বিতর্কিত ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টার বন্ধের সিদ্ধান্ত

সাম্প্রতিক বছরসমূহে যেখানে অনেকগুলো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, সেই মর্টন হলকে কারাগারে রুপান্তরিত করা হচ্ছে। লিংকনশায়ারের সুইন্ডারবিতে এই হলটি অবস্থিত। এটাকে ১৯৮৫ ও ২০১১ সালের মধ্যে এটা একটি অনুষ্টানের আয়োজন করে, যখন এখানে নারী কয়েদীদের নিয়ে আসা হয়। ৩৯২ জনের ধারণক্ষমতার সম্পন্ন এই ডিটেনশন সেন্টার হোম অফিসের প্রিজন সার্ভিস পরিচালনা করে থাকে। এই ডিটেনশন সেন্টারের দূরবর্তী অবস্থান ও জেলসদৃশ অবস্থার দরুন কুখ্যাত হয়ে আছে।

জানাহান সিভানাথান নামক জনৈক তামিল, যিনি এখন একজন আইন শিক্ষার্থী, তাকে ৫ মাসের জন্য মর্টন হলে কারারুদ্ধ করা হয়। তিনি এ খবরকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রকৃত বিষয় হচ্ছে, এই জায়গাটি বন্ধ করে দেয়া একটি বড়ো জিনিস। আমরা এখানে ২০১৪ সালের পাঁচটি মাস বন্দী ছিলাম এবং ২০১৫ সালে আবারো এখানে ৫ মাসের জন্য আমাকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়। প্রহরীদের যে আচরণ ও গুন্ডামীর যে অভিজ্ঞতা আমার এখানে হয়েছে, তা আমার ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব সৃষ্টি করেছে।
তিনি আরো বলেন, আমি অনশন ধর্মঘট এবং আত্মপীড়ন করেছিলাম, সিগারেট দিয়ে আমার দেহে স্যাঁক দিয়েছিলাম, যখন আমি সেখানে বন্দী ছিলাম। আমার দেহের সেই পোড়া ক্ষত প্রতিদিন সেই স্থানের কথা আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এর প্রভাব মন থেকে মুছে যাবার মতো নয়।
সিবানাথান বলেন যে, তিনি আশা করেন হোম অফিসের অন্যান্য ৬টি ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টার এবং দুটি স্বল্প মেয়াদের হোল্ডিং সেক্টরও বন্ধ হবে। কোভিড মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে ইমিগ্রেশন বন্দীর সংখ্যা নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে। ২০২০ সালের শুরুতে যা ছিলো ১২০০ জন, মে মাসে তা নেমে যায় ৩৫৮ জনে।
ইমিগ্রেশন ডিটেনশনের বিরুদ্ধে প্রচারকারীরা বলেন, এতে এটাই প্রমাণিত হয় যে,যুক্তরাজ্যে এতো ব্যাপকভাবে ডিটেনশন ব্যবহারের কোন প্রয়োজন নেই,যখন কমিউনিটির লোকজনকে পর্যবেক্ষণের জন্য সস্তা ও অধিকতর মানবিক উপায়সমূহ রয়েছে। যুক্তরাজ্যে ইউরোপের সর্ববৃহৎ ডিটেনশন সিস্টেমসসমূহের একটি রয়েছে। যুক্তরাজ্য এ অঞ্চলে একমাত্র দেশ যেখানে ডিটেনশন অর্থ্যাৎ কারাবন্দীদের কোন আইনানুগ মেয়াদসীমা নেই। চলতি বছরের শুরুতে “রাজকীয় ইন্সপেক্টরেট অব প্রিন্সেস”-এর একটি রিপোর্টে দেখা যায়, মর্টন হলে উচ্চ মাত্রার আত্মপীড়ন, সহিংসতা ও বল প্রয়োগ বিদ্যমান।
চ্যারিটি মেডিকেল জাস্টিস-এর পরিচালক এম্মা জিন, যিনি ইমিগ্রেশন বন্দীদের স্বাস্হ্যের অধিকার নিয়ে কাজ করেন, বলেন, আমরা মর্টন হলের ইমিগ্রেশন ডিটেনশনের সমাপ্তির সংবাদকে স্বাগত জানাচ্ছি। ইমিগ্রেশন বন্দীদের জন্য এটা একটি
দুর্ভোগ, আত্মপীড়ন ও মৃত্যুর জায়গা।
জনৈক মেডিকেল জাস্টিস মক্কেল, যিনি এখানে কারারুদ্ধ ছিলেন, তিনি এটাকে ‘নরকের গর্ত’ বলে আখ্যায়িত করেন। হোম অফিসের জনৈক মুখপাত্র বলেন, রাজকীয় প্রিজন সার্ভিসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মর্টন হলের একটি ডিটেনশন সেন্টার হিসেবে এর ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাবে ২০২১ সালে। এটা রুপান্তরিত হবে একটি সাধারণ কারাগারে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button