অগ্নিপরীক্ষার মুখে টিম ব্রাজিল

Brazilরুহুল আমিন: অগ্নিপরীক্ষার মুখে টিম ব্রাজিল। চাপের পাহাড় জমা হয়েছে দলটির ড্রেসিংরুমে। সম্পূর্ণ নতুন এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি এখন দলটির ফুটবলারেরা। তারা যখন প্রস্তুত হচ্ছেন দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ জয়ের জন্য, তখন রাস্তায় বিক্ষোভ চলছে বঞ্চিত মানুষের। এমন দৃশ্য ব্রাজিলের বেলায় কল্পনা করাও বেমানান। কিন্তু এখন এটাই বাস্তবতা!
ফুটবল ব্রাজিলের মানুষের রক্তে মিশে আছে। বিভিন্ন বিপর্যয়ের মধ্যে তাদেরকে এককাতারে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছে। অথচ ওই ফুটবলই এখন অসংখ্য ব্রাজিলিয়ানের কাছে স্রেফ দুঃস্বপ্ন! বিশ্বকাপ আয়োজনে দেশটির সরকারের দুর্নীতির উৎসব কিছুতেই পেছনে ফেলতে পারছেন না সাধারণ ব্রাজিলিয়ান। ফলে তাদের কাছে ফুটবল গৌণ হয়ে পড়েছে, যা দলটির ফুটবলারদের জন্য একেবারেই নতুন এক অভিজ্ঞতা। বিষয়টি তাদের স্নায়ুচাপও বাড়িয়ে দিয়েছে বহু গুণে। এর ওপর, পারফরম্যান্সের ইস্যুটি তো থাকছেই! কোনোক্রমেই আরেকটি ১৯৫০ দেখতে চান না দেশটির জনগণ।
বহুমুখী ওই বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে আজ ২০১৪ সালের বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ খেলতে মাঠে নামছে ব্রাজিল। এরিনা দ্য সাওপাওলো স্টেডিয়ামে ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ ইউরোপীয় আন্ডারডগ ক্রোয়েশিয়া। নিঃসন্দেহে ম্যাচের ফেবারিট ব্রাজিল। তবে ক্রোয়েশিয়াও একেবারে ফেলনা নয়। তাদেরকে পেছনে ফেলতে সেরা নৈপুণ্যই দেখাতে হবে স্বাগতিকদের। তখন দেশটিতে চলমান অশান্ত অবস্থার কিছুটা হলেও পরিবর্তন হতে পারে। নেইমার-অস্কারদের চোখধাঁধানো ফুটবলই এখন ব্রাজিলের ঐক্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম। কখনো কখনো এই মাস্টউইন সমীকরণ সেরা দলকে বিপদে ফেলে দেয়। এ ইস্যুটিও মাথায় রাখতে হচ্ছে স্বাগতিকদের। তারা সবাই জানেন, ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ফলাফল ভালো না হলে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে পড়বে।
চরমতম দুঃসময়ে অতীত বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচের অতীত ফলাফল থেকে প্রেরণা নিতে পারছে ব্রাজিল। কোনো স্বাগতিক দেশই টুর্নামেন্টের উদ্বোধন ম্যাচ হারেনি। জিতেছে ১৪টি দল। বাকি ছয় ম্যাচ ড্র হয়। এমনকি ১৯৫০ সালের আয়োজন করা টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে ব্রাজিল ৪-০ গোলে উড়িয়ে দেয় মেক্সিকোকে। বিশ্বকাপের চূড়ান্ত লড়াইয়েও ক্রোয়েটদের বিপক্ষে সাফল্য রয়েছে ব্রাজিলের। তারা ২০০৬ সালে রিকার্ডো কাকার একমাত্র গোলে ইউরোপের দেশটিকে হারিয়ে দেয়।
সেরা দল নিয়েই ব্রাজিল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে এবারের বিশ্বকাপের। হালের সেনসেশন নেইমার দলটির তুরুপের তাস। বিশ্বকাপ শুরুর মাত্র দুই দিন অনুশীলনে তিনি আঘাত পান। মুহূর্তেই এই খবর চারি দিকে ছড়িয়ে পড়ল। অজানা শঙ্কায় কেঁপে উঠল ভক্তদের হৃদয়। তবে নেইমারের আঘাত মারাত্মক ধরনের কিছু ছিল না। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে প্রথম একাদশেই দেখা যাবে তাকে। ব্রাজিলের আক্রমণভাগে নেইমারের সাথে জুটি বেঁধে খেলবেন হাল্ক, ফ্রেড ও অস্কার। অভিজ্ঞ ফ্রেডকে একমাত্র স্ট্রাইকার হিসেবে খেলাবে স্বাগতিকেরা। গত বছরের ফিফা কনফেডারেশন কাপে ব্রাজিলের আক্রমণভাগের ওই চার ফুটবলারই দুর্দান্ত নৈপুণ্যে দেখান। বিশ্বকাপে সফলতার জন্যও তাদের সেরা পারফরম্যান্সের দিকে চেয়ে আছেন ভক্তরা।
বায়ার্ন মিউনিখের রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার লুইস গুস্তাভো-পলিনহো পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের গেম প্ল্যানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আক্রমণভাগে বল জোগানের পাশাপাশি রক্ষণকাজেও সাহায্য করতে দেখা যাবে তাদের। এতে দুই উইং দিয়ে দানি অ্যালভেজ ও মার্সেলো স্বাধীনতা পাবেন ওপরে ওঠার। কাউন্টার অ্যাটাকের বেলায় আক্রমণভাগের সতীর্থদের পাশেও দেখা যাবে তাদের। ব্রাজিলের রক্ষণভাগকে অনেকেই দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যদিও কাব ফুটবলে ডেভিড লুইজ ও থিয়াগো সিভলার কার্যকারিতার ব্যাপারে সবাই অবহিত আছেন। তাদের মধ্যে ফাটল ধরানোর কাজ মোটেও সহজ হবে না ক্রোয়েশিয়ার আক্রমণভাগের ফুটবলারদের জন্য।
ব্রাজিলের মতোই ক্রোয়েশিয়ার প্রধান শক্তিও আক্রমণভাগ। ইউরোপীয় কাব ফুটবলের একঝাঁক তারকা ফুটবলার দলটির অ্যাটাকিংয়ের নেতৃত্ব দেবেন। রিয়াল মাদ্রিদ তারকা লুকা মডরিচ-এদুয়ার্দো-কভোচিচ, ইয়েলাভিচ ও রাকিচিচ বিশ্বমানের ফুটবলার। তাদের রুখে দিতে চাইলে ঘাম ঝরাতেই হবে ব্রাজিলের রক্ষণভাগের ফুটবলারদের! ক্রোয়েটরাও একমাত্র স্ট্রাইকার হিসেবে খেলাবে ইয়েলাভিচকে। মডরিচ ও র‌্যাকিচিচ খেলবেন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার পজিশনে। রক্ষণভাগে অভিজ্ঞ শলুকা, সারনা ও লভরেন লড়ে যাবেন নেইমার-অস্কার ও ফ্রেডকে গোলবঞ্চিত রাখতে। রক্ষণকাজে ক্রোয়েটদের সফলতাও চোখধাঁধানো। বিশ্বকাপের ১৩ ম্যাচে তারা মাত্র ১১ গোল হজম করেছে। এবারের টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া ৩২ দলের মধ্যে তাদের গোল হজমের গড়ই সবচেয়ে কম! ইন্টারনেট।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button