লকডাউনের পর মেনে চলবেন যেসব সতর্কতা

করোনার সংক্রমণ এড়াতে অনেকদিন ধরেই লকডাউন চলছে। তবে ধীরে ধীরে অনেকস্থানে লকডাউন শিথিল করার চেষ্টা চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লকডাউন চলাকালীন তো বটেই, উঠে গেলেও নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে কিছু সতর্কতা মেনে চলতে হবে। করোনার প্রতিষেধক বা ওষুধ আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত বদলে ফেলতে হবে পুরনো জীবনযাপনের অনেকটাই। মাস্ক-সাবান-স্যানিটাইজার থাকবেই, সেখানে যোগ করতে হবে আরও অনেক কিছু। যেমন-
১. এই সময়টা বাইরের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। হুট করেই পছন্দের কোনো রেস্তোরাঁয় যাওয়া ঠিক হবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রান্না করা খাবারে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব থাকে না ঠিকই, কিন্তু কী ভাবে খাবার প্যাক হচ্ছে, কী কী উপাদান দিয়ে রান্না হচ্ছে এ সব জানা যায় না। তাই সাবধান থাকাই ভালো।
২. বাজার-দোকান করার জন্য বাইরে যেতে হলে খুব দরকার না পড়লে বাড়িতে মোবাইল রেখে যান। যাদের অফিস করতে হয়, তারা মোবাইল রাখুন ব্যাগের মধ্যে। খুব দরকার না হলে ফোন বার করবেন না। মোবাইল থেকেও সংক্রমণ ছড়ায়। বাড়ি ফিরে অ্যান্টিসেপটিক লোশন বা স্যানিটাইজার দিয়ে মোবাইল মুছে নিন। সেক্ষেত্রে তুলা বা নরম কাপড় ব্যবহার করতে পারেন। মোবাইলের কভার আলাদা করে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন।
৩. বাজারের ব্যাগ তো বটেই, অফিসের ব্যাগও সাবান পানি, কীটনাশক মেশানো পানি দিয়ে তুলা বা কাপড় ভিজিয়ে মুছে ফেলেতে পারেন। বাজারের ব্যাগ অবশ্যই সাবান দিয়ে ধুয়ে দেয়া উচিত।
৪. বের হবার জন্য গাড়ি ব্যবহার করলে সেই গাড়ি নিয়ম করে ধুতে হবে। এছাড়া নিয়মিত জীবাণুনাশকও স্প্রে করতে হবে।
৫. বাইরে বের হলে এসময় কোনও রকম গয়না পরবেন না। হাতে ঘড়ি, আংটি, পাথর পরার অভ্যাস রয়েছে অনেকের। এই ক’দিন সে সব অভ্যাস সরিয়ে রাখাই ভাল। বিশেষজ্ঞদের মতে, যে কোনও ধাতব জিনিসে এই ভাইরাস থেকে যায় অনেক ক্ষণ। তাই আংটি-পাথর থেকেও সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে।
৬. এই সময় সাধারণ ময়শ্চারাইজার ছাড়া খুব বেশি মেক আপ না করাই ভাল। মেক আপের রসায়নিক উপাদান বাতাসে ভেসে বেড়ানো নানা অণুকে ত্বকে আটকে রাখতে পারে। একান্ত প্রয়োজনে সানস্ক্রিন মাখুন। তবে চোখ-মুখ ও ঠোঁটকে যত প্রসাধনবিহীন রাখবেন, ততই সে সব পরিষ্কারে সুবিধা হবে।
৭. নিয়মিত বের হতে হলে দু’টি মাস্ক ব্যাগে রাখুন। মুখে বাঁধা মাস্ক কোনও কারণে নষ্ট হলে বা ভিজে গেলে অন্যটি ব্যবহার করুন।
৮. টাকাপয়সা নিয়ে কাজ করতে হলে হাতে গ্লাভস পরুন। বাজার করার সময়েও হাতে গ্লাভস পরলে ভালো হয়। গ্লাভস হাতে থাকলে নাকে-মুখে হাত দেওয়ার প্রবণতাও তুলনামূলক ভাবে কমে। তা ছাড়া গ্লাভস পরলে অন্যের হাতের সঙ্গে সরাসরি আপনার হাতের সংযোগ কমে।
৯. বাড়ি থেকে বের হবার সময় ফ্লাস্কে গরম পানি নিয়ে যেতে চেষ্টা করুন। বিশেষজ্ঞদের মতে, বারে বারে অল্প করে গরম পানি পান করলে করোনাসহ যে কোনও ড্রপলেট সংক্রমণ কিছুটা প্রতিহত করা যায়।
১০. গরমে কষ্ট হলেও জুতোর সঙ্গে মোজা পরতে চেষ্টা করুন। বাড়ি ফিরে জুতো-মোজা খুলে হাতে নিয়ে সোজা বাথরুমে চলে যান। রাস্তাঘাটে থুতু, কফ থেকে পায়ে পায়ে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। জীবাণু ছড়াতে পারে অন্তত ৩-৬ ফুট দূরত্ব পর্যন্ত। তাই পায়ের খোলা অংশ ঢেকে রাখুন।
১১. জুতা সাবান দিয়ে ধোওয়া সম্ভব নয় সব সময়। রাবারের বা বর্ষার জুতা পরে বের হলে অবশ্যই বাড়ি ফিরে তা ধোবেন। অন্য রকম জুতা পরলে রোজ স্যানিটাইজার স্প্রে করে নিন জুতায়। তাতেও অসুবিধা হলে বাড়ি ফিরে আলাদা জায়গায় জুতো রাখুন, পরের দিন সকালে ঘণ্টাখানেক কড়া রোদে রেখে দিন।
১২. যাদের প্রতিদিন কাজের প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হয় তারা বাড়ি ফিরে হালকা গরম পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। ড্রায়ার দিয়ে ভাল করে শুকিয়ে নিন চুল। তাতে ঠান্ডা লাগার হাত থেকে কিছুটা রক্ষা পাবেন। ঠান্ডা লাগার ভয়ে দু’বেলা চুল রোজ ধুতে না চাইলে অন্তত গোসলের সময়টা বদলে ফেলতে পারেন।
১৩. মাথার চুলও পারলে ঢেকে রাখুন। কারণ তিন থেকে ছ’ফুট দুরত্ব থেকেও ড্রপলেট ছড়াতে পারে । সেক্ষেত্রে ঝুঁকি না নিয়ে চুল ঢেকে রাখুন টুপি বা স্কার্ফ দিয়ে। বাড়ি ফিরে সেই টুপি বা স্কার্ফ ধুয়ে দিন। ঘরে ফিরে গোসল করতে পারলে আরও ভালো হয়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button