ব্রিটেনে প্রতি তিন জনের মধ্যে একজন অবিবাহিত

Marriageঅনুপম সাহা:  বিবাহ জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বর্পূন একটি অধ্যায়। যাকে বলতে পারি, সেরা বন্ধুর সাথে বা অন্য যে কোন জনের সাথে সারা জীবনের কমিটমেন্টে আবদ্ধ হওয়া। যা করলে হয়ত জীবনের পরির্পূনতা পায়। যা মানুষকে সংসার জীবনে আবদ্ধ করে। কোন কোন ধর্মে আছে, কেউ বিয়ে করলে, তাদেঁর জীবনের র্ধম অর্ধেক সম্পন্ন হয়ে যায়। আবার কোন ধর্মে আছে, বিবাহ হল জীবনের ২য় ও অত্যন্ত গুরুত্বর্পূন অধ্যায়। কিন্তুু বর্তমানে তরুন তরুনীরা এই বিবাহ নামের পবিত্র কমিটমেন্ট থেকে অনেক দূরে থাকতে চায়। তাঁরা বিবাহ বন্ধনে জড়ানোর থেকে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে বেশী মনোযোগী। বিবাহ যদিও এটি একটি ফরমাল আনুষ্ঠানিকতা, তবুও কিন্তুু তাঁরা এটা করতে অনেকে ভয় পায়। সম্প্রতি ২৮ র্মাচ ২০১৪ সালে মেট্রো পত্রিকায় প্রকাশিত নিকোল লি মেরী লিখিত এক রির্পোটে বলা হযেছে, ২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসএ ১৫.৭ মিলিয়ন লোক এখনও অবিবাহিত, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৫%। অফিস অব ন্যাশনাল ষ্টাটিসটিকস এর মতে, প্রতি তিন জনের মধ্যে একজন অবিবাহিত। অধিকাংশের বয়স ৩০ থেকে ৪৯ এর মধ্যে। এতে আরো বলা হয়েছে, লন্ডনের বসবাস কারীরা সবচেয়ে কম বিবাহের কমিটমেন্ট এ যায়।
সবচেয়ে ভয়াবহ হল, লন্ডনের ইসলিংটনে,এখানকার ৬০% লোক অবিবাহিত। রিলেশনশিপ রির্সাস চ্যারিটি ওয়ানপ্লাসওয়ান এর পেনী ম্যান্সফিলড বলেন, ৩০ বছর আগের সাথে তুলনা করলে, বর্তমানে তরুনেরা অনেক কম বিবাহ করছে। বর্তমানে তারা উচ্চ শিক্ষার দিকে বেশী মনোযোগী এবং অধিকাংশই মা বাবার সাথে থাকতে পছন্দ করছে। এদিকে একদিকে যেমন এদেশের তরুন তরুনীরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে ”াচ্ছে না, অন্যদিকে বাড়ছে ডির্ভোসের হারও। অফিস অব ন্যাশনাল ষ্টাটিসটিকস এর রির্পোট অনুযায়ী ২০১২ সালে মোট ডির্ভোস হয়েছে ১১৮,১৪০টি যা ২০১১ সালের তুলনায় ০.৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১১ সালে মোট বিবাহ হয়েছে ২৪৭,৮৯০টি আর ডির্ভোস হয়েছে ১১৯,৫৮৯ টি। এতে আরো বলা হয়েছে, অর্ধেকের মত ডির্ভোস হয়েছে বিবাহের ৪-৮ বছরের মধ্যে, যার মধ্যে ৭১% হল প্রথম বিবাহ। সবচেয়ে বেশী ডির্ভোস হয়েছে ২০১০ সালে, মোট বিয়ে হয়েছে ২৪৩,৮০৮টি এবং মোট ডির্ভোস হয়েছে ১১৯,৫৮৯ টি, আর ২০০৯ সালে বিয়ে হয়েছে ২৩২,৪৪৩টি এবং ডির্ভোস হয়েছে ১১৩,৯৪৯ টি, যা ২০০৯ সালের তুলনায় ২০১০ সালে ডির্ভোস ৪.৯% বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১২ সালে প্রতি ঘন্টায় ডির্ভোস হয়েছে ১৩টি।
