ঋণ গ্রহণের ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ অর্থনীতির জন্য জরুরী হয়ে পড়েছে

সরকারগুলোকে একমাত্র যুদ্ধকালীন সময় ছাড়া কল্পনাও করা যায় না এমন বেশী পরিমাণ ঋণ করতে হবে

যখন রাষ্ট্র জনগণের মজুরী পরিশোধের জন্য পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করেছে এবং দেউলিয়া কোম্পানীগুলোকে টিকিয়ে রাখার জন্য ঋণ দিচ্ছে এবং যখন চ্যান্সেলর সীমাহীন ঋণ নিতে প্রস্তুত, তখন সবার মনে রাখা উচিত যে, আমরা অস্বাভাবিক সময়ে বসবাস করছি। ঋষি সুনাক ও বিভিন্ন দেশে তার সহকর্মীগণ কর্তৃক গৃহীত নীতিমালা কভিড-১৯ কর্তৃক সৃষ্ঠ অর্থনৈতিক ফাটলের মধ্যে সেতু তৈরী পরিকল্পনায় রয়েছেন।

বিশ্বব্যাপী সরকারেরা আশা করেন, তারা আমাদের অর্থনৈতিক এবং আর্থিক নেটওয়ার্কসমূহকে সজীব রাখতে পারেন। এমনকি যদি ঐসব নেটওয়ার্ককে অনির্দিষ্টকালের জন্য লাইফ সাপোর্টে রাখতে হবে।
তা রাখতে হবে আমাদের পুরোনো, অবহেলিত, ভাইরাসপূর্ব বিশ্বের সাথে ভাইরাস পরবর্তী বিশ্বের মধ্যে সংযোগ স্হাপনের জন্য, যা আমাদের জীবণযাত্রাকে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারে। এটা একটি জুয়া খেলা। কিন্তু কাজের জুয়া খেলা। যদি কভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াই সংশ্লিষ্ট বিপুল ক্ষয়ক্ষতির অংশ হিসেবে আমাদের অর্থনৈতিক নেটওয়ার্ক ধ্বংস হয়ে যায়, তবে ‘ভি’ আকৃতির অর্থনৈতিক প্রত্যাবর্তনের পরবর্তী আশাটুকু শূণ্যে মিলিয়ে যাবে। আমাদের জীবণযাত্রার মান চিরতরে নীচে নেমে যাবে এবং মন্দাক্রান্ত সম্পত্তির মুল্যের দরুন ভবিষ্যত অবসরভোগীরা স্হায়ীভাবে আরোও দরিদ্র হয়ে পড়বেন। এখনো অনেক বিষয় সমাধানের বাকী, উদাহরণস্বরূপ, কীভাবে আত্মকর্মসংস্হানে সহায়তা করা যায়, কিন্তু এক্ষেত্রে একটি নীতি হচ্ছে যা মানতে হবে, যা-ই ঘটুক সরকারগুলোকে একমাত্র যুদ্ধকালীন সময় ছাড়া কল্পনাও করা যায় না এমন বেশী পরিমাণ ঋণ করতে হবে। শুধুমাত্র কৃচ্ছ্রতা মাধ্যমেই শেষ নয় বরং তা রাষ্ট্রর এই সংকট উত্তরণে ব্যাপক কর্মসূচীর শুরু বলা যায়।
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই হাজারো জীবণ রক্ষা করবে কিন্তু অর্থনীতির লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবণ রক্ষা করবে। ক্ষয়কারী ঋণবৃ্দ্ধির বিষয়টি ঝুঁকিহীন নয় —এর একটি কারণ হচ্ছে, স্বাভাবিক সময়ে সরকারগুলো নিজেদের অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অমলিন রাখতে আর্থিক নীতিমালা অনুসরণ করে। বর্তমানে খুব বেশি পরিমাণে ঋণ গ্রহণ আগামী দিনের জন্য অতিমাত্রায় কৃচ্ছ্রতা, খেলাপী অবস্হা কিংবা মূল্যস্ফীতির দিকে পরিচালিত করতে পারে।

