শানে রেসালাত সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে আল্লামা শফী

আল্লাহ ও রাসূলকে কটূক্তিকারীদের স্থান নেই বাংলাদেশে

Shofiদেশের শীর্ষ আলিম, বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাক) চেয়ারম্যান, শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী বলেছেন, নাস্তিকদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা থাকবে তাদের তৌহিদি জনতারা ইমানের দাবি ১৩ দফা মানতে হবে। যারা ১৩ দফা মানবে তারা আমাদের বন্ধু। যারা মানবে না তারা ইসলামের দুশমন। নাস্তিকতা ও ধর্মদ্রোহিতার বিরুদ্ধে বিশ্বনবীর প্রিয় সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে জিহাদ-লড়াই-সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে। যারা মহান আল্লাহকে অস্বীকার ও রাসূলের ব্যাপারে কটূক্তি করে বাংলাদেশে তাদের স্থান নেই।
হেফাজতে ইসলাম আয়োজিত চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে শনিবার অনুষ্ঠিত শানে রেসালত সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
আল্লামা আহমদ শফী বলেন, হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা: দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, আমি বেঁচে থাকা অবস্থায় ইসলাম ক্ষতি হবে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দ্বীনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা হবে এটা কখনো হতে পারে না।
আল্লামা শফী বলেন, পৃথিবীতে অনেক কিছু অদৃশ্য। দেহের মাঝে সক্রিয়-সচল প্রাণটিও অদৃশ্য; কিন্তু কেউ তো এটিকে না দেখার অজুহাতে অস্বীকার করে না। কেবল আল্লাহকে না দেখে বিশ্বাস করতে আপত্তি কেন? তোমরা নাস্তিকরাও আল্লাহর সৃষ্ট পৃথিবীতে তাঁর দেয়া জীবিকা ভোগ করো, তাঁর দেয়া আলো-বাতাসে জীবন ধারণ করছো সুতরাং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং বিভ্রান্তি ও মিথ্যার অন্ধকার ছেড়ে সত্যের আলোয়, ইসলামের ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করো। শান্তি ও মুক্তির পথ একটাইÑ বিশ্বনবীর জীবনাদর্শ অনুসরণ।
শানে রেসালত সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, আমি আজকের শানে রেসালত সম্মেলন থেকে হেফাজতের ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি ওয়াক্কাস ও মুফতি হারুন ইজহারসহ সব ওলামায়ে কেরামের মুক্তি ও দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, একতরফা নির্বাচনে হিন্দু ভাইদের ওপর যে নির্যাতন হয়েছে তার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক এর বিচার করতে হবে। তিনি বলেন, শাহবাগী কিছু নাস্তিক পরিষ্কার বলেছে, আল্লাহকে ফাঁসি দেয়া হবে।
পৃথিবীর বিভিন্ন জনপদে মুসলমানদের অস্তিত্ব ইমান-আকিদা ও সভ্যতা-সংস্কৃতির ওপর নানামুখী হামলা অব্যাহত রয়েছে। কোথাও মুসলিম নিধন, কোথাও জেল-জুলম আবার কোনো কোনো দেশে মুসলমানদের ইমান-আমল-আখলাক ধ্বংস করার জন্য সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও প্রাযুক্তিক হাতিয়ারগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মিডিয়া বা গণমাধ্যম বর্তমান সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র; যেখানে কিছু লোক পরিকল্পিতভাবে ইসলাম ও মুসলমান সম্পর্কে অনবরত মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। নাস্তিক্যবাদী গোষ্ঠী কখনো স্বরূপে কখনো আড়ালে-আবডালে থেকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে একের পর এক তথ্য সন্ত্রাস চালাচ্ছে। এটা বাংলাদেশ কিংবা অন্য কোনো দেশের বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মুসলমানদের দলমত নির্বিশেষে তাদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে। নতুন প্রজন্মকে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষায় গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায়, আমাদের অজান্তে আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধর ধর্মহীন ও সমাজের বিষবৃক্ষ হয়ে উঠবে। এ জন্য আল্লাহর কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে।
