উপস্থিত ছিলেন তারেক রহমান ও মির্জা আলমগীর

যুক্তরাজ্য বিএনপির ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

bnp-ukদেশ রক্ষায় গণতন্ত্রপ্রিয় সকল দলকে এক হবার উদাত্ত্ব আহবান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশ যে সংকটে আছে তা থেকে মানুষকে রক্ষা করতে, পরিত্রাণ দিতে, আসুন ভেদাভেদ ভুলে এক হই।
তিনি বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, যারা চান আইনের শাসন, গণতন্ত্রের মুক্তি সেসব দলের সব নেতা-কর্মীকে বলবো আসুন আবার আমরা এক হই। এ অপশাসন থেকে জাতিকে মুক্তি দেই।
রবিবার লন্ডনে যুক্তরাজ্য বিএনপির ইফতার মাহফিলের পূর্বে এক আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই আহবান জানান।
পূর্ব লন্ডনের হাইস্ট্রীট নর্থ এর দি রয়্যাল রেজেন্সী হোটেলে যুক্তরাজ্য বিএনপির আয়োজনে এই ইফতার মাহফিল ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিকের সভাপতিত্বে সহস্রাধিক বিএনপি সমর্থক প্রবাসী নেতাকর্মী বৃহত্তম এই সমাবেশে যোগ দেন।
দেশের অবস্থা কি, কোন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে তা দেশের মানুষ ভালো করেই অনুধাবন করতে পেরেছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, শেখ হাসিনা প্রায় সময়ই কথায় কথায় একটা কথা বলেন- তিনি দেশে ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। চালের কেজি যেখানে ১৫ টাকা ছিলো সেটার এখন কোথায় দাঁড়িয়েছে? আর ভোটের অবস্থা খুলনার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিকে তাকালেই বুঝা যায়। ভোট কারচুপি আর অনিয়মের কথা শুধু দেশবাসি দেখেছে তা না বিদেশি রাষ্ট্র আর দাতারাও এর সমালোচনা করেছে। শেখ হাসিনা তা হলে কি ভোট আর ভাতের ব্যবস্থা করেছেন?
তিনি বলেন, এ অবৈধ সরকারের এক অবৈধ অর্থমন্ত্রী ক’দিন আগে বলেছেনে- দশ বছরে কোন কিছুর দাম বাড়েনি। দাম বেড়েছি কি বাড়েনি এ কথার মূল্যায়নের দায়ভার আমি দেশের জনগণের উপর ছেড়ে দিলাম। তাদের এই তথাকথিত উন্নয়নের স্লোগান জনগণের কাছে পরিষ্কার। বৃষ্টি হলেই ঢাকায় মিডিয়ার মাধ্যমে যে দুর্ভোগ আর জনভোগান্তির ছবি দেখি তাতে বুঝা যায় উন্নয়ন কতটা হয়েছে!
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বিপর্যয়ের কথা উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা আর শিক্ষার্থীরা দুটোই এক করুণ অবস্থার মধ্যে পড়েছে।
দেশ রক্ষায় বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশ কি অবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে মানুষ তা বুঝতে পারছে। আর সে চিত্র আমার বক্তব্যের পূর্বে আপনাদের সামনে সবিস্তারে তোলে ধরেছেন বিএনপি মহাসচিব। আমি তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে একটি কথা যোগ করতে চাই। আর তা হলে দেশকে এ অপশাসন থেকে মুক্তি দিতে প্রয়োজন বৃহত্তর ঐক্য। দেশের মানুষ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে এ অবস্থা থেকে বের করতে হলে ঐক্য প্রয়োজন।
বর্তমান এ সংকটময় পরিস্থিতিতে সবার আগে বিএনপির সব নের্তাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হবার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরো বলেন, বিএনপি একটি বৃহত্তর দল। এদলের নেতা রয়েছে হাজার-হাজার, আর তাদের কর্মীর সংখ্যা হাজার থেকে লাখো, লাখো, আর সে দলের রয়েছে কোটি কোটি সমর্থক।
তিনি বলেন, চলার পথে হাজার হাজার মানুষের মধ্যে মত পার্থক্য হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে দেশে আইনের শাসনের দুরাবস্থা, রাজনীতি আর সমাজনীতির দুরাবস্থার ব্যাপারে কারো মধ্যে কোন মত পার্থক্য থাকার কথা না।
তারেক রহমান বলেন, অতীতে যখনি দেশ কোনো সংকটে পড়েছে তখনি এগিয়ে এসেছে বিএনপি। দেশে আজ সংকট উপস্থিত হয়েছে। আর এ সংকট মোকাবেলা করতে হবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে। তার আগে বিএনপির সবাইকে এক হতে হবে। তৃণমূল থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
