লন্ডনে ফ্লয়েডের ঘটনার ছায়া: আটক ব্যক্তির গলায় পুলিশ কর্মকর্তার হাঁটুর চাপ, একজন সাসপেন্ড

লন্ডনে এক গ্রেফতারের ঘটনায় জনৈক মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্মকর্তাকে সন্দেহভাজন অপরাধীর গলায় হাঁটু দিয়ে চেপে ধরতে দেখা গেছে। একটি ভিডিওতে এমন দৃশ্য দেখার পর লন্ডন পুলিশকে পড়তে হয়েছে বিব্রতকর অবস্থায়। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, হাতকরা পড়া অবস্থায় একজন সন্দেহভাজন অপরাধী মাটিতে শুয়ে আছে আর সে চিৎকার করে বলছে “আমার গলা থেকে সরে যাও”।

মেট্রোপলিটন পুলিশ বলেছে, ভিডিওটি অত্যন্ত্য বিব্রতকর এবং তারা একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে এবং অপর একজনকে অপারেশনাল ডিউটি থেকে অপসারণ করেছে। পুলিশিংয়ের মান নির্ধারক সংস্থা আইওপিসি বলেছে, বিশেষ পরিস্থিতি ছাড়া অফিসারদের কারো গলার জায়গায় চাপ দেয়ার কথা নয়। লন্ডন মেয়র সাদিক খান, যিনি মেট্রোর দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত, বলেন যে, এ ধরণের দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় তিনি উদ্বিগ্ন। ঘটনাটি ঘটে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় উত্তর লন্ডনের ফিনসব্যারি পার্ক আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশনের নিকটে আইলডন রোডে।
ভিডিওতে দেখা যায়, সবুজ টি-শার্ট পরিহিত সন্দেহভাজন ব্যক্তি হ্যান্ডকাপ পরা অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে। আর দু’জন পুলিশ কর্মকর্তাও সেখানে রয়েছেন, মনে হয় তারা লোকটিকে অধিকতর কাবু করার চেষ্টা করছেন। ২ মিনিট ২০ সেকেন্ডের ঐ ভিডিও ফুটেজে একজন পুলিশ অফিসারকে কয়েক সেকেন্ডের জন্য সন্দেহভাজন অপরাধীর গলায় হাঁটু দিয়ে চাপ দিতে দেখা যায়।
ঐ অফিসার হাত দিয়ে লোকটির মাথা মাটিতে চেপে ধরতে দেখা যায় এবং তখন ভিড় জমে যায় এবং কিছু লোককে ছবি তোলার জন্য মোবাইল ফোন বের করতে দেখা যায়। অনেকে পুলিশ কর্মকর্তাদের মৌখিকভাবে ভৎর্সনা করতে দেখা যায়। সন্দেহভাজন ব্যক্তি একজন কৃষ্ণাঙ্গ, সে নিজেকে নির্দোষ বলে তাদের প্রতি প্রতিবাদ জানাচ্ছিলো। বলছিলো, সরে যাও, আমার গলা ছেড়ে দাও। আমি কিছু করিনি, আমার গলা ছেড়ে দাও। একজন অফিসার ঐ লোকটির কবজির চারিদিকে হ্যান্ডকাফ ধরে রেখেছিলো, তখন অপর পুলিশ অফিসারকে ইতোপূর্বে তার হাঁটু সন্দেহভাজন অপরাধীর ওপর চেপে রাখতে দেখা যায়।
সে ভিড় করা লোকজনকে সরে যাবার জন্য বলছিলো। ৯০ সেকেন্ড পর লোকটিকে ওঠে বসতে দেখা যায়। একজন লোককে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করা হয় এবং শুক্রবারে জনসমাগমের স্থানে নিজের কাছে ছোরা রাখার অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে।
৪৫ বছর বয়সী মার্কাস কোর্টেইন নামের ঐ লোকটি শনিবারে হাইব্যারি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করার কথা। ফোর্সের ডেপুটি কমিশনার স্টিভ হাউস বলেন, ভিডিও ফুটেজটি আমি আজ দেখেছি এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় এটি প্রচারিত হওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত বিব্রতকর।আমি বুঝতে পারছি, অনেকেই ফুটেজটি শেয়ার করবে, যা উদ্বেগের বিষয়।
তিনি আরো বলেন, জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন একজন পুলিশের চিকিৎসক তাকে দেখছেন। কিছু কৌশলের ব্যবহার আমার কাছে বড়ো উদ্বেগের কারণ —পুলিশ প্রশিক্ষণকালে তা করতে শেখানো হয় না।
তিনি বলেন, আমরা পুলিশ কর্মকর্তাদের দেহে সংযুক্ত ভিডিও ফুটেজ এবং তাদের বক্তব্য ও তাদের ক্ষমতা ব্যবহারের যৌক্তিকতাসহ ঘটনাটির দ্রুত মূল্যায়ন করেছি। একজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বহিষ্কার এবং অপর একজনকে অপারেশনাল ডিউটি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তবে ঐ সময় তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়নি।
ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলস-এ পুলিশিংয়ের স্ট্যান্ডার্ড এন্ড পলিসিজ -এর দায়িত্বে নিয়োজিত কলেজ অব পুলিশিং। উক্ত কলেজের জনৈক মুখপাত্র বলেন, প্রতিরোধের আওতাধীন একজন ব্যক্তির নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করা একজন পুলিশ কর্মকর্তার কাছে অগ্রাধিকার। পুলিশ কর্মকর্তাদের গলায় বা কন্ঠনালীতে চাপ প্রয়োগের অন্তর্নিহিত বিপদের কারণে এমনটি পরিহারে উৎসাহিত করা হয়, বিশেষভাবে প্রতিরোধের সময় তা করতে নিরুৎসাহিত করা হয়।
তিনি বলেন, যদি কর্মকর্তারা মনে করেন যে, তারা কিংবা কোন সাধারণ মানুষ আসন্ন বিপদের সম্মুখীন, এমন পরিস্থিতিতে তাদের যে কোন যৌক্তিক ও প্রয়োজনীয় বল প্রয়োগ করার অনুমতি রয়েছে, ঐ বিপদ প্রতিরোধের জন্য।
লন্ডন মেয়র সাদিক খান বলেছেন যে, তার অফিস বিষয়টি সিনিয়র মেট্রোপলিটন কর্মকর্তাদের কাছে উত্থাপন করেছে একটি জরুরি বিষয় হিসেবে। তিনি আরো বলেন, মেট্রোপলিটন পুলিশ ঘটনাটি দ্রুত পর্যালোচনা করায় আমি তাদের স্বাগত জানাচ্ছি। আমি এ ঘটনার দ্রুত ও পূর্ণাঙ্গ তদন্তের অপেক্ষায় আছি। আশা করি সকল সিদ্ধান্ত জনগণকে অবগত করা হবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button