স্বদেশে-বিদেশে সর্বত্রই মার্কিনীরা মুসলিম নিপীড়ক

US Muslimজর্জ বুশের প্রশাসনকালে বন্দিদের ওপর সিআইএ’র বর্বর নিপীড়নের আংশিক বিবরণ গত ৯ ডিসেম্বর প্রকাশ করে মার্কিন সিনেট সিলেক্ট কমিটি। ভিয়েতনামে মার্কিনীদের নীতিবিরুদ্ধ কর্মকান্ডের মর্টিন লুথার কিং থেকে শুরু করে এঞ্জেলা ডেভিস ও মোহাম্মদ আলীর মতো খ্যাতকীর্তি ব্যক্তিরা কতখানি তীব্র নিন্দা জানিয়েছিলেন, প্রসঙ্গত সস্মরণে না এসে পারে না। সম্প্রতি এক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণের হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ফার্গুসনের উত্তাল জনগণ- ধারণা করা যায়। মার্কিন প্রশাসনের বিরুদ্ধে আরো বেশি ক্ষিপ্ত-ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এই তথ্যে অবহিত হয়ে যে, গত আগস্টে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনীদের ওপর পাশবিক হামলায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ইসরাইলীরা নিজেদের জোরে নয় অত্যাধুনিক মার্কিন অস্ত্রেই সজ্জিত হয়ে।
মাইকেল ব্রাউন ও এরিক গার্মারের হত্যাকারীদের মার্কিন পুলিশ প্রশাসন কোনো শাস্তি দেয়নি। এই ঘটনাগুলোর পাশাপাশিই প্রকাশ্য পেয়েছে মার্কিন সিনেট কমিটির বন্দি নির্যাতন প্রতিবেদন। বিশ্ববাসীসহ মার্কিনীদেরও অনেকেই আজকাল বিশ্বাস করতে শুরু করছেন, মার্কিন নিরাপত্তা বাহিনীর লোকদের স্বদেশী স্বরূপ যখন এতখানি বর্বর; বহির্বিশ্বে সন্ত্রাস দমনের নামে অমানবিক পাশবিকতায় কতখানি নীচে তারা নামতে পারে।
কিছু মার্কিনীর বক্তব্য হচ্ছে, গণতান্ত্রিক মার্কিনীদের হেয়প্রতিপন্ন করার এক সম্প্রসারিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বন্দি নির্যাতন রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয়েছে। ফক্স নিউজ এজেন্সির আন্দ্রিয়া তানতারোস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মার্কিনীদের জন্য রিপোর্ট প্রকাশকে ভীতি উদ্রেককারী উল্লেখ করেই ক্ষান্ত থাকেননি, রিপোর্ট প্রকাশের ওবামার সিদ্ধাদন্তেরও সমালোচনা করেছেন এই বলে, যুক্তরাষ্ট্রকে ভীতিপ্রদ হিসেবে বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করার উদ্দেশ্যে বিষয়টিকে ঘিরে বাদানুবাদের অবতারণা ঘটিয়েছেন তিনি।
নোংরা ও অকথ্য ভাষা মার্কিন তরুণরা সচরাচর ব্যবহার করে থাকে পিজা ও তিয়ারের মতো কিছু খাদ্য-পানীয় তাদের অপছন্দ হয়ে থাকলে। তাদের ব্যবহৃত শব্দটি হচ্ছে কুৎসিত ও কম উদ্রেককারী। কোনো জাতি রাষ্ট্রের অনৈতিক চরিত্র চিত্রনে এসব শব্দ ব্যবহৃত হয় না। তার নামের শেষ অংশ গ্রীক মূলোদ্ভূত হওয়ায় মাত্র ক’দশক আগেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আন্দ্রিয়াস তানতারোসকে টিভি প্রোগ্রামে অংশ নিতে দেয়া হতো না। তিনি শ্বেতাঙ্গ গণ্য ছিলেন না। মার্কিন শ্বেতাঙ্গের এই অরুচিকর মানসিকতার কথা তানতারোস ইদানীং হয়তো ভুলে গেছেন। শুধু ভুলেই যাননি। তার মন্তব্য হচ্ছে বন্দি নির্যাতন রিপোর্ট প্রকাশের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বিদ্রুপ ও সমালোচনা করার শত্রুদের সুযোগ জুটিয়ে দেয়া হয়েছে।
সন্দেহভাজনের ওপর নিপীড়ন চালানো বেআইনি শুধু নয়, অফলপ্রসূও। ১৯৯২ ‘ইউএস আর্মি ফিল্ড ম্যানুয়ালে’ স্পষ্ট বলা হয়েছে, শক্তি প্রয়োগে জিজ্ঞাসাবাদের নির্ভরযোগ্য তথ্য বেরিয়ে আসে না। অত্যাচারিত হওয়ার ভয়ে বন্দি ব্যক্তি প্রশ্নকারীর পছন্দসই জবাব পেলে বাধ্য হয়। যেমন নিপীড়িত এক বন্দি সিআইএকে জানিয়েছিল, মার্কিন গ্যাস স্টেশনগুলোয় হামলা চালানোর জন্য একদল মুসলমানকে সন্ত্রাসী দলে ভর্তি করার কাজে সে ব্যাপৃত ছিল। পরবর্তীতে ওই বন্দিই নিজের পূর্ব বক্তব্য অস্বীকার করে এই বলে, নিপীড়ন যন্ত্রণা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য সে ঐ বানোয়াট গল্প সিআইএকে শুনিয়েছিল।
