ইস্পাত-অ্যালুমিনিয়ামে শুল্ক

যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনায় মিত্ররা

euইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলো থেকে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে শুল্ক বসিয়ে দেশে-বিদেশে কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছে মার্কিন প্রশাসন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মেক্সিকো, কানাডার পাশাপাশি মার্কিন কংগ্রেসের রিপাবলিকান সদস্যরাও মিত্রদেশগুলোর ওপর বাড়তি শুল্ক চাপানোকে ভালো চোখে দেখছেন না। ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া এ সিদ্ধান্তে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন দেশ ও জোটগুলো এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক বসানোরও প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
মার্কিন শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় ১ জুলাই থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ইস্পাত, ইয়োগহার্ট, হুইস্কি ও রোস্টেড কফির মত ভোগ্যপণ্যর ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে কানাডা।  মেক্সিকোর অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারাও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা ইস্পাতের ওপর শুল্ক বসানোর চিন্তা করছে। শূকরের মাংস, আপেল, আঙ্গুর, ব্লুবেরি এবং পনিরও ওই তালিকায় থাকতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে তারা।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন যেসব মার্কিন পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের চিন্তা করছে তার মধ্যে ঢালাই লোহা থেকে শুরু করে শিম পর্যন্ত নানান ধরনের পণ্য আছে। তাদের এ তালিকা দৈর্ঘ্য ১০ পৃষ্ঠা বলেও জানিয়েছে বিবিসি। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় অভিযোগ দায়েরেরও ঘোষণা দিয়েছে ২৮টি ইউরোপীয় রাষ্ট্রের এই জোট।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্চেই আমদানি করা ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামে শুল্ক আরোপের কথা ঘোষণা করেছিলেন; মধ্যস্থতার মাধ্যমে চাইলে কোনো কোনো দেশকে ছাড় দেওয়া যেতে পারে ইঙ্গিত দিয়ে ইইউ, মেক্সিকো, কানাডাসহ বেশ কয়েকটি দেশের ওপর তা কার্যকরেও কিছু সময়ের জন্য স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রী উইলবার রস জানান, কানাডা, মেক্সিকো ও ইউরোপের সঙ্গে আলোচনায় অগ্রগতি না হওয়ায় স্থগিতাদেশের মেয়াদ আর বৃদ্ধি করা হচ্ছে না।
শুক্রবার থেকেই ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্রদেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামজাত বিভিন্ন পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক দিতে হবে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।
যেসব পণ্যের ওপর শুল্ক বসছে তার মধ্যে ধাতবপাতে মোড়ানো ইস্পাত, স্ল্যাব, কয়েল, অ্যালুমিনিয়াম রোল এবং টিউবসহ উৎপাদন, নির্মাণ ও তেল শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল রয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট চাইলে যে কোনো সময় যে কারও উপর থেকে এই শুল্ক প্রত্যাহার বা কমাতে পারে বলেও জানিয়েছেন রস। এর পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পকে করা ফোনে ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ মার্কিন প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে ‘অবৈধ’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন।  ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর ‘যথোপয্ক্তু জবাব দেবে’ বলে ম্যাক্রোঁ হুশিয়ারি দিয়েছেন, জানিয়েছে এলিসি প্রাসাদ।
ট্রাম্প বলছেন, মার্কিন ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদকরা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ; বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা তাদের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে বলেই আমদানিতে শুল্ক বসাতে হচ্ছে। ট্রাম্পের এই যুক্তি উড়িয়ে দিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।  “তার মত অনুযায়ী, কানাডাকে এখন যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করছে; এটা অবিশ্বাস্য,” বলেন তিনি। যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য মন্ত্রী লিয়াম ফক্স বলেছেন আমদানি করা ইস্পাতে যুক্তরাষ্ট্র যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে তা ‘স্পষ্টতই অদ্ভূত’। ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে ‘সংরক্ষণবাদ’ হিসেবেও অ্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি।
“আমরা যদি আমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রর সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে পাল্টাপাল্টির পথে হাঁটি, তাহলে তা খুবই দুঃখজনক হবে।” মেক্সিকোরে পররাষ্ট্র মন্ত্রী লুইজ ভিদেগারাই বলেছেন, তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া পদক্ষেপের পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বিবেচনা করছে। বাণিজ্য, অভিবাসন, নিরাপত্তাসহ সব বিষয়েই মেক্সিকো নিজের স্বার্থ রক্ষায় সম্ভব সব কিছু করবে বলেও মন্তব্য তার।
যুক্তরাষ্ট্র গত বছর ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামজাত পণ্য আমদানি করেছিল, যার প্রায় অর্ধেকই (২৩ বিলিয়ন ডলার) এসেছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা ও মেক্সিকো থেকে। যে কারণে ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত মার্কিন আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে বলে মন্তব্য বিশ্লেষকদের। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের কড়া প্রতিক্রিয়া এসেছে দলের ভেতর থেকেও।  “আমি এর সঙ্গে দ্বিমত করছি। আজকের এই সিদ্ধান্তের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে আমেরিকার মিত্ররা, যখন কিনা আমাদের উচিত ছিল চীনের মত দেশগুলোর অন্যায্য বাণিজ্য চর্চার বিরুদ্ধে তাদের নিয়ে একসঙ্গে কাজ করা,” বলেন প্রভাবশালী রিপাবলিকান ও মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের স্পিকার পল রায়ান। তীব্র সমালোচনা করেছেন হাউসের ওয়েইস অ্যান্ড মিনস কমিটির চেয়ারম্যান কেভিন ব্র্যাডিও।  “এই শুল্কে ভুল লক্ষ্যবস্তুকে নিশানা করা হয়েছে। ইউরোপ, মেক্সিকো ও কানাডা আমাদের জন্য সমস্যা নয়, সমস্যা হচ্ছে চীন,” বলেছেন তিনি। -বিবিসি

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button