দেশ ও জনগণকে আল্লাহ হেফাজত করুন : আল্লামা শফী

Shofiদেশে পাখির মতো মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। প্রতিবাদী নিরীহ জনতার ঘরবাড়ি ধ্বংস করে নারী ও শিশুদের বাস্তুহারা করা হচ্ছে। নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ হামলা-মামলা ও দমন-পীড়নে ঘরে-বাইরে কোথাও মানুষের নিরাপত্তা নেই। মানুষের মৌলিক অধিকার বলতে এখন কিছুই অবশিষ্ট নেই, সারা দেশ আজ কারাগার। কৃষক, দিনমজুর, দোকানি থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী শিল্পপতিসহ কারো মুখে হাসি নেই। দেশে বিরাজমান এমন পরিস্থিতির উল্লেখ করে এর থেকে পরিত্রাণের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানিয়ে মুনাজাত ও দোয়া পরিচালনা করেছেন দেশের প্রবীণ ও শীর্ষ আলেম, হেফাজতে ইসলামের আমির শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
গতকাল শুক্রবার বাদ আসর দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসার ‘জামে বায়তুল আতিক’ প্রধান জামে মসজিদে হেফাজত ঘোষিত এ মুনাজাত ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। মুনাজাতে হাজার হাজার উলামা-মাশায়েখ, মাদ্রাসা ছাত্র ও তৌহিদি জনতা অংশ নেন। মুনাজাতে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ শরিক হন।
মুনাজাতের আগে আল্লামা শাহ আহমদ শফী সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেন, দেশে বর্তমানে মানুষের মতপ্রকাশসহ সব অধিকার হরণ করা হয়েছে। দমন-পীড়ন ও জুলুম-অত্যাচারের প্রতিবাদসহ কাউকে কিছু বলতে দেয়া হচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের আমদানি-রফতানিসহ ব্যবসায়-বাণিজ্য কলকারখানা সব কিছুই বন্ধ। কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারছেন না। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা না থাকার কারণে দোকানিদের বেচাবিক্রি নেই। প্রতিদিন পাখির মতো মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। যারা মতপ্রকাশের অধিকারের জন্য আন্দোলন-প্রতিবাদ করছেন, তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়ার মতো চরম নৃশংসতাও চলছে দেশে। এসব অসহায় পরিবারের নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা আজ খোলা আকাশের নিচে চরম আতঙ্কে অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। স্বাধীনতার পর থেকে দেশ এতটা ভয়াবহ ও নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতিতে পড়েনি। যারা নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন, তারা নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা ভুলে গিয়ে নাগরিকদের টার্গেটে পরিণত করছেন। তিনি বলেন, আজ উলামায়ে কেরামকে পবিত্র কুরআন হাদিসের কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না। ওয়াজ মাহফিল, তাফসির মাহফিল ও ইসলামী সম্মেলন করতে দেয়া হচ্ছে না। অথচ ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদিদের জামাই আদরে ইসলাম ও শান্তিশৃঙ্খলা বিরোধী কাজের সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। একটা সভ্য ও স্বাধীন দেশে এমন অবস্থা চলতে পারে না।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে হেফাজত আমির বিকেল সাড়ে চারটায় মহান আল্লাহর দরবারে আবেগঘন মুনাজাতে বলেন, হে আল্লাহ! আমরা নিরীহ আলেম সমাজ, মাদরাসার ছাত্রসহ তৌহিদি জনতা আপনার দরবারে হৃদয়ের গভীর আকুতি নিয়ে ফরিয়াদ জানাচ্ছি, জালেমের জুলুম থেকে দেশের মানুষের জানমালকে হেফাজত করুন। দেশে শান্তিপ্রতিষ্ঠা করে দিন। যারা শান্তির বিরুদ্ধে, জনগণের মৌলিক অধিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, যারা অন্যায়ভাবে নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে, ঘরবাড়ি ভেঙে দিচ্ছে, নারী ও শিশুদের বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে, আপনার কুরআন-হাদিসের প্রচার-প্রসার করতে দিচ্ছে না, আপনি কুদরতিভাবে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। এ দেশ ও জাতিকে রক্ষা করুন। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হেফাজত করুন। হে আল্লাহ, যারা অন্যায়-অবিচার ও জুলুম অত্যাচারের বিরুদ্ধে এবং ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য অন্যায়ভাবে হত্যার শিকার হচ্ছে, তাদের শহীদ হিসেবে কবুল করুন। হে আল্লাহ! আপনার দরবারে আমরা হাজার হাজার মজলুম আলেম ও তৌহিদি জনতা ফরিয়াদ জানাচ্ছি যে, গায়েবীভাবে এই ভয়াবহ জুলুম-অত্যাচারের অবসান করে শান্তি কায়েম করুন। এই জাতিকে, এই দেশকে জুলুম-অত্যচার ও নিপীড়নের হাত থেকে রক্ষা করুন। বিভেদে জড়িত সব পক্ষকে সঠিক বুঝ দান করুন। যারা দ্বীন-ইসলামের বিরুদ্ধে, দেশের বিরুদ্ধে, শান্তি-শৃঙ্খলা ও ন্যায়ের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, গায়েবীভাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। স্বাধীনতার পর থেকে দেশ এত ভয়াবহ সঙ্কট ও নিরাপত্তাহীনতার মুখে পড়েনি। মুনাজাতের সময় দারুল উলুমের প্রধান মসজিদসহ আশপাশের বিভিন্ন ভবনে অবস্থানকারী মুনাজাতরত হাজার হাজার উলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদি জনতার মধে আমিন আমিন রবে কান্নার রোল পড়ে যায়।
দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির আল্লামা হাফেজ শামসুল আলম, কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি জসীম উদ্দীন, মাওলানা ফোরকান আহমদ, মাওলানা আহমদ দীদার, প্রচার সম্পাদক মাওলানা আনাস মাদানি, সাহিত্য সম্পাদক মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী, যুগ্মমহাসচিব মাওলানা মুঈনুদ্দীন রুহী, আমিরের প্রেস সচিব মাওলানা মুনির আহমদ, মাওলানা মীর মুহাম্মদ ইদরিস, আমিরের একান্ত সচিব মাওলানা শফিউল আলম, মাওলানা এনামুল হক, মাওলানা আলমগীর, আলহাজ আহসান উল্লাহ প্রমুখ।
লোকমুখে ও সংবাদমাধ্যমে গতকালের দোয়ার খবর প্রকাশ হওয়ায় আসরের নামাজের নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই সুবিশাল ৩তলা বিশিষ্ট বায়তুল আতিক মসজিদ ভবন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। মসজিদের সামনের ছেহেনসহ পাশের ছাত্রাবাস ও শিক্ষাভবনেও অনেককে বসে মুনাজাতে শরিক হতে দেখা যায়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button