জনপ্রিয়তার শীর্ষে উইন্ডোজ ৮.১

Windowsউইন্ডোজ ৮ অপারেটিং সিস্টেম বাজারে আসার আগেই  ব্যাপক সাড়া পেয়েছিল। তবে উইন্ডোজ ৮-এর কিছু নতুন ফিচার বেশির ভাগ গ্রাহকের কাছেই পছন্দ হয়নি। এ ছাড়া ৮-এর সাধারণ কিছু ত্রুটিও ছিল। এসব সমস্যা সমাধান করার জন্য মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ৮-কে গ্রাহকের পছন্দমতো সাজিয়ে এর আপডেট ভারসন উইন্ডোজ ৮.১ বাজারে এনেছে। লিখছেন আহমেদ ইফতেখার
ডেস্কটপ অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে মাইক্রোসফটের সর্বশেষ অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ৮.১ দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ওয়েবভিত্তিক তথ্যবিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান নেট অ্যাপ্লিকেশন্সের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে ডেস্কটপ অপারেটিং সিস্টেমের জনপ্রিয়তার দিক থেকে পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে উইন্ডোজের সর্বশেষ সংস্করণটি। বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, জনপ্রিয়তার বিচারে উইন্ডোজ ৮.১ অ্যাপলের ম্যাক এএস এক্স ১০.৯ ম্যাভেরিকস সংস্করণটিকে পেছনে ফেলেছে।
চলতি বছরের ১৮ অক্টোবর মাইক্রোসফট তাদের উইন্ডোজ ৮-এর আপডেট সংস্করণ উইন্ডোজ ৮.১ চূড়ান্তভাবে উন্মুক্ত করেছে। উইন্ডোজ ৮ ব্যবহারকারীরা বিনামূল্যেই উইন্ডোজ ৮.১ সংস্করণটি আপডেট করে নিতে পারছেন। এই সংস্করণে উন্নত ব্রাউজার, স্কাইড্রাইভ, উইন্ডোজ স্টোর, সার্চ সুবিধাসহ ব্যবহারবান্ধব করা হয়েছে।
২০১২ সালে ২৬ অক্টোবর উইন্ডোজ ৮ অপারেটিং সিস্টেম উন্মুক্ত করেছিল মাইক্রোসফট। এ সময় সারফেস ব্র্যান্ডের ট্যাবলেট কম্পিউটারও বাজারে এনেছিল প্রতিষ্ঠানটি। উইন্ডোজ ৮.১ সংস্করণটির প্রিভিউ সংস্করণ উন্মুক্ত করা হয়েছিল চলতি বছরের ২৬ জুন। ১০ কোটি উইন্ডোজ ৮-এর লাইসেন্স বিক্রি করেছে প্রতিষ্ঠানটি আর উইন্ডোজ ৮ ক্রেতাদের অনুরোধ রা করতেই আপডেট হিসেবে উইন্ডোজ ৮.১ সংস্করণটি উন্মুক্ত করা হয়েছে। এ অপারেটিং সিস্টেম দিয়ে মাইক্রোসফট এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার চেষ্টা করছে, যা ডেস্কটপের পাশাপাশি মোবাইল পণ্যেও ব্যবহারবান্ধব হয়।
উইন্ডোজ ৮ সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের অভিযোগ ছিল, এটি ট্যাবলেট বা টাচস্ক্রিনের জন্য ভালো হলেও ডেস্কটপ ইউজারদের জন্য ততটা ভালো নয়। উইন্ডোজ ৮.১-এ মাইক্রোসফট এই দিকে খেয়াল রেখে এটিকে ডেস্কটপ ফ্রেন্ডলি হিসেবে ডেভেলপ করার চেষ্টা করেছে। এ কারণেই ট্যাবলেট বা ডেস্কটপ যেটিই ব্যবহার করুন না কেন, আপনি এই আপগ্রেডের মাধ্যমে বেশ কিছু নতুন সুবিধা পাবেন। উইন্ডোজ ৮.১-এ ভার্সনে আপনি প্রথমে স্টার্ট স্ক্রিনে না গিয়ে সরাসরি ডেস্কটপ মোডে কাজ করতে পারবেন। উইন্ডোজ ৮ থেকে স্টার্ট বাটন বাদ দিলেও নতুন ভার্সনে সেটি আবার ফিরিয়ে এনেছে মাইক্রোসফট। তবে এটি আগের সেই স্টার্ট বাটন নয়, যা কাসিক মেনু দেখাত। নতুন স্টার্ট বাটনে কিক করলে এটি আপনাকে স্টার্ট স্ক্রিনে ফেরত নিয়ে যাবে। আর স্টার্ট বাটনে রাইট কিক করে আপনি সরাসরি শাট ডাউন মেনু একসেস করতে পারবেন।
নতুন সংস্করণে আপনি স্টার্ট স্ক্রিনে না গিয়ে সরাসরি ডেস্কটপে লগইন করতে পারবেন। এ ছাড়া আপনি স্টার্ট বাটন কিক করে স্টার্ট মেনু নিয়ে আসতে পারবেন, যেখানে সব ইন্সটল করা অ্যাপসের লিস্ট দেখতে পাবেন।
