ডিসেম্বরের নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে ব্রিটেনের ব্যবসায়িক আস্থা বেড়েছে

গত বছরের ডিসেম্বরের নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে ব্রিটেনের ব্যবসায়িক আস্থা বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে সাম্প্রতিক ‘কি সার্ভের’ সমীক্ষায়। এ পরিস্থিতিতে সার্বিকভাবে উপকৃত হলেও দেশটির অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা কম বলে মনে করেন কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ। এদিকে আগামী বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের (বিওই) মুদ্রানীতি কমিটির (এমপিসি) বৈঠক রয়েছে। বৈঠকে সুদহার নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে যা নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। সুদহার কমানো নিয়ে এমপিসির সদস্যরা গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার গুরুতর জটিলতায় পড়তে যাচ্ছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে বাণিজ্যিক কার্যক্রম নিয়ে ‘কি সার্ভের’ সমীক্ষায় দেশটির আইএইচএস মার্কিটের পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) চলতি মাসে ৫২ দশমিক ৪ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ডিসেম্বরে তা ছিল ৪৯ দশমিক ৩ পয়েন্ট। প্রসঙ্গত, পিএমআই ৫০ পয়েন্টের ওপরে বা নিচে থাকলে সংশ্লিষ্ট দেশটির বেসরকারি খাত যথাক্রমে সম্প্রসারিত বা সংকোচিত হয়েছে বলে ধরা হয়।

পিএমআই বাড়ার অর্থ হলো, দেশটির কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম সম্প্রসারিত হয়েছে। সেবা খাতের চাঙ্গা ভাব ও দীর্ঘ শ্লথাবস্থার পর ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের স্থিতিশীলতার কারণে জানুয়ারিতে দেশটির বেসরকারি খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি দেশটির আরো যেসব খাত সম্প্রসারিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে আবাসন বাজার ও গাড়ি বিক্রি অন্যতম। ডিসেম্বরে খাত দুটিতে চাঙ্গা ভাব দেখা গেছে। এর অর্থ হলো, ভোক্তারা হাত খুলে অর্থ ব্যয় করতে ভয় পাচ্ছেন না।

এদিকে ডিসেম্বরের নির্বাচনে কনজারভেটিভরা হাউজ অব কমন্সে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় দেশটির কোম্পানিগুলোর মধ্যে নতুন উদ্দীপনা দেখা গেছে। কনজারভেটিভদের জয়ে ব্রেক্সিট অনিশ্চয়তা অনেকটা কমে আসায় এমনটি হয়েছে। তবে রাজনৈতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবসায়িক কার্যক্রমের বিচার অনেক সময় ভুল সিদ্ধান্তে পরিচালনা করে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। দেশটির জানুয়ারির পিএমআইয়ের সূচক আগের মাসের তুলনায় বাড়লেও এটি দেশটির সার্বিক অর্থনীতি কোন দিকে যাচ্ছে তা বোঝার জন্য যথেষ্ট নয়। ডিসেম্বরের নির্বাচন-পূর্ববর্তী সময়ে বিভিন্ন কারণে অর্থনীতিটি দীর্ঘদিন মন্থর ছিল। এ অবস্থায় দেশটির অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদে ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে এমপিসির কর্মকর্তাদের আসন্ন বৈঠকে বড় মতভেদ দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে দেশটির অর্থনীতি এখনো যথেষ্ট শক্তিশালী না হওয়ায়, এমপিসির নয় সদস্যের চারজন সম্প্রতি সুদহার কমানো উচিত বলে মত দিয়েছেন। অন্যদিকে সর্বশেষ সরকারি উপাত্তে অর্থনীতিটির একটি মিশ্র ছবি ফুটে উঠেছে। অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও নির্বাচন-পূর্ববর্তী সময়ে দেশটিতে রেকর্ড কর্মসংস্থান হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে সরকারি পরিসংখ্যানে, যা শক্তিশালী শ্রমবাজারের ইঙ্গিত দেয়। তবে এ সময় মজুরি প্রবৃদ্ধি কমেছে। গত বছরের জুলাইয়ের পর থেকে খুচরা বিক্রি বাড়েনি। তাছাড়া মূল্যস্ফীতি আটকা পড়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশে, যা লক্ষ্যমাত্রার অনেক কম।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সুদহার নিয়ে এমপিসির সদস্যরা কী সিদ্ধান্ত নেন, তার দিকে চেয়ে আছেন বিনিয়োগকারীরা। ফিউচারস মার্কেটের মূল্য নির্ধারণে এটি গুরুত্বপূর্ণ। সুদহার কর্তন করা না-করা নিয়ে সমান সমান সম্ভাবনা থাকায় বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মার্চ পর্যন্ত বিলম্বিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

সৃষ্ট পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্যাংক অব আমেরিকার অর্থনীতিবিদরা বলেন, ব্রিটেনের জানুয়ারির পিএমআই এতটা শক্তিশালী নয় যে সুদহার কমানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায়। অন্যদিকে তা এতটা দুর্বলও নয় যে, যার পরিপ্রেক্ষিতে বিওইর আসন্ন বৈঠকে অধিকাংশ কর্মকর্তা সুদহার কর্তনের পক্ষে মত দেবেন বলে নিশ্চয়তা দেয়া যায়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button