মার্চে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর থেকে চালু হচ্ছে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট

Sylhet Airportমার্চেই সিলেট এম এ জি ওসমানী বিমানবন্দর থেকে সরাসরি আন্তর্জাতিক গন্তব্যের উদ্দেশ্যে উড়বে বিমান। এতথ্য জানিয়ে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে রিফুয়েলিং স্টেশন স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক বলেছেন, এরই মধ্যে প্রকল্পের ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। অবশিষ্টী কাজ এক মাসের মধ্যে শেষ হবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সিলেট -১ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের অন্যতম নির্বাচনী ওয়াদা ছিলো সিলেট বিমানবন্দরকে সকল সুযোগ সুবিধা সংবলিত একটি আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তোলা । ২০১০ এর জুনে বিমানবন্দরের রিফুয়েলিং স্টেশন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয় ।
২০১২ সালে কাজ শুরু হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হয়নি প্রকল্পের কাজ। গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেট থেকে হজ্ব ফ্লাইটের উদ্বোধনের সময় অক্টোবরের মাঝামাঝি রিফুয়েলিং স্টেশনের কাজ শেষ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
জানা গেছে দুটি স্থানে চলছে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ দক্ষিণ সুরমার জিনজির শাহ(রহঃ) এর মাজার সংলগ্ন পদ্মা ওয়েলের ডিপোতে এবং বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে। দক্ষিণ সুরমায় এক একর জায়গায় নির্মিত হচ্ছে রিফুয়েলিং স্টেশনের রিজার্ভ স্টেশন । প্রকল্পের আওতায় নির্মিত হচ্ছে তিন তলা অফিস ভবন, তিনটি স্টোরেজ ট্যাংঙ্ক, পাইপ লাইন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র , রেস্ট হাউজ, গ্যারেজ , অফিসার্স রুম ও স্টাফ রুম , দুটি ডিসপেনসার ও ফিল্টারিং ব্যবস্থা । অন্যদিকে বিমানবন্দরে নির্মিত হচ্ছে তিনটি রিজার্ভেশন ট্যাঙ্ক, হাইড্রেন লাইন , ডিপো রিফুয়েলার ডিসপেনসার ও ফিল্টার এবং জেট ফুয়েল পরিবহনের জন্য ব্রিজার( বড় ট্যাঙ্ক লরি)।
সরকারের প্রতিশ্রুতির অংশ হিসাবে ২০১২ সালের জানুয়ারী মাসে পদ্মা ওয়েলের তত্ত্বাবধানে ৫১ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা ব্যয় সাপেক্ষে শুরু হয় রিফুয়েলিং স্টেশন নির্মাণ কাজ । ২০১৩ সলের জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ার কথা। নির্মাণ কাজ শেষ না হয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ আরো এক বছর বাড়িয়ে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয় । একই কারণে প্রকল্প ব্যয় অতিরিক্ত ২ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট প্রকল্প ব্যয় দাঁড়ায় ৫৩ কোটি ১৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা । প্রকল্প কাজের দুই তৃতীয়াংশ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান,আগামী জুন মাস পর্যন্ত সময়সীমা থাকলেও মার্চের মধ্যে শেষ হচ্ছে নির্মাণ কাজ । সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করণের প্রথম উদ্যোগ নেয়া হয় ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকারের সময়। ১৯৯৮ সালের ২০ ডিসেম্বর ওসমানী বিমানবন্দরকে দেশের তৃতীয় আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর করার ঘোষণা দেয়া হয়। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালে বিমানবন্দরের আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়।এ সময় আবকাঠামো উন্নয়ন, রানওয়ে সম্প্রসারণ সহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ হয়। ২০০৬ সালের ১২ মার্চ ওসমানী বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তুু কিছুদিন সচল থাকার পর রিফুয়েলিং ব্যবস্থা না থাকায় আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়।
