মানব পাচারের সহজ শিকার বাংলাদেশীরা

জায়েদা আখতার নামক জনৈক বাংলাদেশী যুবতী একটি আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের ফাঁদে পড়েন এবং ২০২০ সালের শেষদিকে তাকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত এক বছরের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি দেশে ফিরতে সক্ষম হন। এই দুঃসহ অভিজ্ঞতা তিনি কখনো ভুলতে পারবেন না।
এক শিশুপুত্রের মাতা ও গৃহবধূ ৩০ বছর বয়সী জায়েদা রাজধানী ঢাকার উপকন্ঠ সাভারে থাকতেন। মানব পাচারকারী চক্রের এক স্থানীয় দালাল জায়েদাকে নানা প্রলোভন দেখায় এবং তাকে যুক্তরাজ্য কিংবা কানাডায় পাঠানোর নিশ্চয়তা প্রদান করে। তাকে বলা হয়, সেখানে যেতে পারলে সে তার পরিবারের জন্য বিপুল পরিমান অর্থ উপার্জন করতে পারবে।
জায়েদা আখতার জানায়, দারিদ্র থেকে মুক্তি এবং একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের আশায় তার পিতামাতা ও স্বামী তার বিদেশ গমনে রাজী হয় এবং ঐ স্থানীয় দালালকে এজন্য সাড়ে ৩ লাখ টাকা (৩২০০ পাউন্ড) প্রদান করে। জায়েদা বলেন, স্থানীয় দালাল সাভারের বাসিন্দা নিলু বেগম তাকে ভারতে নিয়ে যায়। সে তাকে বলে যে, কানাডা বা যুক্তরাজ্যে যাওয়ার আগে তাদেরকে ডকুমেন্ট প্রস্তুত করতে হবে এবং ভারতে থাকতে হবে। জায়েদা বলেন, ‘তারা আমাকে ভারতের ব্যাঙ্গালোরে একটি আবাসিক ভবনের একটি ফ্লাটে রাখে। আমি সেখানে সন্দেহজনক লোকজন দেখতে পাই। আমার এজেন্ট বা দালাল একটি হোটেলে আমাকে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে চাপ দেয়। আমি তা করতে অস্বীকার করি। ফলে তারা আমার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। কিন্তু আমি তাদের কথা রাজী হইনি এবং কোনভাবে বাংলাদেশে আমার পরিবারকে সবকিছু জানাই।’
জায়েদা আরো বলেন, ‘আমি ঐ ফ্লাটে ১৩ দিন ছিলাম এবং এসময় তারা আমাকে কোন খাবার দেয়নি। এসময় আতংকে এক মুহূর্তও ঘুমাতে পারিনি। আমি অঝোরে শুধু কাঁদছিলাম। শেষ পর্যন্ত আমার পরিবার স্থানীয় দালালের সহযোগী আজিজুল ও কাদেরকে আরো দেড় লাখ টাকা প্রদান করেন। এরপর তারা আমাকে বাংলাদেশের সীমান্তের নিকটে আমাকে ফেলে যায়। সেখান থেকে বিএসএফ আমাকে একটি ভারতীয় কারাগারে প্রেরন করে। তারপর ভারতের দু’টি কারাগারে ১১ মাস বন্দী অবস্থায় কাটাই।’ শেষে তার পরিবার বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষকে অবগত করলে সরকারী সহায়তায় তিনি দেশে ফিরতে সক্ষম হন।
বিশ্লেষকদের মতে, জায়েদা আখতারের মতো প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশীকে এধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তাদের মতে, দারিদ্র, বেকারত্ব, বিদেশে উন্নত জীবনের আকাংখা ও অজ্ঞতার কারনে অনেক বাংলাদেশী সহজেই মানব পাচারের শিকারে পরিনত হচ্ছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button