ব্যায়ামে কমে রক্তচাপ

exerciseউচ্চ রক্তচাপ আমেরিকার মত দেশে তিন জনে একজন। উচ্চরক্তচাপের রোগী যে কত তা গুণে শেষ করা কঠিন। উচ্চরক্তচাপ হলে বাড়ে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি। ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর আহার হলো উচ্চরক্তচাপ প্রতিরোধের গুরুত্বপূর্ণ উপায়। উচ্চ রক্তচাপ থাকলেও ব্যায়াম করলে উচ্চরক্তচাপের ওষুধের কার্যকারিতা অনেক বেড়ে যায়।
উপভোগ্য হোক ব্যায়াম: যে সব ব্যায়ামে মজা লাগে সেসব ব্যায়াম সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে করলে ভালো হয়। দৈনন্দিন গৃহকর্ম, বাগান করা, জানালা ধোঁয়া, সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠা, মুদির দোকান থেকে জিনিসপত্র বহন করে আনা, হাঁটা, সাইকেল চালানো সবই আনন্দের ব্যায়াম, হৃদহিতকরও বটে। গাড়ি কিছু দূরে পার্ক করে হেটে অফিস যাওয়া, বাসে গেলে এক স্পট আগে নেমে হেটে অফিস যাওয়া বেশ হিতকর।
জিমে যেতে পারেন কেউ কেউ: জিমে ব্যায়াম করতে হবে এমন নয়। তবে অনেকে জিম পছন্দ করেন। জিমে ব্যায়াম করতে স্বস্তিবোধ করেন। ভালোও লাগে। ট্রেনার জিমের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে শেখাবেন যাতে আহত না হতে হয়।
হার্টকে করুন মজবুত: সাধারণ ভার উত্তোলন, ওজন যন্ত্রপাতি এসব দিয়ে বারবেল, মুগুর এসব দিয়ে শক্তিশালী করার জন্য বা রেজিস্ট্যান্স ব্যায়াম বা পেটের ব্যায়াম, উঠ-বস কু-লী পাকানো এসব ব্যায়াম সপ্তাহে দুই/তিনদিন করলে হৃদস্বাস্থ্য উন্নত হয়। রেজিস্ট্যান্স ব্যায়ামে রক্তচাপ কমে, পেশি বাড়ে, বাড়ে বিপাক হার।
ব্যায়ামে শরীর খুব গরম হয়, সাঁতার করুন: হার্টের পাম্পকর্ম বাড়ানোর জন্য ও ব্যায়াম হলো রক্তচাপ কমানোর দাওয়াই। তবে গরম সহ্য না হলে সাঁতার কাটুন ৩০ মিনিট। কমে যাবে শরীরে চলমান হরমোন এড্রিনালিন এবং শিথিল হবে রক্তনালী। সাতার কাঁটলে নাড়িঘাতও হ্রাসপায়, কমে যায় রক্তচাপও।
কতটুকু ব্যায়াম চাই: রক্তচাপ মাঝারি বাড়লে ৩০ মিনিট দ্রুত হাটা বেশ উপকারী। ওষুধ তখন নাও লাগতে পারে। যদি উচ্চরক্তচাপের ইতিমধ্যে ওষুধ খাওয়া হয়ে থাকে তাহলে ৩০ মিনিট মাঝারি ব্যায়াম অর্থাৎ ব্যায়াম করে হৃদঘাত হার বাড়িয়ে, ঘেমে নেয়ে উঠা সম্ভব হলে, ওষুধের কার্যকারিতা বেশ বেড়ে যায়। উচ্চরক্তচাপ না থাকলেও শরীরর্চা করলে রক্তচাপ থাকে স্বাভাবিক।
শুরু করুন: ব্যায়াম করা হয়নি তেমন। চর্চানেই; ধীরে ধীরে শুরু হোক। ধাতস্থ হলে সময় বাড়ানো যাবে। মজা লাগে এমন ব্যায়াম প্রথমে ১০-১৫ মিনিট, যেমন হাটা, ট্রেডমিল বা সাইকেল চালানো। এভাবে প্রতিদিন একটু একটু করে সময় বাড়িয়ে পৌঁছে যান দিনে আধ ঘন্টার ব্যায়াম। ব্যায়ামে নতুন হলে ধীরে সুস্থে শুরু করা ভালো। রয়ে সয়ে। প্রথমে কম থেকে মাঝারি ধরণের ব্যায়াম যেমন যোগ ব্যায়াম, সাইকেল চালানো, বাগান করা, হাটা, পানিতে জলকেলি। এরপর বাড়ান গতি ও সময়।
ব্যায়াম হোক সুবিধার ও স্বস্তির ব্যায়াম যেন দিনরাতে কর্মব্যস্ততার সঙ্গে মানানসই হয়। বাচ্চারা যখন খেলে অথবা স্কুলে, কাজের আগে বা পরে, দুপুরের খাওয়ার বিরতিতে করা যায় ব্যায়াম। যদি বাড়ি থেকে একেবারে বের না হওয়া যায় তাহলে ঘরে নিশ্চলবাইক বা ট্রেডমিলে ব্যায়াম। সন্ধ্যার খবর দেখতে দেখতে সে ব্যায়াম করা যায়।
