রানা প্লাজা ও তাজরীনের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে

USAরানা প্লাজা ধস ও তাজরীন অগ্নিকাণ্ডের মতো মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ সরকারসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষা করা হলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হবে বলেও আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির এক বছর পূর্তিতে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর, ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ অফিস, ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এবং যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম দফতর এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহবান জানায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ১১ শ’র বেশি লোকের প্রাণহানি এবং আরো সহস্ত্রাধিক লোকের আহত হওয়ার রানা প্লাজা ধসের ঘটনাটি পোশাক শিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক শিল্প বিপর্যয়।
শতাধিক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে ট্রায়াঙ্গাল শার্টওয়েস্ট বিপর্যয়ের মতো রানা প্লাজা এবং তাজরীন ফ্যাশন (২০১২ সালের নভেম্বরে এখানে আগুন লাগে) বিপর্যয়ও ভয়াবহ মাত্রায় অহেতুক ঝুঁকির প্রতীক হয়ে আছে। আর এ দুটি দুর্ঘটনার কারণে এখনো অনেক শ্রমিক জীবিকা অর্জন করতে পারছে না, তাদের পরিজনদের সহায়তা করার সুযোগ পাচ্ছে না।
এতে বলা হয়, ‘আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য শোক প্রকাশ করছি, রানা প্লাজা ও তাজরীনের মতো বিপর্যয় যাতে আর না ঘটে তা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আমরা আবারো আহ্বান জানাচ্ছি।’
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার, মালিকপক্ষ এবং বাংলাদেশি পণ্যের ক্রেতাসহ বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সব পক্ষের ওপরই শ্রমিকদের জন্য সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ এবং তারা যাতে তাদের স্বার্থ রক্ষার কথা বলতে পারে সে অধিকার নিশ্চিত করার দায় বর্তায়। গত জুনে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বাংলাদেশের জিএসপি (কিছু পণ্যে অগ্রাধিকার প্রদানের ক্ষেত্রে বিশেষায়িত পদ্ধতি) সুবিধা স্থগিত করার পর থেকেই আমরা যে ‘অ্যাকশন প্লান’ গ্রহণ করেছিলাম তা বাস্তবায়নে সব পক্ষের সাথে কাজ করে চলেছি। বাংলাদেশে শ্রমিকদের অধিকার এবং কর্মেেত্র সঠিক পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য ২০১৩ সালের জুলাই মাসের সাস্টেইনেবিলিটি কমপ্যাক্ট অনুসারে আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় রা করে চলেছি।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত এক বছরে বাংলাদেশ সরকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করেছে। উদাহরণ হিসেবে ১৪০টির বেশি শ্রমিক ইউনিয়ন নিবন্ধনের অনুমোদন প্রদান, নিবন্ধন বাতিল হওয়া একটি প্রথম সারির শ্রম অধিকার নিয়ে কাজ করা এনজিওকে পুনরায় নিবন্ধনের সুযোগ দেয়া, আইএলও’র সহযোগিতায় নিরাপত্তা পরিদর্শন এবং কারখানা পর্যায়ে তদারকি ও তৈরিপোশাক খাতের সমস্যাবলী দূরিকরণের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনায় সম্মত হওয়া, নতুন নতুন শ্রম পরিদর্শক নিয়োগ শুরু করা এবং প্রাথমিক নিরাপত্তা পরিদর্শন সম্পন্ন করার কথা বলা যায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, তবে আরো অনেক কিছু এখনো বাকি রয়ে গেছে। বাংলাদেশের শ্রম আইন এবং বিশেষ রফতানিকরণ প্রক্রিয়া জোন আইন- এই উভয় দিকেই এখনো মৌলিক শ্রমিক অধিকার সুরক্ষার নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে। বাংলাদেশ সরকারের পরিদর্শক নিয়োগের গতি অত্যন্ত ধীর। তাছাড়া সহজে দেখা যায় এমন ডাটাবেইজে পরিদর্শকদের কার্যক্রম সর্বসাধারণের জন্য প্রকাশ করাও বাকি রয়ে গেছে। শ্রমিকরা যখন সংগঠিত হয়, তখন তাদের ভয়ভীতি দেখানোর যেসব ঘটনা ঘটে, তা থেকেও তাদের সুরক্ষা দেয়া নিশ্চিত করা জরুরি। এসব সমস্যার সমাধান করা হলে শ্রমিকরা আরো নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং আরো বেশি বেতন পাবে। আর তাতে করে বাংলাদেশ তার পূর্ণ অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বাস্তবায়ন করতে পারবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button