বাংলাদেশ ব্যাংককেই দায়ী করছে রিজাল ব্যাংক

Bangladesh Bank Logoবাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপিন্সের যে ব্যাংক দিয়ে জালিয়াতদের হাতে গেছে, সেই রিজল কমার্সিয়াল ব্যাংক (আরসিবিসি) আবারও ওই ঘটনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে দায়ী করেছে।
তাদের অভিযোগ, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় নিজেদের গাফিলতির দায় এড়াতে তথ্য গোপন করে বাংলাদেশ ব্যাংক এখন আরসিবিসিকে ‘বলির পাঁঠা’ বানাতে চাইছে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রিজলের বিরুদ্ধে মামলা করার উদ্যোগ এবং অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সাম্প্রতিক এক মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ম্যানিলাভিত্তিক ওই ব্যাংকের এ বক্তব্য এসেছে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশের এক বিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফেলার চেষ্টা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি মেসেজে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপিন্সের আরসিবিসিতে। আর আরেক আদেশে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয় ২০ লাখ ডলার।
শ্রীলঙ্কায় পাঠানো অর্থ ওই অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া শেষ পর্যন্ত আটকানো গেলেও ফিলিপিন্সের ব্যাংকে যাওয়া অর্থের বেশিরভাগটাই স্থানীয় মুদ্রায় বদলে জুয়ার টেবিল ঘুরে চলে যায় নাগালের বাইরে।
ওই টাকার মধ্যে এক ক্যাসিনো মালিকের ফেরত দেওয়া দেড় কোটি ডলার বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দিয়েছে ফিলিপিন্স। এ ঘটনায় রিজল ব্যাংককে ২০ কোটি ডলার জরিমানাও করেছে ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জরিমানার অর্থ পরিশোধ করলেও বাংলাদেশকে বাকি অর্থ ফেরতে কোনো দায় নিতে রাজি নয় ব্যাংকটি।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা গতমাসে এক কনফারেন্স কলে রিজলের বিরুদ্ধে মামলা করার পরিকল্পনা নিয়ে নিউ ইয়র্ক ফেডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন, যেখানে ব্যাংকিং লেনদেনের আন্তর্জাতিক মেসেজিং নেটওয়ার্ক সুইফটের দুজন প্রতিনিধিও ছিলেন বলে খবর দেয় রয়টার্স।
সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, চুরি যাওয়া টাকা উদ্ধারের জন্য আগামী মার্চ-এপ্রিল নাগাদ নিউ ইয়র্কে একটি দেওয়ানি মামলা করার প্রাথমিক পরিকল্পনা হয়েছে। বাংলাদেশ আশা করছে, ফেডারেল রিজার্ভ ও সুইফট কর্তৃপক্ষও সেখানে বাদী হবে।
রোববার রয়টার্সের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও ওই মামলার বিষয়ে কখা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বাংলাদেশ এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, কারণ ফিলিপিন্স সরকার বিষয়টি দেখছিল।
“কিন্তু মনে হচ্ছে, রিজল ব্যাংকের মধ্যেই ঝামেলা আছে। আমরা এই পৃথিবী থেকে রিজল ব্যাংককে মুছে দিতে চাই।”
এর জবাবে রিজল কমার্সিয়াল ব্যাংকের হেড অব লিগাল অ্যাফেয়ার্স জর্জ ডেলা কুয়েস্তা মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, “আইনত যেসব তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব, তার সবই ফিলিপিন্সের সিনেট এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দিয়েছে আরসিবিসি। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক সম্ভব সব কিছুই লুকিয়েছে।”
ব্যাংক খাতে হ্যাকিংয়ের সবচেয়ে বড় এই ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার যে তদন্ত করেছিল, তার প্রতিবেদন দেখতে চেয়েছিল ফিলিপিন্স সরকার। কিন্তু অর্থমন্ত্রী মুহিত তখন বলেছিলেন, ফিলিপিন্স চাইলেও ওই প্রতিবেদন তাদের দেওয়া হবে না।
আরসিবিসি আগেও বলেছিল, এ ঘটনায় তাদের কোনো দায় নেই, বাংলাদেশ ব্যাংকই দায়ী। মঙ্গলবারের বিবৃতিতেও তারা একই সুরে কথা বলেছে।
“ওই ঘটনায় অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের দায় আছে। স্বচ্ছ্বতার ব্যাপারে তাদের যে আপত্তি, তথ্য চেপে রাখার যে টেষ্টা, তা সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে লড়াইকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আরসিবিসি বাংলাদেশ ব্যাংকের গাফিলতির শিকার।” -বিডিনিউজের

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button