উইন্ডোজ এইটে স্টার্ট স্ক্রিনে ইচ্ছেমতো ব্যাকগ্রাউন্ড যুক্ত করা যেত না; কিন্তু নতুন আপগ্রেডে আপনি ডেস্কটপ ও স্টার্ট স্ক্রিনের জন্য একই ব্যাকগ্রাউন্ড সিলেক্ট করে দিতে পারবেন। স্টার্ট স্ক্রিনের জন্য অ্যানিমেটেড ব্যাকগ্রাউন্ড যোগ করা হয়েছে এবং কালার থিম ও কাস্টোমাইজেশন অপশন আগের চেয়ে আরো উন্নত করা হয়েছে।
ব্যবহারকারীর সার্চ এক্সপেরিয়েন্সকে আরো উন্নত করতে মাইক্রোসফট ইউনিফায়েড সার্চ অপশন চালু করেছে। এখন আপনি প্রতিবার উইন্ডোজ সার্চ করার সাথে সাথেই আপনার পিসি, অ্যাপ ও ওয়েব থেকে প্রাপ্ত সমন্বিত রেজাল্ট দেখাবে।
ওয়েব সার্চ রেজাল্ট দেখানোর জন্য বিং সার্চ ইঞ্জিন সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে আলাদা ব্রাউজার ওপেন না করেই আপনি উইন্ডোজ সার্চ করার সময়েই ওয়েব থেকেই প্রাপ্ত সার্চ রেজাল্ট দেখার পাশাপাশি ছবি, অনলাইন ভিডিও দেখা ও গান শুনতে পারবেন।
উইন্ডোজ ৮ ব্যবহারকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ শোনা গেছে পিসি সেটিংস-সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে। উইন্ডোজ ৮-এ মডার্ন ইউআই ও কাসিক কন্ট্রোল প্যানেল এই দুই জায়গায় পিসি সেটিংস চেঞ্জ করা যেত। এতে ব্যবহারকারীরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ত। এখন উইন্ডোজ ৮.১-এ এখন পিসির প্রায় সব সেটিংস মডার্ন ইউআই মোড এ নিয়ে আসা হয়েছে।
উইন্ডোজ স্টোর অ্যাপ্লিকেশনেও বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। ক্যাটাগরি ভিউয়ের বদলে এখন ইউজার রিকমন্ডেশন, ট্রেন্ড ও ব্যক্তিগত ইচ্ছার ওপর ভিত্তি করে অ্যাপসগুলো দেখাবে। অটো অ্যাপ আপডেট সুবিধা দেয়া হয়েছে এবং অ্যাপ ইন্সটলেশনের লিমিট তুলে নেয়া হয়েছে। মাইক্রোসফট উইন্ডোজ স্টোর ১৯১টি দেশ থেকে অ্যাকসেস করার সুবিধাও এখন যুক্ত করা হয়েছে।
উইন্ডোজ ৮.১ সংস্করণটি জনপ্রিয়তা বাড়লেও এখনো ‘ভিস্তা’ সংস্করণটিকে ছাড়াতে পারেনি। ভিস্তার দখলে রয়েছে বাজারের ৩.৫৭ শতাংশ। বর্তমানে উইন্ডোজ ৭ সবচেয়ে জনপ্রিয় ডেস্কটপ অপারেটিং সিস্টেম। নেট অ্যাপ্লিকেশনটির তথ্য অনুযায়ী, উইন্ডোজ ৮ ও ৮.১ সংস্করণ মিলিয়ে এখনো জনপ্রিয়তার দিক থেকে এক যুগ আগে উন্মুক্ত করা উইন্ডোজ এক্সপির চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। উইন্ডোজের সর্বশেষ সংস্করণ দু’টি যৌথভাবে ৯.৩ শতাংশ বাজার দখল করেছে, যেখানে এক্সপির দখলে রয়েছে ৩১.২ শতাংশ। তবে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জনপ্রিয়তার দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে উইন্ডোজ ৭। বর্তমানে উইন্ডোজ ৭-এর দখলে রয়েছে ৪৬.৬ শতাংশ।
সম্প্রতি মাইক্রোসফট কর্তৃপ উইন্ডোজ এক্সপি ব্যবহারকারীদের এ প্ল্যাটফর্ম দ্রুত ছেড়ে পরবর্তী সংস্করণগুলোতে আপগ্রেড করে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে। ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসের পর উইন্ডোজ এক্সপির জন্য আর কোনো আপডেট আনবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে মাইক্রোসফট।
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে অধিক হারে ব্যবহার হচ্ছে উইন্ডোজ এক্সপি, যার অন্যতম কারণ ব্যবহার করা একদম সহজ এবং এতে কোনো জটিলটা নেই। আর হ্যাকাররা সহজকে বেশি পছন্দ করে। অনেক পুরনো হওয়া আর এর আপডেট না বের হওয়ায় হ্যাক করা হ্যাকারদের কাছে সহজ কাজে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া উইন্ডোজ এক্সপির সিকিউরিটি খুব কম। আর এ কথা চিন্তা করে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ৮ বাজারে এনেই উইন্ডোজ এক্সপি ব্যবহার বন্ধ করে দেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button