যৌনপল্লি থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে !

Manদারিদ্র্যের সঙ্গেই ছিল তার নিত্য দিনের লড়াই। মা ও ভাইয়ের সঙ্গে ভারতের কলকাতার শহরতলির যৌনপল্লি সোনাগাছির ছোট্ট এক খুপরিতে পড়ে থাকা। সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি, কে তার জন্মদাতা বাবা, এটা আজও অজানা। তার মা যে যৌনকর্মী।
জীবনযুদ্ধে হারতে হারতে পোড়খাওয়া ১৬ বছরের রাজীব রায়ের স্বপ্ন অনেক বড় হবার। রাজীবের চোখে ঝিলিক মারে জগদবিখ্যাত ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন। আর সেই স্বপ্ন পুরণের পথে সে পেয়ে যায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড নিয়মিত প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি।
গত মাসে গোয়ায় স্কুল টুর্নামেন্ট চলার সময় রাজীবের খেলা দেখে ভীষণ মুগ্ধ ‘রেড ডেভিল’ স্কাউটেরা। দ্রুতই তাকে অন্য ১১ জন খুদে প্রতিভার সঙ্গে দলভুক্ত করা হয়। রাজীবের আপাতঃঠিকানা তাই ওল্ড ট্রাফোর্ড। সেখানে ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ নেবে কলকাতার এ কিশোর।
যতটা সহজে সাফল্যের গল্প বলা হলো, রাজীবের জীবনটা ততটা মসৃণ নয়, বরং কণ্টকাকীর্ণ। মা পেটের দায়ে যৌনকর্মী। দুবেলা খাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। এ অবস্থার পরও মা যখন খাওয়ার জন্য তাকে টাকা দিতেন, সেটি দিয়ে ফুটবলের বুট-জার্সি কিনত। রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেটে তীব্র ক্ষুধা নিয়ে অনুশীলন করত। শুনুন রাজীবের মুখেই, ‘খাবার কিনতে মা যখন টাকা দিত, সেটি জমিয়ে বুট কিনেছি, জার্সি কিনেছি। অনেক কঠিন ছিল সবকিছু। কিন্তু লক্ষ্য পূরণে সব সময় স্থির থেকেছি।’
রাজীবের ঘরে ব্রাজিলিয়ান ফুটবল তারকা অস্কারের পোস্টার। অস্কারকেই সে আদর্শ মানে। কেন? কারণ চেলসির ব্রাজিলিয়ান তারকাও যে দরিদ্রকে জয় করেই এসেছেন। রাজীবের চোখে খেলে যায় অস্কারদের মতো বড় হওয়ার স্বপ্ন, ‘তাদের মতো বড় খেলোয়াড় হতে চেয়েছি সব সময়। এ স্বপ্নের বাস্তবায়নে নিজের সবটুকু ঢেলে দিয়েছি।’
চাইলেই তো বড় ফুটবলার হওয়া যায় না। তাহলে কীভাবে এত সব হলো? রাজীবের জীবনের গল্প মোড় নেয় মূলত দুই বছর আগে, যখন মা তাকে যৌনকর্মীদের স্থানীয় স্কুল ‘রাহুল বিদ্যানিকেতনে’ ভর্তি করে দেন। সেখান থেকে রাজীব অংশ নেয় একটি ফুটবল প্রকল্পে। যে প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল, যৌনকর্মীদের শিশুদের মূলধারায় নিয়ে আসা। এরপর এ বছরের গোড়ার দিকে পশ্চিম বাংলার হয়ে ‘ন্যাশনাল স্লাম সকার টুর্নামেন্টে’ অংশ নিয়ে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখায় সে। টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয় তার দলই। গত মাসে গোয়ায় চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য যে ৩০ জন নির্বাচিত হয়, রাজীব তার মধ্যে একজন। আর সেখানেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড স্কাউটদের নজরে আসে সে।
হয়তো আপাতত মাত্র ১৫ দিনের জন্যই ইউনাইটেড-যাত্রা, এমন নয় যে ইংল্যান্ডের সেরা এই ক্লাবটিতে জায়গা পাকা হয়ে গেছে তার। কিন্তু যে অবস্থা থেকে এই পর্যন্তই যেতে পেরেছে, সেটাই রাজীবের জন্য অনেক। ‘এ অর্জনের পর লোকে যখন জিজ্ঞেস করে “মায়ের সন্তান” হিসেবে কেমন লাগছে? জানি না, এর উত্তর কী হতে পারে। যখন আমার কোচ বলেছিলেন, আমি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জন্য নির্বাচিত হয়েছি, সেটি ছিল বাবার পরিচয় পাওয়ার মতো’—বলেছে বয়সের তুলনায় পোড় খেয়ে খেয়ে অভিজ্ঞ হয়ে ওঠা এই কিশোর।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button