করোনাভাইরাসে যেভাবে মৃত্যু হয়

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিছু রোগী ‘সেপসিস’ পরিস্থিতিতে পড়ে মারা যাচ্ছেন। ঠিক কেন এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়, এর ফলে কী হয়? ‘সেপসিস’ এমন একটি অবস্থা যখন প্রাণঘাতী কোনো জীবাণু একজন মানুষের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। এর ফলে শরীরের টিস্যুর ক্ষতি, বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকল হওয়া এবং সবশেষে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ল্যানসেট ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে এক চতুর্থাংশ মৃত্যুর কারণ ‘সেপসিস’। ২০১৭ সালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে মারা গেছেন চার কোটি ৮৯ লাখ মানুষ। ২০১৫ সালে শুধু জার্মানিতে এমন পরিস্থিতি ৭৫ হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ ছিল। সম্মিলিতভাবে কোলন, স্তন, ফুসফুস, প্রোস্টেট ক্যান্সারে মৃত্যুর চেয়েও এই সংখ্যাটি বেশি।
সেপসিসসের ঝুঁকিতে যারা
ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, এইডসের মত রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা লোপ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। করোনা ভাইরাসের মৃত্যুরও বড় কারণ সেপসিস পরিস্থিতি। আগে থেকেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্তরা এই ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি থাকছেন। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চীনে করোনা ভাইরাসে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ১৩ দশমিক ২ ভাগই হৃদরোগে ভুগছিলে। ৯ দশমিক ২ ভাগের ডায়বেটিস ছিল। ৮ দশমিক ৪ ভাগের ছিল উচ্চ রক্তচাপ। ৭ ভাগের দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট আর ৭ দশমিক ৬ ভাগের ছিল ক্যান্সারের সমস্যা।
সেপসিস আক্রান্ত কিনা কিভাবে বুঝবেন?
ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া অথবা ছত্রাক বিভিন্ন অণুজীব সেপসিস পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। এর পেছনে যে রোগগুলো ভূমিকা রাখে তার মধ্যে রয়েছে নিউমোনিয়া, ক্ষত সংক্রমণ, মূত্রনালীর সংক্রমণ। পাশাপাশি ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ অন্যান্য মৌসুমি ভাইরাস; যেমন করোনাভাইরাস, ইবোলা, ইয়েলো ফিভার, ডেঙ্গু, সোয়াইন ফ্লু অথবা বার্ড ফ্লু ভাইরাসও রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নষ্ট করে দিতে পারে। শরীরের কিছু পরিবর্তনও এক্ষেত্রে দায়ী হতে পারে। রক্ত চাপ কমে যাওয়া ও সেই সঙ্গে হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পাওয়া, জ্বর, ঘন ঘন শ্বাস নেয়া, হঠাৎ প্রচণ্ড অসুস্থবোধ হওয়া; এমন সব পরিস্থিতিও সেপসিসের লক্ষণ।
চিকিৎসা কী?
অনেক ক্ষেত্রেই রোগীর এমন পরিস্থিতি ধরা পড়ে দেরিতে। এক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা, শরীরে রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থা ও ‘ভেন্টিলেশন’ নিশ্চিত করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে রোগীকে কৃত্রিম কোমায় রাখা হয়। রোগীর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সচল রাখতে দিতে হয় বিভিন্ন থেরাপি। কিন্তু এই ধরনের চিকিৎসা যথেষ্ট ব্যয়বহুল। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই হাসপাতালগুলোতে বছরে ২৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয় রোগীদের।
তার চেয়েও বড় বিষয়, আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকলেও অনেক রোগীকেও এই সেবা দেয়া সম্ভব হয় না সীমিত সুযোগের কারণে। সেপসিস পরিস্থিতিতে চিকিৎসা নেয়া রোগীদের অর্ধেকই পরবর্তীতে বড় ধরনের আর কোনো সমস্যায় ভোগেন না। বাকি অর্ধেক হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরও বিভিন্ন সংক্রমণ, কিডনি বিকল হওয়া, হৃদযন্ত্রের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগতে পারেন। অনেকের দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক ও মানসিক সমস্যা হতে পারে। তাই সেপসিস যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা করানোই উত্তম। যত আগে তা ধরা পড়বে এবং চিকিৎসা করানো হবে তত বেঁচে থাকা সম্ভাবনা বাড়বে। -ডয়চে ভেলে

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button