারই উপায় ছিলনা যে কয়েক মূহুর্ত আগেও এই শহরে মানুষ বসবাস করতো। কয়েক হাজার মানুষ সেদিন জীবন্ত পুড়ে মারা গিয়েছিল। আণবিক বোমা হামলার সঙ্গে সঙ্গেই যে শুধু মানুষ মারা গেছে তা কিন্তু নয়। তেজস্ক্রিয়তা, শরীরের নানা অংশ পুড়ে যাওয়া এবং মারাত্মকভাবে আহত হওয়ার কারণে ১৯৪৫ সালের শেষ নাগাদ মোট মৃতের সংখ্যা গিয়ে ঠেকে ৬০ হাজারে। অন্যদিকে নাগাসাকিতে মারা যান প্রায় ৮০ হাজার লোক। আণবিক বোমা হামলার ভয়াবহতা শুধু তখনই গ্রাস করেনি বিশ্ববাসীকে। বরং মানব জাতিকে এর জের টানতে হয়েছে বছরের পর বছর। বোমা নিক্ষেপের দুই থেকে চার মাসের মধ্যে বোমার তীব্র প্রতিক্রিয়ায় মারা যান প্রায় ১ লক্ষ ৬৬ হাজার লোক। পাঁচ বছর পর তা গিয়ে দাঁড়ায় ২ লক্ষ ৩০ হাজারে! এটম বোমার বিষ্ফোরণ জাপানের পরিবেশকে করেছিল মারাত্মক বিষাক্ত। মোট কথা বিপর্যয় নেমে আসে হিরোশিমায়।
হিরোশিমার বর্তমান অবস্থা :
১৯৪৯ সালে হিরোশিমা শান্তি স্মৃতি পার্ক নির্মাণ করা হয়। হিরোশিমা শান্তি স্মৃতি জাদুঘর ১৯৫৫ সালে নির্মাণ হয়। হিরোশিমা ১৯৪৯ সালে জাপানি পার্লামেন্ট দ্বারা শান্তির শহর ঘোষিত হয়। হিরোশিমা উপসাগরকে ঝিনুকের আঁধার বলা হয়। সরকার আর জনগণের চেষ্টায় এই শহর এখন হয়ে উঠে শান্তি আর উন্নয়নের নগরী। একটি বিধ্বস্ত দেশ থেকে কীভাবে উন্নয়নের নগরীতে পরিণত হওয়া যায়, বর্তমান হিরোশিমা তারই একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। তাই বর্তমান হিরোশিমা এখন বিশ্বের অনুপ্রেরণা।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button