৪২% বিবাহ শেষ পরিনতি হয় ডির্ভোসের মধ্যে দিয়ে। অফিস অব ন্যাশনাল ষ্টাটিসটিকস ধারনা করছে, ডবল ডিপ রিশেসন ডির্ভোস রেইট বৃদ্ধি পাওয়ার কারন হতে পারে। এদেশে, বিশেষ করে এশিয়ার কমিনিউটির মধ্যে দেখা যায়, জোড় করে তাদেঁর ছেলেমেয়েদের বিয়ে দেওয়ার প্রবনতা। যা অত্যন্ত অন্যায়। ব্রিটিশ সরকার র্ফোসড ম্যারেজকে ইলিগ্যাল ঘোষনা করেছে। পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে প্রতি বছর প্রায় ১৭০০ র্ফোসড ম্যারেজ পুলিশের কাছে রির্পোট হয়। এই সরকার র্ফোসড ম্যারেজ বন্ধ করার জন্য আইন প্রনয়ন করছে। গর্ভানমেন্ট র্ফোসড ম্যারেজ বন্ধ করার জন্য “র্ফোস ম্যারেজ ইউনিট গঠন“ করেছে। এই ইউনিটের রির্পোট অনুযায়ী ২০১৩ সালে, এই টিম ১৩০২ র্ফোসড ম্যারেজ কেস পেয়েছে। এর মধ্যে ৭৪টি দেশের লোক রয়েছে, যারা র্ফোসড ম্যারেজ করিয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশী ৪২.৭% র্ফোসড ম্যারেজের সাথে জড়িত ছিল পাকিস্তানীরা, তারপর ভারত ১০.৯%। বাংলাদেশ ৯.৮% এবং আফগানিস্তান ২.৮%। এরেনজড ম্যারেজ আমাদের অত্যন্ত পুরানো কালচার। এটা অনেকে ফোরসড ম্যারেজের সাথে মিশিয়ে ফেলে বা একই মনে করে। এই দুই বিবাহ এক না। এরেনইজড ম্যারেজ করে আমাদের মা বাবারা, দাদা দাদীর যুগ যুগ ধরে সুখের সংসার করেছে। এটা সংগঠিত হয় দুটি জানা পরিবারের মধ্যে। বংশ বা পারিবারিক ইতিহাস বিবেচনা করে, অধিকাংশ সময় সন্তানদের পছন্দক্রমে এই বিয়ে সংগঠিত হয়। তবে আমি বলতে পারি, এটাতে মন্দের থেকে ভালোর পরিমান অনেক বেশী। আমি আমাদের কমিনিউটির অনেক ব্রিটিশ তরুন তরুনীদের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি, অধিকাংশই এই বিবাহকে ঘৃনা করে। আমাদেরকে এই বিয়ের উপকারিতার কথা তাদেঁরকে বুঝাতে হবে, যাতে তাদেঁর এই বিয়ে সমন্ধে ভুল ধারনা কমে যায়। ফরেনরা এদেশে এসে বিভিন্ন ভাবে লিগ্যাল হতে চায়ঁ।
লিগ্যাল হওয়ার একটা সহজ উপায় হল ফেইক ম্যারেজ। গত ১৯ ফেব্রুয়ারী ডেইলি মেইল পত্রিকার এক রির্পোটে বলা হয়, ২০১৩ সালে হোম অফিসে প্রায় ৭৫০০টি ফেইক ম্যারেজ রির্পোট করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ব্রিটেনে গত বছর প্রতি ঘন্টায় একটি ফেইক ম্যারেজ হয়েছে। এর দায়ে সরকার গত বছর ৯০ জনকে দেশ থেকে ডির্পোট করেছে। তাই আমাদের অভিভাবকদের সাবধানে থাককে হবে, যাতে করে তাদেঁর ছেলেমেয়েরা যেন এই স্কাম লোক গুলোর ফাদেঁ না পড়ে। আমাদেরকে আমাদের সন্তানদেরকে বিবাহ সমদ্ধে জানাতে হবে, পরির্পূন পরিবার গড়ে তুলতে এটার ভূমিকা কি তাদেঁরকে শিখাতে হবে। এরেনজড ম্যারেজ কি, সেটা কেন দরকার বা এর উপকারিতা কি? তাদেঁরকে শিখাতে হবে। আমি দেখেছি, কোন কোন মা বাবা জোড় করে সন্তানদের দেশে নিয়ে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে, যা শেষ র্পযন্ত এক বছর শেষ না হতেই ডির্ভোস হয়। তাই কোন গাইডিয়ান সন্তানকে তাদেঁর অমতে বা অপছন্দে জোড় করে বিয়ে দেওয়া ঠিক না, কারন ঐ র্ফোরসড ম্যারেজ র্দীঘ দিন ঠিকেঁ না, এটি ইলিগ্যাল। সন্তানদের লাইফ র্পাটনার তাদেঁরকে পছন্দ করার সুযোগ অবশ্যই দেওয়া উচিত, যেহেতু সারা জীবন তাঁরা একজন আরেক জনের সাথে থাকবে। তবে তাড়াঁ যদি লাইফ র্পাটনার পছন্দে ভুল করছে বলে গাইডিয়ানদের মনে হয়, তাদেঁকে বুঝাতে হবে, প্রয়োজনে কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে কোন মতেই জোড় করা ঠিক না।
-লেখক ও সাংবাদিক

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button