দেশ এ অবস্থায় চলতে পারে না মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের এ অবস্থার পরবির্তন ঘটাতে হবে। জনগণকে সাথে নিয়েই এ অবস্থার পরিবতন ঘটাতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধ আর গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সব দলকে এক কাতারে আসার আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, দেশে যত রাজনৈতি দল রয়েছে, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন, গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন চান তাদের আহবান জানাই আসুন সব ভেদাভেদ আর মতপার্থক্য ভুলে এক হই, এই দেশটাকে রক্ষা করি।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর যারা দলের বাইরে কিংবা ভিতরে থেকে দেশ গঠনে নানান ভাবে ভূমিকা পালন করেছেন, তাদেরকে আহবান জানাবো-দেশের মানুষকে রক্ষা করতে, পরিত্রাণ দিতে,আসুন সকলে একত্রিত হই, দেশকে রক্ষা করি।
সবাই ঐক্যবদ্ধ হবার মাধ্যমেই আওয়ামী অপশক্তি দেশ থেকে দূর হবে মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে গণতন্ত্র আর সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলাম, যদি ঐক্যবদ্ধ হই তাহলে দেশ থেকে এই আওয়ামী অপক্তিকে পরাস্থ করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
তারেক রহমান দেশের সব নাগরিককে নিজেদের মতপার্থক্য ভুলে ঐক্যবদ্ধ হবার আহবান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশ এক মহাসংকটে নিপতিত। গণতন্ত্র শৃঙ্খলিত। দেশের মাটি মানুষের নেত্রী, গণতন্ত্রের মা আজ কারাগারের অন্ধকার প্রকৌষ্টে বন্দী। এহেন অবস্থায় আমাদের প্রিয় নেতার নির্দেশনা নিতে লন্ডনে এসেছি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সম্পূর্ণ বেইআইনীভােব গায়ের জোরে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আটকে রেখেছে সরকার। এটা সরকারের একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়নের নীল নকশা ছাড়া আর কিছুই না।
দেশকে বর্তমান সরকারের অপশাসন থেকে মুক্ত করার আহবান জানিয়ে মীর্জা আলমগীর বলেন, আজ আমাদের দেশ নেত্রীকে বিনাদোষে, সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে একটি মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। এটা বানোয়াট মামলা।
দেশে আইনের কি করুণ অবস্থা তা আপনার সবাই জানেন মন্তব্য করে মির্জা আলমগীর বলেন, সংবিধানের একটি রায়কে কেন্দ্র করে দেশের প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকে নলের মুখে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমরা কার কাছে বিচার চাইতে যাবো?
খালেদা জিয়ার প্রতি সরকারে অমানবিক আচরণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে দেশে আটকে রেখেছে একটা কারণে। আর তা হলো তার দেশনেত্রীকে প্রধান প্রতিপক্ষ মনে করে। তারা চাচ্ছে নেত্রীকে কারাগারে আটকে রেখেই কিভাবে জীবনাবসান ঘটানো যায়।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, বাধাবিপত্তি আস‌বে, সংগ্রাম ক‌রে যে‌তে হ‌বে। বিএনপির দু‌র্দি‌নে আমাদের একজন নেতাকর্মীকেও নিজেদের দলে টে‌নে নি‌তে পা‌রেনি সরকার। আমরা খুব আশাবাদী, দে‌শে জাতীয় ঐক্য তৈরি হ‌বে। আমা‌দেরও ঐক্যবদ্ধ হ‌তে হ‌বে। আমরা সেই দি‌নের অপেক্ষায় আছি, যে দিন খালেদা জিয়া কারামুক্ত হ‌বেন এবং তা‌রেক রহমান বী‌রের বে‌শে দে‌শে ফির‌বেন।
দেশে মানুষ আতঙ্কে কথা বলতে পারছে না মন্তব্য করে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য ক‌রে বিএনপি মহাসচিব ব‌লেন, আন্দোল‌নের মধ্যদি‌য়ে, নানা ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে আপনি নেতার আসনে আসীন হয়েছেন। আপনার চলার পথ মোটেই কসুমাস্তীর্ণ ছিলোনা। আপনার দিকে দেশবাসীর প্রত্যাশা নিয়ে তাকিয়ে আছে। দেশকে এই ধ্বংসস্তুপ থেকে তোলে আনার দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে।
দেশের জন্য খালেদা জিয়া অনেক ত্যাগ আর কষ্ট স্বীকার করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে মীর্জা আলমগীর বলেন, দেশ নেত্রী যখন অবরুদ্ধ অবস্থায় তাঁর কার্যালয় থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন-ঠিক এমনি সময়ে ছোট ছেলের মৃত্যু সংবাদ পান। মায়ের সামনে ছেলের লাশ, কত কষ্টের ভাবা যায়। তাঁর বড় ছেলে আজ নির্বাসিত অবস্থায় আছেন। স্বামী হারিয়েছেন শত্রুর হাতে, বড় ছেলে দেশের বাইরে আর তিনি কারাগারে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button