‘নারীবিদ্বেষী’ আইনের বিরুদ্ধে উত্তাল স্পেন

spain১৮ বছর বয়সী এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণে জড়িত ৫ ব্যক্তির প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মাত্র ৯ বছরের সাজা ঘোষিত হওয়ার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছে স্পেনের নারীরা। দেশটির যৌন নিপীড়নবিরোধী আইনে ধর্ষণের প্রমাণ হিসেবে সহিংসতা ও হুমকি ধামকির সুস্পষ্ট প্রমাণ হাজির করতে হয়। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়া এই নারীর ক্ষেত্রে যৌন নিপীড়ন প্রমাণ করা গেলেও ধর্ষণের সুস্পষ্ট প্রমাণ পায়নি আদালত। এমন অবস্থায় ৫ ধর্ষকের বিরুদ্ধে ঘোষিত সাজাকে অপর্যাপ্ত আখ্যা দিয়ে খোদ যৌন নিপীড়নের বিদ্যমান আইন পরিবর্তনের দাবি তুলেছে স্পেনবাসী। উত্তাল বিক্ষোভের মুখে বিদ্যমান আইনকে নতুন করে পর্যালোচনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে এসব কথা জানা গেছে।২০১৬ সালে  সালে স্পেনে বার্ষিক ষাঁড়ের দৌড় প্রতিযোগিতার মধ্যেই পাঁচ জনের সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন তখনকার ১৮ বছর বয়সী ওই নারী। পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী পাঁচ পুরুষ তাকে নির্জন স্থানে ঘিরে ধরে ধর্ষণ করে তা ফোনে ধারণ করে রাখে। ‘ওলফ প্যাক’ নামে নিজেদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ভিডিও প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণ উদযাপন করে তারা। পাঁচ মাসের রুদ্ধদ্বার বিচার শেষে আদালতে যৌন নিপীড়নে দোষী প্রমাণিত হয় ওলফ প্যাক নামে পরিচিতি পাওয়া পাঁচ যুবক। প্রসিকিউটরেরা তাদের ২০ বছর করে কারাদ-ের আবেদন জানালেও আদালতের রায়ে প্রত্যেককে নয় বছর করে কারাদ- দেওয়া হয়। এছাড়া রায়ে ওই নারীকে ৫০ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার এই রায় ঘোষণার পর থেকেই স্পেনে ৩ দিন ধরে বিক্ষোভ চলছে। প্রতিবাদে স্পেনে তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার পাম্পলোনা শহরের বিক্ষাভে যোগ দিয়েছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে মাদ্রিদ, বার্সেলোনা ও ভ্যালেন্সিয়াতেও। টুইটারে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে হ্যাশট্যাগ ‘টেল ইট’। এই ট্যাগ ব্যবহার করে ধর্ষণের শিকার নারীর প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে নিজেদের নির্যাতিত হওয়ার কাহিনী তুলে ধরছেন অনেকে।বিচারকরা প্রমাণ পেয়েছেন, মামলার বাদী একটি সংকীর্ণ ও গোপন স্থানে পাঁচ ব্যক্তির দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিলেন। পুরুষ্ট শরীরের পুরুষেরা তাকে আচ্ছন্ন ও অসাড় অবস্থায় ফেলে চলে যায়। ভিডিওতে দেখা গেছে বাদীকে ঘিরে রেখে দুই অভিযুক্ত তাকে দেওয়ালের দিকে ঠেস দিয়ে রেখেছেৃতিনি অমনোযোগী হয়ে মুখ বিকৃত করে রেখেছেন আর চোখ বন্ধ করে রয়েছেন। তবে এইসব আলামতকে স্পেনের বিদ্যমান আইনে ধর্ষণ প্রমাণের জন্য পর্যাপ্ত মনে করা হয়নি। তাই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কেবল যৌন নিপীড়নের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, ধর্ষণে নয়।স্পেনের বিদ্যমান আইনে ধর্ষণের প্রমাণ হিসেবে সহিংসতা ও হুমকিধামকির প্রমাণ হাজির করা আবশ্যক। তবে দেশটির এক প্রভাবশালী স্থানীয় দৈনিককে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সহিংসতা ও হুমকিধামকির প্রমাণ হাজিরের কাজটি মোটেও সহজ নয়।  সংবাদপত্রটি লিখেছে, এটা  গুরুতর প্রশ্ন হাজির করেছে। প্রশ্নটি হলো, হত্যাকা-ের শিকার না হয়ে কেবল ধর্ষিত হওয়ার মতো ঘটনা এড়াতে নারীদের আর কী করতে হবে। ধর্ষণের ঘটনাকে যৌন স্বাধীনতার ওপর ভয়াবহ আক্রমণ হিসেবে স্বীকৃত করতে এবং ধর্ষকদের লঘু শাস্তির দায়মুক্তির সংস্কৃতির অবসানে আর কতো লড়তে হবে নারীদের।স্পেনের বিদ্যমান যৌন নিপীড়নবিরোধী আইনের কথা বলতে গিয়ে মাদ্রিদের সায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক মরিয়ম মারির্টনেজ বাসকুনান ফরাসি বার্তা সংস্থাকে বলেন, ওই আইনে সহিংসতা ধারণায়িত হয়েছে পুরুষের অভিজ্ঞতাকে উপজীব্য করে। স্থানীয়ভাবে স্যান ফার্মিন নামে নামের ষাড় দৌড়ের প্রতিযোগিতা যে রাস্তায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেখানেই শনিবার বিক্ষোভ করেছেন ৩০ হাজার বিক্ষোভকারী। বিক্ষোভকারীরা নারীর জন্য অবমাননাকর পুরো আইনি ব্যবস্থাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছেন। এক নারী বিক্ষোভকারী স্থানীয় রেডিও স্টেশন আরটিভিইকে বলেছেন, ‘বিচার এখনও পুরুষতান্ত্রিক। এটা আমাদের দোষারোপ করে আর আমরা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ি।’ ‘কেউ আমাদের মতামতের বিচার করে না’ লেখা ব্যানারের সামনে জড়ো হয় হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। এই বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে বাস্ক এলাকার হোনদারিবিয়া সংঘের চার্চের নারীরাও। ওই সাজার বিরুদ্ধে বলছেন তারাও। তাদের এক প্রতিনিধি সিস্টার মারিলুজ বলেন, এই রায়ের সমালোচনায় চার্চের একটি কণ্ঠ হতে চাই আমরা। ব্যাপক এই বিক্ষোভের মুখে ধর্ষণ সংক্রান্ত আইন পর্যালোচনার কথা জানিয়েছে স্পেনের রক্ষণশীল সরকার। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম লিখেছে, ধর্ষণের অপরাধ সংক্রান্ত ধারাগুলো পর্যালোচনা করে দেখবেন তারা।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button