সিরিয়ায় অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব পাস

unপরাশক্তিগুলোর সমঝোতার অভাবে কয়েক দফা পেছানোর পর অবশেষে  জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সিরীয় অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে,  ত্রাণ ও চিকিৎসা সরবরাহে ৩০ দিনের অস্ত্রবিরতির ব্যাপারে একমত হয়েছে সংস্থাটির স্থায়ী-অস্থায়ী ১৫ সদস্য রাষ্ট্রই। তবে এখনও সিরিয়া পরিস্থিতির জন্য পরস্পরকে দুষছে  রাশিয়া আর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তি। এদের স্বার্থগত দ্বন্দ্বের কারণেই  অস্ত্রবিরতির ওপর ভোটাভুটি পিছিয়ে যাচ্ছিলো বারবার। নিরাপত্তা পরিষদ শেষ পর্যন্ত প্রস্তাব পাস করলেও পারস্পরিক দোষারোপ অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র।  পাস হওয়া প্রস্তাব তাই কটোটুকু কাজে আসবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।  বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বলছে, অস্ত্রবিরতি প্রস্তাবের পরও থামেনি বোমা হামলা।
১ হাজার ২৪৪ সম্প্রদায়ের ৫৬ লাখ মানুষের মানবিক সহায়তার স্বার্থের কথা উল্লেখ করে নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির একটি খসড়া প্রস্তাব এনেছে কুয়েত ও সুইডেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে রাশিয়ার স্বার্থগত বিরোধে সেই প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি পিছিয়ে যায় কয়েকবার।  যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস এরইমধ্যে ৫শ  জনের প্রাণহানির খবর দিয়েছে। আর দুই হাজার ৩৩০ জনের বেশি মানুষের আহত হওয়ার কথা জানিয়েছে তারা। এছাড়া বিভিন্ন ভবনের ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে নিখোঁজ মানুষের সংখ্যা নিরুপন করা যায়নি। বেশির ভাগ বাসিন্দা রূপান্তরিত হয়েছে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুতে।
কুয়েত ও সুইডেনের আনা অস্ত্রবিরতি প্রস্তাবে বৃহস্পতিবার থেকে কয়েকবার চেষ্টা করা হলেও ভোটাভুটি পিছিয়ে যাচ্ছিলো। শনিবার প্রস্তাবটি  নিরাপত্তা পরিষদে অনুমোদন পেলেও এর কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। প্রস্তাব পাশ হওয়ার পরও বিমান হামলা চলছে বলে অভিযোগ মানবাধিকার কর্মীদের। চলছে পারস্পরিক দোষারোপও। সিরিয়ার মিত্র রাশিয়া এই প্রস্তাবে পরিবর্তন চাচ্ছিলেন। আর পশ্চিমা কূটনৈতিকদের অভিযোগ সময় নষ্ট করছে মস্কো। প্রস্তাবের খসড়ায় বলা হয় আইএস, আল-কায়েদা ও আল নুসরা ফ্রন্টের বিরুদ্ধে এই অস্ত্রবিরতি কার্যকর হবে না। নুসরা ফ্রন্ট মূলত আগে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট ছিল। এরপর অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে মিলিত হয়ে নাম রাখে হায়াত তাহরির আল শাম।
খসড়ায় অন্যান্য গ্রুপকে অন্তর্ভূক্ত করার আহ্বান জানায় রাশিয়া। যারা ওই গোষ্ঠীকে সহায়তা করছে তাদের বিরুদ্ধেও অস্ত্রবিরতি চায় না মস্কো। এদিকে জাতিসংঘের নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি বলেছেন, তারা অস্ত্রবিরতি চান। তবে বাশার আল আসাদ সেটা মানবেন কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি। তিনি অভিযোগ করেন, রাশিয়া এই সমঝোতা নিয়ে বিলম্বিত করেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই প্রস্তাব পাশ হতে তিনদিন সময় লেগেছে। এই সময় অনেক মা’ই তার সন্তানকে হারিয়েছে।
জাতিসংঘের ফ্রান্সের প্রতিনিধি ফ্রাঁসোয়া দিলাত্রে বলেছেন, এই পদক্ষেপ অনেক দেরী হয়ে গেছে। এই ব্যর্থতা জাতিসংঘেরই অবসান ডেকে আনতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। জাতিসংঘে নিযুক্ত রুশ দূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, কী কারণে এই সংকট তৈরি হয়েছে সেটা অস্বীকার করে অস্ত্রবিরতি সম্ভব না।  এছাড়া পূব ঘৌটা নিয়ে মিথ্যা দাবিরও বিরোধিতা করেছেন তিনি। বলেন, ‘আমরা জানি সিরিয়ায় এখন মানবেতর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আমাদের খুব দ্রুতই সেখানে ব্যবস্থা নিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুধু পূর্ব ঘৌটায় কাজ করলে হবে না। পুরো দেশে এই কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।
বিভিন্ন মানবাধীকার সংস্থা ও জাতিসংঘের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির জন্য বার আহ্বান জানানোর পরও নিরাপত্তা কাউন্সিল গত বৃহস্পতিবার থেকে চেষ্টা করেও যুদ্ধবিরতির জন্য সবাই ঐক্যমতে পৌঁছুতে পারেনি।
জাতিসংঘে মার্কিন দূত নিকি হ্যালি এক বিবৃতিতে বলেন, সেখানে শতশত মায়ের সন্তান মারা গেছে, কতশত মানুষ তাদের ঠিকানা হারিয়েছে তাই যুদ্ধবিরতি খুব শিঘ্রই কার্যকর করতে হবে যদিও তিনি সিরিয়া সরকারের প্রতি তা বাস্তবায়নে সন্দেহ পোষণ করেছেন। তিনি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদ সরকারের প্রধান মিত্র রাষ্ট্র রাশিয়ার সময় ক্ষেপণের জন্যই যুদ্ধবিরতি অন্তত ৩দিন বিলম্বিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। -বিবিসি

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button