স্মৃতিতে উজ্জ্বল সালমান শাহ

ঢালিউডের রাজপুত্র ছিলেন সালমান শাহ। প্রথম ছবি ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’-এ দুদার্ন্ত অভিনয়, নাচ ও ফ্যাশন সেন্স দিয়ে আকাশছোয়া সাফল্য পেয়েছিলেন। ক্রমেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী নায়ক। আজ ১৯ সেপ্টেম্বর চলচ্চিত্রের ক্ষণজন্মা এ নায়কের জন্মদিন। ২২ বছর আগে না ফেরার দেশে চলে গেলেও তিনি আজও বেঁচে আছেন কোটি ভক্তের হৃদয়ে। আর সহশিল্পীদের স্মৃতিতে হয়ে আছেন উজ্জ্বল।

প্রথম দেখাতেই ওকে পছন্দ করি
সোহানুর রহমান সোহান, চিত্রপরিচালক
‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিতে নায়ক হিসাবে একটি নতুন মুখ খুঁজছিলাম। অনেকের সঙ্গে এটা নিয়ে কথা বলেছি, কিন্তু ব্যাটেবলে মিলছিল না। অবশেষে আমার প্রযোজক সালমানের ছবিটি দেখায়। তখন তার নাম ছিল ইমন। পরে নায়ক আলমগীরের স্ত্রী কবি খোশনুরের কাছ থেকে ইমনের ফোন নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করি। প্রথম দেখা ধানমন্ডির একটি রেস্তোরায়। আমি তার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, হঠাৎ চোখ যায় রেস্তোরার সিসি ক্যামেরার টিভির দিকে। দেখি একটি ছেলে গেট দিয়ে ঢুকছে। ওই টিভিতে দেখেই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিই এই ছেলেই হবে আমার ছবির নায়ক। যদিও আমি জানতাম ওই ছেলেটাই ইমন। পরে তো ইতিহাস! আমাকে খুবই সম্মান করত। ইচ্ছা ছিল মৌসুমী, ওমর সানি আর সালমান শাহকে নিয়ে সাজান ছবিটি বানাব। কিন্তু ততদিনে মৌসুমী আর সালমানের মধ্যে মুখ দেখাদেখি বন্ধ! আমারও খানিকটা অভিমান হয়েছিল তার ওপর। পরে ছবিটি মৌসুমী, ইলিয়াস কাঞ্চন আর রুবেলকে নিয়ে করি। খুব অভিমানী ছিল সালমান। সালমানের মারা যাওয়ার মাস তিনেক আগে একদিন এফডিসিতে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘ওস্তাদ অনেক ভুল করেছি, মাফ করে দেন। চলেন আমরা একসঙ্গে আবার ছবি করি।’ ওর সঙ্গে সম্পকর্ ভালো হলো কিন্তু ছবি আর করা হলো না।

তার প্রথম ছবিতে মা ছিলাম
খালেদা আক্তার কল্পনা, অভিনেত্রী
সালমান শাহ্র প্রথম ছবি ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’-এ মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। এ ছবিতে কাজ করার পর থেকে দেখা হলে সে আমাকে মা বলেই ডাকত। আমিও ওকে নিজের ছেলের মতো ভালোবাসতাম। ওর অভিনীত প্রায় সিনেমাতে আমার অভিনয় করার কথা ছিল। কিন্তু নানা কারণে তা সম্ভব হয়নি। সালমান ছিল খুবই ভালো ছেলে। বড়দের যথাথর্ সম্মান করত। কাজের ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস ছিল। হিরো হিসেবে ওর মধ্যে কোনো ভাব ছিল না। সালমান শাহ আজ আমাদের মাঝে বেঁচে নেই, কিন্তু ওর ভালোবাসা এখনো বেঁচে আছে। দোয়া করি আল্লাহ যেন ওকে ভালো রাখেন।

বন্ধু হারানোর ব্যথা ভোলার নয়
মৌসুমী, চিত্রনায়িকা
একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে অনেকের সঙ্গেই বন্ধুত্ব হয়। কিন্তু অনেকে হয়তো জানেন না, আমি আর সালমান ক্লাস টু থেকে বন্ধু। খুলনায় একই স্কুলে পড়তাম। পরে অবশ্য সে ঢাকায় চলে আসে। আবার দেখা ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির চুক্তি হওয়ার সময়। প্রথমে দুজন দুজনকে চিনতে পারিনি। পরে সেই পুরনো বন্ধুত্ব আবার সতেজ হয়। কিন্তু আমাদের খুনসুটি লেগে থাকত সারাদিন। খাওয়া-দাওয়া, পোশাক পরা এমন ছোট ছোট জিনিস নিয়েই ঝগড়া লাগত। তবে খুব ভালো মনের মানুষ ছিল সালমান। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির পর আমাদের পারিবারিক দ্বন্দের কারণে অনেক দিন তার সঙ্গে কাজ করা না হলেও দুজন দুজনকে খুব মিস করতাম। সেই মিস করার বিষয়টি এখনো আছে। প্রকৃত বন্ধু হারানোর ব্যথা আসলেই ভোলার নয়।

