চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আবদুল জব্বারের বলী খেলা

১০৬তম আসরে চ্যাম্পিয়ন দিদার বলী

Baliballচট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের ১০৬তম বলী খেলায় কক্সবাজারের দিদার বলী ১২ বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে নগরীর লালদীঘি ময়দানে আয়োজিত বলী খেলায় পেশিশক্তির মোহনীয় ও অনুপম প্রদর্শনী দেখিয়ে  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অলি হোসেন বলীকে ৪ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডে পরাজিত করে দ্বাদশ বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হন রামুর দিদার বলী। বলী খেলায় নানান বয়সী বলীর লড়াই মুগ্ধ করেছে অগণিত দর্শকদের। বলি খেলার চ্যাম্পিয়ন দিদার বলীকে দেয়া হয় ট্রফিসহ নগদ ১৫ হাজার টাকা এবং রানার্সআপ অলি বলী পান ট্রফিসহ নগদ ১০ হাজার টাকা। খেলায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৭৮ জন বলী আসেন। এর মধ্যে প্রথম রাউন্ডে ৭৪ জন খেলায় অংশগ্রহণ করেছেন। এতে জয়ী হয়েছেন ৩৭ জন বলী। তাদের প্রত্যেককে দেয়া হয়েছে ৫শ টাকা করে পুরস্কার। দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলেছেন ৪ জন। এরমধ্যে রয়েছে নারায়ণগঞ্জের হাবিবুর রহমান, কক্সবাজারের রামুর দিদার, কক্সবাজারের মহেশখালীর হাশেম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অলি। সেমিফাইনালে মাত্র এক মিনিটে গতবছরের রানার্সআপ নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের হাবিবুর রহমান বলীকে পরাজিত করে ফাইনালে ওঠেন দিদার বলী। সেমিফাইনালে এ বছরের রানার্স আপ অলি বলী কক্সবাজার মহেশখালীর হাশেমকে পরাজিত করতে সময় নেন সাড়ে চার মিনিট।
ফাইনাল রাউন্ডে খেলতে আসেন দিদার ও অলি। অলিকে ৪ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডে ধরাশায়ী করে দ্বাদশ বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হন দিদার। জয়ের পর রামুর দিদার বলী তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, প্রত্যেকবার আশা নিয়ে আসি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য। এজন্য সারা বছর পরিশ্রম করে নিজেকে তৈরি করি শুধু লালদীঘির মাঠে সেরাটা প্রদর্শন করার জন্য। আল্লাহ তাই আমাকে বারবার জয়ী করেন।
তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে আমাকে একবার বহিষ্কার করা হয়েছিল। ওই সময় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে না পারার বেদনা এখনো আমাকে তাড়া করে বেড়ায়।  আমার ভাগ্য সব সময় সুপ্রসন্ন হয়।  অংশগ্রহণ করতে পারলেই জয়ী হতে পারি। পরাজয়ের পর রানার্সআপ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অলি বলী বলেন, এবারসহ তিনবারের মতো খেলতে এসেছি। জয়ী হতে না পারলেও রানার্সআপ হয়ে আমি আনন্দিত। ২০১২ সালে একবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। এবার পারিনি, আগামীবার ইনশাল্লাহ জয়ী হব। অলি বলেন, সেমিফাইনালে অনেক সময় নিয়ে খেলেছি। সাথে সাথে আবার ফাইনাল খেলা শুরু হয়েছে। আর দ্রুত খেলা শেষ করার জন্য পরিচালক বারবার তাগাদা দিচ্ছিলেন। তাই দিদার বলী আমাকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছে। শনিবার চট্টগ্রামের বদরপাতির আবদুল জব্বার সওদাগরের প্রচলন করা এ বলী খেলার ১০৬তম আসর উদ্বোধন করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররাফ হোসেন। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররাফ হোসেন, স্পন্সর প্রতিষ্ঠান বাংলালিংকের রিজিওনাল ডিরেক্টর মৌমেন মিত্র, আব্দুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শওকত আনোয়ার বাদল ও নগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার দক্ষিণ কামরুল আমিন। এদিকে ঐতিহাসিক জব্বারের বলী খেলাকে ঘিরে লালদীঘির মাঠ ও এর আশেপাশের এলাকায় চলছে বৈশাখী মেলা। দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী এ মেলা দেশের বৃহত্তম লোকজ উৎসবে পরিণত হয়েছে। উল্লেখ্য, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে এ অঞ্চলের যুবকদের সংগঠিত করতে ১৯০৯ সালের ১২ বৈশাখ চট্টগ্রামের লালদীঘির মাঠে প্রথম শুরু হয় বলী খেলা।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button