বক্তারা বলেন, সমাজে আজ যে অনাচার, পাপাচার, অন্যায় ও দুর্বৃত্তপনা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে এর ধ্বংসাত্মক প্রতিক্রিয়া ও পরিণতি থেকে কেউ রেহাই পাচ্ছে না। দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ চায়; কিন্তু এর সঠিক পথ নির্বাচনে আমরা বার বার ভুল করছি। সমাজে কুরআন-সুন্নাহ তথা বিশ্বনবীর আদর্শ পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়ন ছাড়া এ অবস্থা থেকে মুক্তি মিলবে না। রাসূলের আদর্শে গড়া সোনালি যুগের আলোকিত প্রজন্ম সাহাবায়ে কেরামের মতো সুনাগরিক তৈরির মিশনের অংশ হিসেবেই হেফাজতে ইসলামের এই শানে রেসালত সম্মেলন।
বক্তারা বলেন, অতীত কিংবা বর্তমানে দেশের কোথাও সন্ত্রাস, রক্তপাত কিংবা কোনো ধরনের নাশকতামূলক তৎপরতায় আলিম-ওলামা ও মাদরাসা শিক্ষিতরা সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ নেই। যারা মাদরাসাকে জঙ্গিবাদের আস্তানা বলে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে থাকে প্রকৃতপক্ষে তারা আসল জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষক এবং তাদের আড়াল করার জন্য সবসময় মিথ্যাচারের আশ্রয় নেয়।
মাওলানা জাফরুল্লাহ খান তার বক্তব্যে সরকারের উদ্দেশে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কেউ কটূক্তি করলে বরদাশত করা হয় না। খুব দ্রুতই তাকে বিচার ও শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়; কিন্তু আল্লাহ ও রাসূলের বিরুদ্ধে কটূক্তিকারীদের বিরুদ্ধে আজো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা কেন গ্রহণ করা হলো না। একজন নামাজি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জনগণ এটি আশা করেনি। মানুষ আপনাদের ভূমিকায় হতাশ হয়েছে। তিনি আরো বলেন, গত বছর হেফাজতে ইসলামের ডাকে ৬ এপ্রিলের লংমার্চ বানচাল করার জন্য কিছু বানরের বাচ্চা হরতাল ডেকেছিল কিন্তু আল্লাহ লংমার্চকে ঐতিহাসিক সফলতা দিয়েছেন। যারা মাদরাসা ছাত্রদের ওপর গুলি করার জন্য পুলিশকে উসকানি ও নির্দেশ দিয়েছিল, যারা শাপলা চত্বরে নবীপ্রেমিক জনতার ওপর হামলা করেছিল, বায়তুল মোকাররমে কুরআন পোড়ানোর জঘন্য কাজে নেতৃত্ব দিয়েছিল তারা একেকজন একটি করুণ অপঘাতে প্রাণ দিয়েছে। কেউ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়েছে, কাউকে জীবন দিতে হয়েছে আপন সন্তানের হাতে; কেউ নিজ দলীয় প্রতিপক্ষ কিংবা র‌্যাব-পুলিশের গুলিতে মরেছে। আমরা কারো ওপর প্রতিশোধ নেইনি আমাদের এটা করতে হয় না। আল্লাহ তাদের বিরুদ্ধে মোক্ষম ফায়সালা করেছেন। এখন আমরা শাহবাগী ইমরান এইচ সরকারের ধারাবাহিক পরিণতি উপভোগ করছি।
গতকাল শনিবার বাদ জোহর থেকে অনুষ্ঠিত শানে রেসালত সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন যথাক্রমে মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, মাওলানা সালাহুদ্দিন নানুপুরী, মাওলানা লোকমান হাকিম। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, আল্লামা হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরী, অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেনÑ প্রখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী, মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব, আল্লামা মুফতি আহমদুল্লাহ পটিয়া, আল্লামা শাহ্ মুহাম্মদ তৈয়্যব, আল্লামা সুলতান যওক নদভী, ড. এ বি এম হিজবুল্লাহ কুষ্টিয়া, মুফতি মাহমুদুল হাসান, আল্লামা শেখ আহমদ, মাওলানা সালাহুদ্দিন নানুপুরী, মাওলানা মুহাম্মদ সলিমুল্লাহ, মুফতি জসিমুদ্দিন, অ্যাডভোকেট মাওলানা আবদুর রকিব, মাওলানা আবদুল রব ইউসুফী, মাওলানা মনজুরুল ইসলাম, মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী, নাজমুল হাসান, মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, মাওলানা মুফতি ফখরুল ইসলাম, মাওলানা মুনির আহমদ, মাওলানা আবদুল রহিম ইসলামাবাদী, মাওলানা ইসমাইল খান প্রমুখ।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button