তার ফ্যাশন ছিল ১৫ বছর এগিয়ে
ওমর সানি, চলচ্চিত্র অভিনেতা
সালমানকে প্রথম দেখেছিলাম এফডিসির সাউন্ড কমপ্লেক্সের সামনে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির মহরতের দিন। ওই দিন অন্য একটি ফ্লোরে ফখরুল হাসান বৈরাগীর ছবিতে অভিনয় করছিলাম। পরে ধীরে ধীরে পরিচয়। আমাদের সম্পর্ক ছিল বড় ভাই-ছোট ভাইয়ের। ওকে তুই বলে ডাকতাম। সালমান কিছুটা ছেলে মানুষ ছিল। কোন কিছু সিরিয়াসলি নিত না। তবে ক্যামেরার সামনে গেলে একেবারেই অন্য মানুষ হয়ে যেত। বিশেষ করে তার ফ্যাশন সেন্স ছিল অসাধারণ। প্রায় ১৫ বছর আধুনিক ছিল তার ফ্যাশন। সে সময়েই সে থাইল্যান্ড গিয়ে পোশাক, জুতা, মেকআপ, ঘড়ি এসব কিনত। একটা ঘটনা মনে পড়ছে। একদিন হঠাৎ করে একটি বড় সিটিসেল ফোন এনে বলল পকেটে যে টাকা আছে আমাকে দাও আর এই ফোনটি রাখ! আমি প্রায় ৫০ হাজারের মতো টাকা দিয়ে বললাম, কেন? তখন হেসে বলল- আমার স্মৃতিটা তোমার কাছে থাক। এখন বুঝবা না, আমি মরে গেলে বুঝবা কী ছিলাম আমি! ঠিক তার কিছুদিনের মধ্যেই সালমান আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেল।

একই সঙ্গে আমাদের পথচলা শুরু
আগুন, সংগীতশিল্পী
সালমান শাহ্কে অভিনয়জীবনের শুরু থেকে পেয়েছিলাম। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় সালমান শাহ্র। একই সিনেমায় গান গেয়ে প্লেব্যাক শুরু করি আমি। সে হিসাবে একই সঙ্গে আমাদের পথচলা শুরু। তার ঠোটের অনেক জনপ্রিয় গানই আমার গাওয়া। দুজনে ছিলাম বন্ধুর মতো। আমাদের মানসিকতার খুব মিল ছিল। তাই সালমানের জন্য গাইতে গেলে অন্যরকম দরদ কাজ করত। বন্ধুর জন্মদিনে তার স্মরণে একটি নতুন গান গেয়েছি। সালমানের যত সিনেমা আছে, সবগুলো নাম দিয়ে এই গান বানানো হয়েছে। একেবারে অভিনব একটা ভাবনা। গানটি সবার ভালো লাগবে। এভাবেই আমাদের অন্তরে বেঁচে থাকুক সালমান শাহ্।

প্রিয় নায়কের জন্মদিনে গান উপহার
ইমরান, সংগীতশিল্পী
ছোটবেলা থেকেই সালমান শাহর অন্ধ ভক্ত আমি। মঞ্চে, টেলিভিশনে সরাসরি অনুষ্ঠানে এমনকি চলচ্চিত্রেও সালমান শাহ অভিনীত ছবির গান গেয়েছি। তাই প্রিয় নায়কের এবারের জন্মদিনে তাকে স্মরণ করে নতুন করে গেয়েছি তার অভিনীত ‘প্রিয়জন’ ছবির ‘এ জীবনে যারে চেয়েছি’ গানটি। আমি নিজেই নতুন করে গানটির সংগীতায়োজনও করেছি। মনিরুজ্জামান মনিরের লেখা এবং আলম খানের সুরে এই গান প্রথম গেয়েছিলেন সাবিনা ইয়াসমীন ও এন্ড্রু কিশোর। অনুপম রেকডির্ং তাদের ইউটিউবে গানটি আজই প্রকাশ করবে। গানটির ভিডিওতে মডেল হয়েছেন নাজিফা তুষি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button