মিনি ব্যায়ামও চলে: ১০ মিনিটের মিনি ব্যায়াম, কর্মব্যস্ত দিনের ফাকে হোক না এমন ব্যায়াম দিন জুড়ে। যেমন যথাস্থানে জগিং ১০ মিনিট, ক্যালসথেনিকস্ বা ঘর দোয়ার মোছা। তিনবার দশ মিনিটের ব্যায়াম দিনে আধ ঘন্টা, হৃদস্বাস্থ্যর জন্য ভালো।
ঘরেও গড়া যায় জিম: ব্যায়াম করতে চান তবে জিমে যেতে পারেন না। ঘরেও তৈরি করুন জিম। ঢালু একটি বেঞ্চ, ফ্রি ওয়েট, মুগুর, ডামবেল, ব্যায়াম ব্যাঙ্গ বা টিউব, যোগাসনের ব্যবস্থা ও বল।
সিন্দুকে রাখুন বা কোনও লকার বা ক্লজেটে। একটি ট্রেডমিল বা নিশ্চল বাইক রাখুন শরীরের মেদ পোড়াবার জন্য বা ধৈর্য্য বাড়ানোর জন্য।
গরম হন, শীতল হন: আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশনের মতে যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে এরা ব্যায়ামের আগে শরীর গরম করলে এবং ব্যায়ামের পর শরীর শীতল করলে ভালো। এতে হৃদঘাত হার ক্রমে ক্রমে বাড়ে ও ক্রমে ক্রমে কমে। ট্রেডমিলে বা যথাস্থানে ১০ মিনিট দৌড়ানো ওয়ার্ম আপের জন্য ভালো। শীতল হওয়ার জন্যও।
হৃদঘাত হার মাপার ঘড়ি ব্যবহার করুন: হার্টরেট ওয়াচ দিয়ে লক্ষ্য করা যায়, দ্রুত নাডির স্পন্দন। সার্টের নিচে বুকে বেধে ফেলুন ব্যান্ডটি। ব্যায়ামের সময় ঘড়ি নজর করলে জানা যাবে হৃদঘাত হার। ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিন টার্গেট হার্ট রেট কত হবে আপনার।
ওষুধ ও হৃদঘাত হার: হার্টের কিছু ওষুধ যেমন বিটা ব্লকারস্ বা ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকারস হ্রাস করতে পারে হৃদঘাত হার। তাই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া ভালো ব্যায়ামের আগে।
জেনে নিন নিরাপত্তা টিপস: যে ব্যায়ামই করুন না কেন, নিজের সীমাবদ্ধতা জানা ভালো। ব্যায়াম বা শরীরচর্চায় আহত হলে, একে তখন বন্ধ করা ভালো। মাথা ঝিমঝিম করলে, বা বুকে, বাহুতে, গলায় অস্বস্তি লাগলে বন্ধ করা ভালো।  ভাপসা গরমে ধীরে ব্যায়াম ভালো।
ডাক্তার দেখাবেন নিয়মিত: ডাক্তারকে দিয়ে চেক আপ। শরীরর্চ্চা শুরুর আগে ডাক্তারের অনুমতি নিতে হয়, যদি কেউ হন শুয়ে বসে জীবন যাপনে অভ্যস্ত লোক, খুব ভারি ওজনের বা হৃদরোগের বা ক্রনিক রোগের খুব ঝুঁকি সম্পন্ন মানুষ।
ব্যায়ামের পরও ড্যাশ ডায়েট: ড্যাশ ডায়েট অনুসরণ করে সিসটোলিক রক্তচাপ ৮-১৪ পয়েন্ট কমানো যায়। ড্যাস ডায়েট মূলত: ২০০০ ক্যালোরি ডায়েট, ফল সবজি, গোটাশস্য, ডাল, বিচি, কম চর্বি দুধ সমৃদ্ধ খাদ্য বিধি। ৫০ ঊর্ধ্ব মানুষের জন্য সিসটোলিক চাপ ১৪০ এর বেশি হলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি, ডায়াসটেলিক (নিচেরটা) চাপের তুলনায়।
হ্রাস করুন ১০ পাউন্ড ওজন : দেখা গেছে ওজন মাত্র ১০ পাউন্ড কমালে, যদি ওজন বেশি হয়, তাহলে রক্তচাপ কমানো যায়। তাই নিতে হবে কম ক্যালোরি। এ জন্য ডাক্তার ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন। লবণ দিনে ২৪০০ মিলিগ্রাম মাত্র, অর্থাৎ ১ চামচ লবণ।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরী সার্ভিসেস বারডেম, ঢাকা।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button