যদি কভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াই সংশ্লিষ্ট বিপুল ক্ষয়ক্ষতির অংশ হিসেবে আমাদের অর্থনৈতিক নেটওয়ার্ক ধ্বংস হয়ে যায়, তবে ‘ভি’ আকৃতির অর্থনৈতিক প্রত্যাবর্তনের পরবর্তী আশাটুকু শূণ্যে মিলিয়ে যাবে। আমাদের জীবণযাত্রার মান চিরতরে নীচে নেমে যাবে এবং মন্দাক্রান্ত সম্পত্তির মুল্যের দরুন ভবিষ্যত অবসরভোগীরা স্হায়ীভাবে আরোও দরিদ্র হয়ে পড়বেন।

ইউরোজোন সংকটের সময়, গ্রীসকে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি কৃচ্ছ্রতা সাধন করতে হয়েছিলো এবং শেষ পর্যন্ত আংশিক খেলাপী হতে হয়েছিলো। স্পেন, পর্তুগাল ও আয়ারল্যান্ডকেও আর্থিক দিক দিয়ে ‘নীলডাউন’ হতে হয়েছিলো।
যুক্তরাজ্যকে সত্তরের দশকে তার নিজস্ব ঋণগ্রহণ সমস্যাবলীর সম্মুখীন হতে হয়েছিলো, ১৯৭৬ সালে একটি আইএমএফ ‘বেইলআউট’ (উত্তরণের পন্হা)-এর চরম লজ্জার শিকার হতে হয়েছিলো। এবং ভার্সাই চুক্তির পর জার্মানী ও অষ্ট্রিয়াকে চরম মুল্যস্ফীতির মোকাবেলা করতে হয়েছিলো প্রথম মহাযুদ্ধ পরবর্তী অতিরিক্ত ও ভর্তুকির সম্মিলিত কারণে। বর্তমান সময়ে, যতো বেশি সম্ভব কোম্পানিগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার অগ্রাধিকার দিতে হবে। এর কারণটি সহজ।
যখন কভিড-১৯ এর বিপজ্জনক খাদে পড়া বহু সংখ্যক ব্যবস্যা প্রতিষ্ঠান উদ্বেগপূর্ণ পরিস্হিতিতে রয়েছে, তখন মার্কেটসমূহ সঠিকভাবে কাজ করতে পারবে না। তবে যারা ভিন্ন অর্থ্যাৎ ঝুঁকিপূর্ণ পন্হা অবলম্বন করবে তাদের জন্য সুখবর থাকতে পারে। এই ঝুকির পন্হা তাদের ব্যবসাকে বাঁচিয়ে রাখতে দিতে পারে।
যারা এ পরিস্হিতিতে চাকুরি হারাবে তারা ভালো কাজ পেয়ে যেতে পারে। যেসব বাড়ির মালিক তাদের মর্গেজের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ, তারা তাদের বাড়িঘরে অবস্থানের সুযোগ পাবে। এভাবে দেখলে বিপুল সরকারী ঋণ বৃদ্ধির বিষয়টি আমাদের উদ্বেগ অনেকটা হ্রাস করবে।
ফলশ্রুতিতে আমরা আমাদের বর্তমান সংকট উত্তরণে আমাদের ভবিষ্যতকে কাজে লাগাতে হবে, অর্থ্যাৎ ভবিষ্যতের ঝুঁকি নিয়ে হলেও বর্তমান সংকট পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যদি আমরা সম্মিলিতভাবে আমাদের বর্তমান সুযোগ সমূহকে আর্থিক সংকট উত্তরণে কাজে লাগাতে সক্ষম হই, তবে আমাদের ভবিষ্যত পরিস্হিতির অনেক কিছু থাকবে আমাদেরকে সাধুবাদ জানানোর জন্য।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button