প্রকল্প পরিচালক আমিনুল হক জানান, প্রকল্পের কাজ মোট পাঁচটি অংশে বিভক্ত । এর মধ্যে তিনটি অংশের কাজ প্রায় শেষ । মোট কাজের ৭০ অংশ ইতোমধ্যে সম্পূর্ণ হয়েছে। স্থাপনা নির্মাণ, পাইপ লাইন স্থাপনসহ যেসব কাজ বেশি সময় সাপেক্ষ ও গুরুত্বপূণ,র্ সেগুলো শেষ হয়েছে। রিফুয়েলিং স্টেশন স্থাপনের জন্য বিদেশ থেকে যেসব যন্ত্রপাতি আমদানী করা হয়েছে, সেগুলো এরই মধ্যে ঢাকা ও চট্রগ্রামের অফিসে চলে এসেছে। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলে শিগগিরই প্রকল্পের যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হবে। প্রকল্পের কাজ মার্চ মাসের মধ্যে শেষ হবে বলে জানান তিনি। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই মার্চের কোন এক সময় রিফুয়েলিং স্টেশনের উদ্বোধন করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরের ম্যানেজার হাফিজ ইদ্দিন আহমদ বলেন, নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণটাই পদ্মা ওয়েলের তত্ত্বাবধানে হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিমানবন্দরের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে ২০১৪ এর মার্চে কাজ শেষ হবে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিমানবন্দরে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকার পরও বিমানের রিফুয়েলিং ব্যবস্থা না থাকায় আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। রিফুয়েলিং সুবিধা থাকলে প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে বিদেশী বিমান সংস্থা ফ্লাইট পরিচালনা করত।
জালালাবাদ ভেজিটেবল এন্ড ফ্রোজেন ফিশ একা্রপোটার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রোটারীয়ান মনজুর আহমদ বলেন, রিফুয়েলিং স্টেশন স্থাপন করে সিলেট থেকে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা সিলেটবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবী।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইট চালু হলে ব্যবসার এক নতুন দুয়ার উন্মুচিত হবে। এখন বিদেশে পণ্য প্রেরণের সময় অপচয়ের পাশাপাশি অনেক পণ্য নষ্ট হয়। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলে দেশী বিমানের পাশাপাশি বিদেশী বিমান সংস্থা সিলেট আসবে। তখন দ্রুত পণ্য পরিবহনসহ নতুন নতুন গন্তব্যে পণ্য রপ্তানীর সম্ভব হবে। সিলেট তথা দেশের স্বার্থে রিফুয়েলিং স্টেশন স্থাপনের কাজ দ্রুত শেষ করতে সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান তিনি।
বৃটেন প্রবাসী আব্দুল হালিম, বিমান অফিস থেকে বের হয়েছেন টিকেট নিয়ে । জিজ্ঞেস করতেই বলেন, আগামী সপ্তাহে মাকে নিয়ে যাচ্ছেন লন্ডন। সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় যাত্রার আগের দিন সিলেট থেকে ঢাকায় যেতে হচ্ছে । পরদিন সকাল দশটায় ঢাকা থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে বৃটেনের উদ্দেশে যাত্রা করবেন তারা।
তিনি আরো বলেন,সিলেটের বিপুল সংখ্যক প্রবাসী প্রতি বছর দেশে আসেন। সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় প্রবাসীরা ঢাকায় বিমানবন্দরে নানা ভোগান্তিতে পড়েন । বাংলাদেশে সফররত যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক রহমত আলী বলেন, সিলেট লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার পর তারা হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেন। হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দায়ের করা এ রিটে আদালত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শাও নোটিশ জারী করেন। এ প্রেক্ষিতে পুনরায় লন্ডন- সিলেট সরাসরি ফ্লাইট চালু হয়। কিন্তু সিলেট- লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট চালু না হওয়ায় প্রবাসীদের নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এজন্য শিগগিরই এ রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালুর দাবী তুলেন তিনি। ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর কুয়াশার অজুহাতে সিলেট-লন্ডন ফ্লাইট বন্ধ হয়। ৩ মাস পর ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারীতে সরাসরি ফ্লাইট চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও তা হয়নি। বর্তমানে লন্ডন থেকে সিলেটে কয়েকটি ফ্লাইট আসলেও সিলেট থেকে লন্ডনে সরাসরি কোন ফ্লাইট যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button