মাগফিরাতের রমজান

তাকওয়া অর্জনের উত্তম সময়

মুহা. ওয়াহীদুর রহমান: আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দরবারে শুকরিয়া, যিনি আমাদের আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করে তার ইবাদতের পাশাপাশি তাকে ভয় করা বা তাকওয়া অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন। তাকওয়া আরবি শব্দ, এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বিরত থাকা, পরহেজ করা, ভয় করা ইত্যাদি। অর্থাৎ আল্লাহতায়ালা যেসব বিষয় পালন করার নির্দেশ করেছেন তা পালন করা এবং নিষিদ্ধ বিষয়গুলো বর্জন করার নামই তাকওয়া। যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের মুত্তাকি বলা হয়। মুত্তাকিদের পরিচয় সম্পর্কে কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হচ্ছে- ‘যারা গায়েবের প্রতি ইমান রাখে; নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে; আর যা আপনার ওপর নাজিল করা হয়েছে তার প্রতি ইমান রাখে; আর তারা আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস করে।’ (বাকারা : ৩-৪)

পবিত্র মাহে রমজান এসেছে আমাদের তাকওয়া শিক্ষা দেওয়ার জন্য, মুত্তাকি বানানোর জন্য, যেমনটি আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেছেন- ‘তোমাদের ওপর সিয়াম বা রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা পরহেজগারি অর্জন করতে পার।’ (বাকারা : ১৮৩)। এ আয়াতে ছোট দুটি শব্দ, একটি হচ্ছে ‘সিয়াম’ অপরটি ‘তাত্তাকুন’। উভয়ই আরবি শব্দ এবং একটি অপরটির পরিপূরক। যেমন ‘সিয়াম’ শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে ইমছাক বা বিরত থাকা। আর ‘তাত্তাকুন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে পরহেজগারি অর্জন করতে পারা, মুত্তাকি হতে পারা ইত্যাদি।

অর্থাৎ বান্দা যেভাবে রমজান আল্লাহতায়ালার নির্দেশের আলোকে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার ও যৌন সম্ভোগ থেকে নিজকে বিরত রেখেছে, সেভাবে জীবনের সব ক্ষেত্রে আল্লাহতায়ালার আদিষ্ট বিষয়গুলো পালন করা যেমন- নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, সততা, সত্যবাদিতা, আমানতদারিতা, আদল-ইনসাফ, সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজে নিষেধ ইত্যাদি বিষয় পালন এবং তিনি যেসব বিষয় বর্জন করার জন্য বলেছেন যেমন- সুদ, ঘুষ, মদ, জুয়া, মিথ্যা, প্রতারণা, খাদ্যে ভেজাল, ওজনে কম দেওয়া, জুলুম, অন্যায়-অপরাধ, চুরি, ডাকাতি, ব্যভিচার ইত্যাদি বিষয় বর্জন করাই তাকওয়া। পবিত্র মাহে রমজান এসেছে তাকওয়ার এ বিষয়গুলো শিক্ষা দেওয়ার জন্য।

রমজানে শুধু কি খানাপিনা বন্ধ রাখাই তাকওয়া অর্জন এবং সিয়াম পালন? না বরং প্রত্যেকটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের রয়েছে সিয়াম; যেমন- চোখ দিয়ে কোনো অশ্নীল ছায়াছবি না দেখা, মুখ দিয়ে কোনো অশ্নীল কথা না বলা, কাউকে গালি না দেওয়া, হাত দিয়ে অন্যায়ভাবে কাউকে আঘাত না করা, পা দিয়ে কোনো অন্যায় কাজে না যাওয়া, নিজের চিন্তা-চেতনা ইসলামবিরোধী কোনো কাজে ব্যয় না করে ইসলামের পক্ষে কাজে লাগানো ইত্যাদি কাজগুলো যখন কোনো মুসলমান করবে তখন সে একজন মুত্তাকি হিসেবে পরিগণিত হবে।

তাছাড়া তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে বান্দাহ আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছে ও অশেষ পুরস্কারের পাত্র হয়। যেমন ইরশাদ হচ্ছে- ‘হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে আল্লাহ তোমাদের ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করার শক্তি দেবেন। তোমাদের পাপমোচন করে দেবেন, তোমাদের ক্ষমা করবেন, আল্লাহ অতিশয় দয়ালু।’ (আনফাল : ২১)। অন্যত্র বলেছেন- ‘মুত্তাকিরা থাকবে নিরাপদ স্থানে (দু’খান : ৫১) এবং তিনি তাদের ভালোবাসেন।’ যেমন তিনি বলেন- ‘নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালোবাসেন।’ (তাওবা : ৪)

এ ছাড়া আল্লাহতায়ালার কাছে মুত্তাকিগণ অধিক সম্মানিত। কোরআন মাজিদের ভাষ্য- ‘তোমাদের মাঝে সে ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে অধিক সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকি।’ (হুজুরাত : ১৩)। কোনো ব্যক্তির অধিক ধন, সম্পদ, শিল্প, কলকারখানা, ক্ষমতা, সুন্দর স্বাস্থ্য, সুন্দর চেহারা আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত হওয়ার কারণ নয়। বরং আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানের কারণ হচ্ছে তাকওয়া অর্জন। সুতরাং, মানুষের মধ্যে যতদিন ব্যাপকভাবে তাকওয়ার সৃষ্টি না হবে, ততদিন মানবজাতির সামগ্রিক কল্যাণ আশা করা যায় না।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button