কী লিখতেন ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ধারালো অস্ত্রধারীদের আক্রমণে নিহত ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বিভিন্ন নামে একাধিক ব্লগ সাইটে এবং তার ফেসবুক প্রোফাইলে সমকালীন নানা বিষয়ে তার মতামত লিখতেন। এই হত্যার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, ‘ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দেবার কারণেই’ মি. রহমানকে হত্যা করার কথা বলেছে আটককৃত দৃ’জন। ফেসবুক ও অন্যান্য কিছু বাংলা ব্লগসাইটে দেখা গেছে, ওয়াশিকুর রহমানের লেখালিখির অন্যতম একটি বিষয় ছিল ইসলামসহ নানা ধর্মের সমালোচনামূলক প্রসঙ্গ, এবং তার বিভিন্ন মন্তব্য নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অন্য আরো অনেকের মধ্যে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হতো। ফেসবুকে ওয়াশিকুর রহমানের প্রোফাইলে নাম ছিল ‘ওয়াশিকুর বাবু’ । এ ছাড়া কয়েকটি ব্লগ সাইটে তিনি ‘কুচ্ছিত হাঁসের ছানা’, ‘গন্ডমুর্খ’, ‘বোকা মানব’ ইত্যাদি একাধিক নামে লিখতেন বলে জানা যাচ্ছে। মুক্তচিন্তা, সাম্প্রদায়িকতা, বিজ্ঞান, ধর্মীয় কুসংস্কার বা গোঁড়ামি – ইত্যাদি নানা বিষয়ে প্রায়ই লেখালিখি এবং তীক্ষ্ম মন্তব্য করতেন ওয়াশিকুর রহমান। এর আগে যে দুজন ব্লগার ধর্মীয় বিষয় নিয়ে লেখালিখির কারণে ধারালো অস্ত্রধারীদের আক্রমণে নিহত হন – সেই রাজীব হায়দার বা ‘থাবা বাবা’ এবং গতমাসে নিহত ব্লগার-লেখক অভিজিৎ রায় – এই দু’জনের মৃত্যুর পর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে একাধিকবার মন্তব্য করেন ওয়াশিকুর। তার সেই মন্তব্যগুলোর জবাবে আবার ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়াও আসে ফেসবুকে অন্য কিছু ব্যবহারকারীর দিক থেকে। ফেসবুকে ওয়াশিকুরের সবশেষ প্রোফাইল ছবিটিই ছিল ‘আই এ্যাম অভিজিৎ’ লেখা একটি পোস্টার। তাতে ইংরেজিতে আরো লেখা আছে ‘শব্দের মৃত্যু নেই’ । তিনি ‘এথিস্ট (নাস্তিক) বাংলাদেশ’ এবং ‘বাংলার শার্লি’ (ফরাসি ম্যাগাজিন শার্লি এবদু) সহ বেশ কয়েকটি ফেসবুক গ্রুপের সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া ‘লজিক্যাল ফোরাম’ নামের একটি অনলাইন ডিসকাশন ফোরামেরও সদস্য ছিলেন ওয়াশিকুর। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওয়াশিকুরের চাচাতো ভাই হেলাল সাংবাদিকদের জানান, ওয়াশিকুরের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর গ্রামে৷ তিনি দুবছর আগে তেজগাঁও কলেজ থেকে স্নাতক পাস করে মতিঝিলের ফারইস্ট এভিয়েশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন৷ নিহতের পিতার নাম টিপু সুলতান৷ ওয়াশিকুর তেজগাঁও বেগুনবাড়ি দিপীকার মোড় এলাকায় থাকতেন৷ ফারইস্ট এভিয়েশনের মালিক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী জানান, ওয়াশিকুর তাদের প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন৷ বাংলাদেশে ধর্মীয় প্রসঙ্গ নিয়ে সমালোচনামূলক লেখালিখির কারণে আক্রমণের শিকার হওয়ার ঘটনা আগেও ঘটেছে। ২০০৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে বাংলা একাডেমির বইমেলার বাইরে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই তিনি জার্মানিতে মারা যান। ২০১৩ সালে একই ধরণের আক্রমণে নিহত হন আহমেদ রাজীব হায়দার – যিনি ‘থাবা বাবা’ নামে ব্লগ লিখতেন। এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলা একাডেমির বইমেলা থেকে ফেরার পথে ধারালো অস্ত্রধারীদের আক্রমণে নিহত হন ব্লগার অভিজিৎ রায়। তার স্ত্রী রাফিদা আহমদ মারাত্মকভাবে আহত হন। এছাড়া আক্রান্ত হয়ে প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন আরো একজন ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন। ২০১৩ সালেই ‘নাস্তিক-ব্লগারদের বিরুদ্ধে’ আন্দোলন করে বাংলাদেশে সবার নজর কাড়ে ‘হেফাজতে ইসলাম’ নামে মাদ্রাসাভিত্তিক একটি সংগঠন। – বিবিসি

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button