বাংলাদেশে সেনা হস্তক্ষেপের আশঙ্কা বিবিসির

বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় জরুরি অবস্থা ও সেনা হস্তক্ষেপের আশঙ্কা করছে প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসি।
শুক্রবার বিবিসির অনলাইনে প্রকাশিত ‘ইলেকশন ডিভিশনস পুশ বাংলাদেশ টুয়ার্ডস দ্যা ব্রিংক’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতা নতুন মাত্রা পেয়েছে। সামপ্রতিক সময়ে হরতাল, অবরোধে দেশটি অচল হয়ে পড়েছে। এ ধরনের অবস্থা দেশটিকে খাদের কিনারে নিয়ে যেতে পারে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য দেশটিতে জরুরি অবস্থাও ঘোষণা করা হতে পারে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ৩ মাসের জন্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার কোর্টের রুল অনুসারে ২০১০ সালে এ ব্যবস্থা বাতিল করে অন্তবর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজনে সরকার অনড় বলেই দেখা যাচ্ছে যা সহিংসতা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।
একতরফা নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থাসমূহের উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপি ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে উদ্বিগ্ন উন্নয়নসহযোগী যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ ধরনের নির্বাচন পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করে তুলবে। তারা ইতিমধ্যে দুই দলকেই সকলের অংশগ্রহণে নির্বাচন আয়োজনে ঐক্যমত্যে পৌঁছার আহ্বান জানিয়েছেন।
জনসমর্থন বিএনপির প্রতি উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর তৈরি করা এ সংকটে জনসমর্থন এখনো বিএনপির পক্ষে। আর এ জন্য তার পদত্যাগই সমঝোতার পথকে সহজ করে দিতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিরোধী দল বিএনপি ও তার প্রধান শরীক জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে। তাদের দাবি শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলে কারচুপি হবে।
জরুরি অবস্থা জারি হলেও শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকবেন উল্লেখ করে বলা হয়েছে, যদি সরকার জরুরি অবস্থা জারি করে সেনা বাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে নিয়ে আসে তাহলে নির্বাচন অবশ্যম্ভাবীভাবে স্থগিত হয়ে যাবে। বর্তমান সংবিধান মতে শেখ হাসিনা নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
জরুরি অবস্থা জারি হলে সেনা বাহিনী কি ভূমিকা নেবে তা সবচেয়ে বড় বিষয় উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, সেনা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা কি ঐক্যবদ্ধ এবং শেখ হাসিনাকে সমর্থন করবেন এখনকার মত। যদি নির্বাচন রক্তাক্ত সহিংসতায় রূপ নেয় কিংবা যদি জরুরি অবস্থা বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয় তাহলে সেনা বাহিনীর হস্তক্ষেপের বিষয়টি জোরালো হয়ে উঠবে।
নির্বাচন নিয়ে বন্ধু রাষ্ট্রের সমঝোতার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছ, অনেকে আশাবাদী ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বন্ধু রাষ্ট্রসমূহের মধ্যস্ততায় বাংলাদেশের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের ব্যাপারে একটা সমঝোতায় পৌঁছানো যাবে।
এ ছাড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতা চলমান থাকলে বাংলাদেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। ভঙ্গুর অর্থনীতির উন্নয়ন কঠিন হয়ে পড়বে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button