বিশেষ প্রতিবেদন

রাশিয়ার কাছে হারছে ন্যাটো !

Natoপরিস্থিতির পট পরিবর্তনে সবার তীক্ষ্ন নজর এখন সিরিয়ায়। বিশ্ব পরিসরে দীর্ঘদিনের ‘নীরব’ অবস্থান থেকে সরে এসে পুতিন যখন সিরিয়ায় বিমান হামলার অনুমতি দেন, এরপর সবাই নড়েচড়ে বসে। সিরিয়ায় আইএসের (আসাদবিরোধী বিদ্রোহী গ্রুপও রয়েছে) বিরুদ্ধেই মূলত বিমান হামলা পরিচালনা করছে রাশিয়া। এতে করে দীর্ঘদিনের মিত্র বাশার আল-আসাদকে সহায়তার পাশাপাশি নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনকে (ন্যাটো) আগাম সতর্কবার্তা দিয়ে রাখছে মস্কো। যে সতর্কবার্তার সোজাসাপ্টা মানে হলো, খুব শিগগিরই পরাজয় দেখবে ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ২৮ সদস্যের এই সংগঠনটি।
সিরিয়ায় রাশিয়ার প্রধান উদ্দেশ্যই হলো দেশটিতে নিজেদের শক্ত ঘাঁটি স্থাপন করা। এই ঘাঁটি স্থাপনের উদ্দেশ্য থেকে সিরিয়ায় আসাদবিরোধীদের ওপর বিমান হামলা শুরু করে রাশিয়া। কারণ, সিরিয়ায় ঘাঁটি স্থাপন করতে পারলে মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা তুলনামূলকভাবে সহজ হয়ে যাবে। একই সঙ্গে আমেরিকাসহ তার মিত্রদেরও ব্যতিব্যস্ত রাখতে পারবে। ইরান এবং সিরিয়াকে সঙ্গে নিয়ে তাই মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের প্রভাবশালী ভূমিকা তৈরির ওপর জোর দিচ্ছে রাশিয়া।
মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের প্রভাবশালী অবস্থান তৈরির পাশাপাশি আরেকটি কারণেও সিরিয়ায় অবস্থান করাকে যৌক্তিক মনে করছে রাশিয়া। সেটি হলো, ন্যাটোকে একহাত নেয়া। সিরিয়ায় পাকাপোক্ত অবস্থান নিলে ন্যাটোভুক্ত দেশ তুরস্ক নিশ্চিতভাবেই ক্রেমলিনের হাতের নাগালে চলে আসবে। একই সঙ্গে আমেরিকার অন্য মিত্র, যেমন ইসরাইল, জর্ডান এবং সৌদি আরবের ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখতে সক্ষম হবে। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সিরিয়ায় রাশিয়ার অবস্থান থাকলে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে আমেরিকার সিক্সথ ফ্লিটের (ষষ্ঠ নৌবহর) ওপর নজরদারি অব্যাহত রাখাটাও তুলনামূলক সহজ হয়ে আসবে। এতে অবশ্য ন্যাটোর সঙ্গে রাশিয়ার মুখোমুখি অবস্থানে আসার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যাবে, যেটা এক সময় ন্যাটো-রাশিয়া যুদ্ধেও রূপ নিতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান মজবুত করার পর প্রতিবেশী বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোতে স্বাভাবিকভাবেই নজর দেবে রাশিয়া। এস্তোনিয়া, লাটভিয়া এবং লিথুনিয়ার মতো দেশগুলোকে আবারো রাশিয়ার মূল স্রোতের সঙ্গে সংযুক্ত করতে চান প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন। কিন্তু লাটভিয়া এবং লিথুনিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানরা সেটা চান না। সঙ্গতকারণেই এসব দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ন্যাটোর কাছে সহায়তা চাইবেন। আর সমাধানের অংশ হিসেবে ন্যাটোও রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসবে। আলোচনায় সমাধান না হলে সেটা সামরিক সংঘাতের দিকেও যেতে পারে বলে ধারণা করছেন আমেরিকার ‘ন্যাশনাল রিভিউ’ ম্যাগাজিনের বিশ্লেষক ম্যাথিও কন্টিনেত্তি। তবে সে রকম কিছু হলে মস্কো ন্যাটোকে পরাজিত করতে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন তিনি। কারণ, সামরিক সংঘাতের মতো পরিস্থিতিতে আমেরিকার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সমর্থন পাবে না ন্যাটো। কেননা, বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোর স্বার্থ রক্ষায় এরই মধ্যে নিজেদের উদাসীনতা প্রকাশ করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। এর পেছনের কারণ হিসেবে ইরাক, আফগানিস্তান এবং সিরিয়ায় আমেরিকার বিশাল অঙ্কের ডলার ব্যয় হওয়াকেই বড় মনে করছেন অনেকে। কারণ, এই তিন দেশে সামরিক অভিযান চালাতে গিয়ে ভঙ্গুর অবস্থায় পড়েছে দেশটির অর্থনীতি। সে ক্ষেত্রে বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোতে ন্যাটোর হয়ে যুদ্ধের মতো পরিস্থিতিতে জড়াতে চাইছে না আমেরিকা। পক্ষান্তরে, যুদ্ধে জড়াতে আমেরিকার এই অনীহা ন্যাটোকে একটি নিশ্চিত পরাজয়ের দিকেই ঠেলে দিচ্ছে। কারণ, মস্কোর মুখোমুখি হয়ে সাফল্য পেতে চাইলে ন্যাটোর অবশ্যই আমেরিকার সবুজ সঙ্কেত পেতে হবে।
রাশিয়াবিরোধী পক্ষগুলো আমেরিকাকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে উৎসাহিত করলেও এই মুহূর্তে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে রাজি নন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। এ জন্য ওবামাকে একহাত নিয়েছে পুতিনবিরোধী বিভিন্ন দেশ এবং গোষ্ঠী। এর মধ্যে বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানরাও রয়েছেন। তারা চান, ন্যাটোর মাধ্যমে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যত দ্রুত সম্ভব কঠোর পদক্ষেপ নিতে। কিন্তু আমেরিকার প্রেসিডেন্ট একটু রয়েসয়েই এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার ওপর জোর দিচ্ছেন। ওবামার পাশাপাশি জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলও এখনই রাশিয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার বিপক্ষে। সে ক্ষেত্রে সংগঠন হিসেবে ন্যাটোর সীমাবদ্ধতা এবং অকার্যকারিতা সবার সামনে স্পষ্ট হচ্ছে বলে মনে করেন ম্যাথিও, যেটা পক্ষান্তরে মস্কোর সামনে একটি ভঙ্গুর ন্যাটোকেই দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। যে ন্যাটো রাশিয়ার মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়ানোর চেয়ে প্রতিপক্ষকে ভয়ঙ্কর এক শক্তি হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করছে। -ন্যাশনাল রিভিউ

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button