নিউইয়র্কের সব মসজিদকে সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে মুসলমানরা ক্ষুব্ধ

নিউইয়র্কের সকল মসজিদ ও ইসলামী সংগঠনকে নগরীর পুলিশ বিভাগ সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করায় মুসলমান সমাজ ক্ষুব্ধ হয়েছে। ৩৮-বহুবছরের সহযোগিতায় গড়ে ওঠা আস্থার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে বলে মনে করছে। নিউইয়র্ক আরব-আমেরিকান এসোসিয়েশনের লিন্ডা সানসাওয়ার ক্ষুব্ধ কণ্ঠে মেট্রো পত্রিকাকে বলেন, আমরা পুলিশ কমিশনার রে কেলিকে আমাদের মসজিদ ও প্রতিষ্ঠানে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছি। কিন্তু তিনি ঢুকলেন পেছন দরজা দিয়ে। পুলিশের এসোসিয়েশনের মধ্যে অনুপ্রবেশের চেষ্টায় ক্ষুব্ধ হয়ে সানসাওয়ার বলেন, তার সংগঠন যেখানে অনেক বছর ধরে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ বিশেষ করে কমিশনার কেলির সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করে এসেছে সেখানে তখন অভিযোগ কেন।
বার্তা সংস্থা এপির প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, পুলিশ নিউইয়র্কের সব মসজিদ সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত বলে অভিহিত করেছে। রিপোর্টে বলা হয়, মুসল্লি ও ইমামদের পেছনে গোয়েন্দা পুলিশ ও গুপ্তচর ব্যবহার এবং ইমামদের খুতবা রেকর্ড করে তা থেকে সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে বলে নিউইয়র্ক পুলিশ জানায়, কোন রকম অপরাধমূলক কর্মকা-ের প্রমাণ ছাড়াই তারা এটা করেছে। অথচ এফবিআই পর্যন্ত মসজিদে এ ধরনের গোয়েন্দাগিরির পন্থা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়।
এপিকে যে নথি দেখানো হয়, তাতে দেখা যায়, নিউইয়র্কের পুলিশ বিভাগ ৯/১১ এর পর অন্তত এক ডজন সন্ত্রাসবাদ তদন্ত প্রতিষ্ঠান খুলেছে। যেগুলো পুলিশের অনুপ্রবেশে সাহায্য করে এবং গোপন সন্ত্রাসী সেলে তদন্ত করতে সহযোগিতা করে। পুলিশ এসব প্রতিষ্ঠানকে সময় ও সম্পদ দেয়া সত্ত্বেও এ পর্যন্ত কোন মসজিদ বা ইসলামী সংগঠনের সঙ্গে সন্ত্রাসের জড়িত থাকার কখনো কোন অভিযোগ উত্থাপন করা হয়নি। পুলিশের নেপেন নথি ও সাক্ষাৎকার থেকে এ তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ ছদ্মবেশে পুলিশ অফিসারদের মসজিদের মধ্যে পাঠিয়ে এবং মুসলমানদের আবাসস্থলে গুপ্তচর ঢুকিয়ে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কৌশল গ্রহণের অনুমতি দিয়েছে। ব্রুকলিনে আরব-আমেরিকান গ্রুপের মতো একটি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানেও এটা করা হয়েছে। সানসাওয়ার বলেন, আমরা নিউইয়র্কের মুসলমানদের নাগরিক অধিকার লংঘনের ঘটনায় ক্লান্ত। ৯/১১ এর হামলার ঘটনার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমানরা হয়রানির শিকার হচ্ছে। তাদের মানবাধিকার লংঘন করা হচ্ছে অহরহ। শুধুমাত্র ধর্মবিশ্বাসের কারণেই এগুলো ঘটছে। অথচ দেশটিতে মতপ্রকাশ বা ধর্ম পালনের অবাধ স্বাধীনতা আছে বলে দাবি করা হয়।
এর আগে ২০১১ সালে এপির ফাঁস করা এক রিপোর্টে মুসলমানদের মধ্যে গুপ্তচর ঢুকিয়ে নিউইয়র্ক পুলিশের তথ্য সংগ্রহের খবর প্রকাশিত হওয়ায় মুসলিম সমাজ তখন ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল। এপির রিপোর্টে বলা হয়, নিউইয়র্ক পুলিশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দৈনন্দিন কাজকর্মের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ এবং মসজিদ ও মুসলিম ছাত্র সংগঠনগুলোর ওপর গুপ্তচরের সাহায্যে নজরদারি চালাচ্ছে। সানসাওয়ার বলেন, নিউইয়র্কের পুলিশ বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বলে মুসলিম সমাজ মনে করে। আমি নিউইর্কের একজন বাসিন্দা এবং আমি একজন আমেরিকান।
তিনি বলেন, আমি একটি সমাজসেবামূলক  সংস্থা চালাই এবং সরকার যা করতে পারে না সে কাজ আমি করি। আমি নিউইয়র্কের একটি পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের কল্যাণে কাজ করি এবং এ ব্যাপারে সক্ষমতা আছে। সানসাওয়ারের মতো নিউইয়র্কের আরব আমেরিকান এসোসিয়েশনের সভাপতি ড. আহমদ জাবের বলেন, এপির ফাঁস করা রিপোর্ট দেখে আমার মনে হয়েছে, আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাকতা করা হয়েছে। কারণ মুসলিম সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি এবং পুলিশ বিভাগকে সহযোগিতা করেছি।
জাবের ব্রুকলিনের স্টেট স্ট্রীটের দাউদ মসজিদেরও সভাপতি। এই দাউদ মসজিদকে একটি সন্ত্রাসী প্রতিষ্ঠান হিসাবে আখ্যায়িত  করেছে নিউইয়র্ক পুলিশ। নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের মুসলিম উপদেষ্টা পরিষদের একটি পদে জাবেরকে নিয়োগ করেছিলেন কেলি নিজে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে জাবের পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন। পরিষদের অন্য সদস্যরাও তারই পদাংক অনুসরণ করেন।
নিউইয়র্ক পুলিশের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ নতুন নয়। গত সেপ্টেম্বরে সিআইএ নিউইয়র্ক পুলিশের গোয়েন্দা সহযোগিতায় মুসলমানদের ব্যাপারে তদন্ত অভিযান চালিয়েছিল।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button