প্রচণ্ড শীতে যুক্তরাষ্ট্রে ২১জনের প্রাণহানি : ৪৮ ঘণ্টায় তিন হাজার ফ্লাইট বাতিল

USAকোনো বিশেষণেই এ বিপর্যয়কে বোধহয় ব্যাখ্যা করা যায় না। গোটা একটা মহাদেশ অচল হয়ে গিয়েছে পোলার ভর্টেক্স বা মেরু ঘূর্ণাবর্তের জেরে। এ ঘূর্ণাবর্ত এখন অবস্থান করছে আমেরিকার উত্তর-পূর্বে। ক্রমশ তা এগিয়ে এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ পশ্চিমেও। এখনও পর্যন্ত ২১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। সরকারি ফরমান, ঘরের বাইরে বের হওয়া যাবে না কিছুতেই। গাড়িতে চেপেও নয়। বাইরে প্রবল তুষারঝড়। যে দেশে আবহাওয়া মঙ্গলগ্রহের বা অ্যান্টার্কটিকার চেয়েও হিমশীতল সেখানে রুম হিটার কাজ না করাটাই স্বাভাবিক। মঙ্গলবার পর্যন্ত কোথাও রেকর্ড হয়েছে মাইনাস ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, কোথাও মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কার্যত গোটা দেশটাই অচল। জরুরি পরিষেবাগুলোও শিকেয়। ঘর গরম রাখার তাগিদ কোটি কোটি জনতার। ফলে বিদ্যুতের চাহিদা তুঙ্গে। এরকম ভয়াবহ হিমশীতলতা এর আগে দেখেনি মার্কিন মুলুক। প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘোষণা করে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করার দাবি উঠেছে। এই মুহূর্তে উত্তর-পূর্ব ও মধ্য আমেরিকার তাপমাত্রা অ্যান্টার্কটিকার চেয়েও কম। সবচেয়ে অবাক ঘটনা, কানাডার প্রতিবেশী আমেরিকার আলাস্কা রাজ্যের গড় তাপমাত্রার চেয়ে মূল আমেরিকা ভূখণ্ডের তাপমাত্রা এখন অনেকটাই কম। শুধু তাই নয়, প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরেক রাজ্য হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের তাপমাত্রাও মাইনাসের নিচে। সেখানে সুপ্ত আগ্নেয়গিরি মাউন্ট মৌনা কিয়ার তাপমাত্রা মাইনাস আট ডিগ্রি।
আমেরিকার সাংবাদমাধ্যগুলো জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। কারণ গোটা দেশে ভয়াবহ শীতে কতজনের মৃত্যু হয়েছে তার পুরো খবর এখনও মেলেনি। মার্কিন সংবাদ মাধ্যমের ভাষায়, গ্লোবাল ওয়ার্মিং ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে ব্লক বাস্টার হলিউডি ছবি ‘দি ডে আফটার টুম্রো’-এর মতোই হুবহু এক আবহাওয়া ও পরিস্থিতি এখন আমেরিকাজুড়ে। যেন সিনেমাটাই জলজ্যান্ত বাস্তব হয়ে গিয়েছে। পোলার ভর্টেক্স দেখে আতঙ্কিত প্রশাসনও। গত ৪৮ ঘণ্টায় তিন হাজার উড়ান বাতিল হয়েছে আমেরিকায়। আগামী তিন দিনে আরও সাড়ে তিন হাজার উড়ান বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের সর্বত্র বিদ্যুতের চাহিদা চরমে। সব স্কুল, কলেজ, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, গবেষণাগার বন্ধ। ব্যাহত হয়েছে বিশ্বের অন্যতম সর্ববৃহত্ দুই সরকারি প্রতিষ্ঠান নাসা এবং পেন্টাগনের কাজও। যে কোনো পরিস্থিতির জন্য তৈরি রাখা হয়েছে মার্কিন সেনাবাহিনীকে। সব হাসপাতালের জরুরি বিভাগকেগুলোকে রাত দিন সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কোনো ভাষাতেই হয়তো বর্ণনা করা যায় না এই তুষার যুগ বা বরফযুগের মতো পরিস্থিতিকে। তাই মার্কিনিদের কাছে চ্যালেঞ্জ একটাই, যে কোনোভাবেই হোক বেঁচে থাকতে হবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button