অযোগ্যতার অভিযোগও উঠেছে মার্কিন পুলিশের বিরুদ্ধে। ফার্গুসানে উত্তেজনা ও দাঙ্গার বিস্তার রোধে সম্পূর্ণ ব্যর্থ থেকেছে সেখানকার পুলিশ বিভাগ। পরে প্রকাশ পেয়েছে ১২ বছর বয়সী তামির রাইসের হত্যাকারী পুলিশ কর্মকর্তার পিস্তল ব্যবহারের যোগ্যতাও ছিল না। বিচার বিভাগের সাম্প্রতিক রিপোর্টে জানা গেছে ক্লীভল্যান্ডের পুলিশ গ্রেফতার অভিযানে নিয়মিত শক্তি প্রয়োগ করে থাকে এবং অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে বেপরোয়াভাবে। বন্দী নির্যাতন রিপোর্টের ভীবৎস বর্ণনা ইতোমধ্যে অন লাইনে সবার দৃষ্টিতে এসে গেছে। প্রচন্ড শীতে শুধুমাত্র গযাপার পরিয়ে ও শিকলে বেঁধে ঘরের সিলিংয়ে দিনের পর দিন বন্দীকে ঝুলিয়ে রাখার বুক কাঁপানো বৃত্তান্ত শুধু মার্কিনীদের নয়, বিশ্বের কারুরই আজ আর অজানা নেই।
শিকলে বেঁধে এক বন্দীকে প্রায় নগ্ন শরীর হাড়-কাঁপানো শীতে মেঝেয় শুইয়ে রাখার পরিণামে তার নিহত হওয়া। বন্দীর ওপর যৌন নির্যাতন চালানো- মার্কিন পুলিশের এই সমস্ত বন্য পাশবিকতার ঘটনাগুলোকে রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য পিটার কিং সরাসরি অস্বীকার করেছেন। তার মতে বন্দীদের ওপর কোনো অত্যাচার করা হয়নি। মার্কিনীদের সমন্ধে বিশ্ববাসীর মনে অরুচি-ঘৃণা ধরানোর উদ্দেশ্যেই তার মতে এই মিথ্যা প্রচার চালানো হচ্ছে।
অশ্বেতাঙ্গদের মানবিক বোধ উপলব্ধি সম্বন্ধে অভিন্ন উপেক্ষা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তানতারোস ও পিটার কিংয়ের মনোভাবে। ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী একটি ফেসবুকে অশ্বেতাঙ্গদের ওপর শ্বেতাঙ্গদের নৃশংস হামলা নির্যাতনের বর্ণনা পঠিত হতে দেখা যায় সম্প্রতি এক শিমের (ধর্মাবলম্বী) মুখে। ক্রুদপ প্রতিক্রিয়ার উদ্ধার দর্শকেরা লক্ষ্য করেন ঐ শিখ সম্বন্ধে। বলা হয় ঐটি ছিল আইসিসের সদস্য। আর এক শ্বেতাঙ্গর মন্তব্য- ফেসবুকে মুসলমানকে আনতে হলো কেন। সংশোধনী এলো- লোকটি মুসলমান নয় শিখ। অন্য এক মন্তব্য ঐ একই কথা। এর আগে মার্কিন পুলিশের অযোগ্যতার উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু পুলিশ নয়, সারা যুক্তরাষ্ট্রই যেন ইদানীং অজ্ঞ-মূর্খের অভয়ারণ্যে পরিণত দেখা যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রধান পাঠ্য বিষয় হচ্ছে ইউরোপীয় ও মার্কিন ইতিহাস। শিখ ও মুসলমানের মধ্যকার পার্থক্য অধিকাংশ মার্কিনীই জানে না। “ফতোয়া” ও “চাপাতি”র পারস্পরিক অর্থ তারা জানে না- জানতে আগ্রহীও নয়। বাদামী গায়ের রং ও শ্মশ্রুধারী মানুষ মাত্রই আল-কায়েদা। একটি মাত্র তথ্যই ইতোমধ্যে তারা আয়ত্ব করেছে যে, ২০০১ সালে তাদের দেশের ওপর হামলা হয়েছিল। তাদের পাতাল ভেদী অজ্ঞতার শ্বেত বর্ণ নির্ভর দাম্ভিকতার যে দুর্লংঘ্য প্রাচীর মার্কিনীদের চারপাশে আজ যেভাবে উত্তঙ্গ হয়ে চলেছে- বহু বিবেকবান পর্যবেক্ষক শঙ্কিত না হয়ে পারছেন না যে, আগামী দিনে বিশ্ববিনাশের মহাকলঙ্কিত ভার ঈশ্বরবিমুখ ওবাহ্যবস্তুভোগ সর্বস্ব ঐ মার্কিনীদের কাঁধেই কি শেষ পর্যন্ত ন্যস্ত হতে চলেছে? – আল-জাজিরা।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button