উৎসবমুখর বিদায় মঞ্চে শচিন

Shochinসর্বত্রই ভিন্নতা। উৎসবের সাথে আবেগের মিশ্রণ তৈরি করল অদ্ভুত এক অনুভূতি। কেবল ওয়াংখেড়েই নয়, পুরো মুম্বাই যেন মিশে একাকার হলো কিংবদন্তি শচিন টেন্ডুলকারের বিদায়ী টেস্ট বরণে। পাড়ার রাস্তা থেকে নিয়ে স্টেডিয়ামের স্ট্যান্ড কোথায় নেই তিনি? হাইওয়েতে বড় বড় বিলবোর্ডে শচিন। ট্যাক্সি ক্যাবে শচিন। স্কুল পড়ুয়া কচি মুখে শচিন। স্টেডিয়ামে হাজির ৩২ হাজার ভক্তের আর্তচিৎকারেও শচিন। এমনকি প্রতিপক্ষও মাতল ব্যাটিং জিনিয়াস শচিনে। আবেগঘন অভূতপূর্ব এই চিত্রনাট্য সামনে রেখেই গতকাল হোম টাউন মুম্বাইয়ে ২৪ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের ২০০তম টেস্ট ও শেষ ক্রিকেট ম্যাচে খেলতে মাঠে নামেন শচিন রমেশ টেন্ডুলকার। মাত্র ১৬ বছর বয়সে অভিষেকের পর মাঠের দুই দশকে ভারতীয়দের কাছে ক্রিকেটকে নতুনরূপে উন্মোচন করেছেন তিনি। এ কারণেই তার বিদায়ী ম্যাচকে যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে কোনো ত্রুটি রাখেনি ক্রিকেটপাগল ভারতীয়রা। ভোর রাত থেকেই মানুষে-মানুষে একাকার হলো ওয়াংখেড়ের আঙিনা। টিকিট পাননি এমন অনেকেও হাজির হন স্টেডিয়ামের বাইরে। কেবল একটু কাছ থেকে শচিনকে বিদায় দিতে তাদের আগমন।
১৯৮৯ সালে টেস্ট অভিষেকের পর ক্রিকেটের ব্যাটিং রেকর্ডের ইতিহাস বদলে দিলেন ভারতীয়দের ক্রিকেট ঈশ্বর শচিন। উত্থানপতনের মধ্যেও তিনি ছিলেন অটুট। ক্যারিশম্যাটিক ব্যক্তিত্বের অধিকারী এই ক্রিকেটার হৃদয় জয় করেছেন চরম প্রতিপক্ষেরও। তাই তো তার বিদায়ী টেস্ট ক্রিকেট দুনিয়ার সব উজ্জ্বল নক্ষত্রের মিলনমেলায় পরিণত হলো। শেন ওয়ার্ন, লারা থেকে শুরু করে বাঘা-বাঘা সব সাবেক তারকার দেখা মিলল। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে তার কীর্তিগাথা নিয়ে হাজারো পৃষ্ঠা রচনায় নেতৃত্ব দিলেন ক্রিকেটাঙ্গনের রথী-মহারথীরা। ছেলের এই রাজসিক বিদায় মাঠে বসেই দেখলেন শচিনের হুইল চেয়ারে সমাহীন মা অঞ্জলি। এর আগে কখনো তিনি ছেলের খেলা মাঠে বসে দেখেননি। যদিও এই বাড়তি আয়োজন নিয়ে কোনো প্রকার চ্যাঞ্চল্য দেখা যায়নি শচিনের মধ্যে। শান্ত স্বভাবের এই ব্যাটার ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে মাঠে নেমেও শিশুসুলভ মুখাবয়ব চিহ্নটা অক্ষুন্ন রাখেন। বিশেষভাবে তৈরি কয়েন দিয়ে টসের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ভারতীয়দের শচিন বরণের ঐতিহাসিক টেস্ট। টস জিতে ধোনি ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ায় কিছুটা হলেও হতাশ হন দর্শকেরা। তারা সংশয়ে পড়েন প্রথম দিন শচিনের ব্যাটিং না দেখার বিষয়ে। যদিও পরেক্ষণেই পাল্টে গেল পরিস্থিতি। শচিনের নেতৃত্বে ভারতীয়দের মাঠে প্রবেশের দৃশ্য বদলে দিলো সবকিছু। শচিন, শচিন চিৎকারে প্রকম্পিত হলো ওয়াংখেড়ে। শেষ বিকেলে ব্যাটিং জিনিয়াসের ব্যাট হাতের এক চিলতে কারিশমাও ধরা দিলো ভক্তদের কাছে। ব্যাট হাতে শচিনের মাঠে প্রবেশের মুহূর্তে উৎসব ও আবেগ মিশ্রিত অনুভূতি ঝড় তুলল ভক্ত হৃদয়ে। বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলেন সকলে। মুখ ফুটে উচ্চারিত হলো একটাই শব্দ, শচিন..শচিন…শচিন। কম যায়নি ম্যাচে ভারতের প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজও। দলটির ক্রিকেটারদের গার্ড অব অনার পেলেন কিংবদন্তি শচিন। ব্যাটিংয়ে নেমে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচেও তিনি হাল ধরেন দলীয় ব্যাটিংয়ের। ৩৮ রানে অপরাজিত থেকে ছাড়েন ক্রিজ। তার এই ইনিংসের প্রতিটি রান তোলার মুহূর্তে ভক্তদের সেকি উন্মাদনা! গগনবিদারী চিৎকারের পাশাপাশি ভক্তরা নেচেগেয়ে উন্মাতাল করেন পুরো স্টেডিয়াম। ম্যাচের আগে শচিন নিজেও হয়তো আন্দাজ করেন তাকে নিয়ে এ ধরনের উন্মদনাই হতে চলেছে। আর এ কারণে ভক্তদের ধন্যবাদ জানানোর কাজও সেরে রাখেন। ম্যাচের আগে টুইটার বার্তায় তিনি লেখেন, ‘বিগত ২৪ বছর একটানা ভক্তদের পাশে পেয়েছি। তাদের প্রেরণা আমাকে সেরাটা ঢেলে দিতে ব্যগ্র করেছে। সবাইকে আমি হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button