৫ লাখ কোটি টাকা দিলেও শেষ হয়ে যাবে

পুঁজিবাজার সিংহ-ছাগলের বাজার: অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, পুঁজিবাজার সিংহ-ছাগলের বাজার। এ মুহূর্তে পুঁজিবাজারে ৫০ কোটি নয়, যদি পাঁচ লাখ কোটি টাকাও দেয়া হয় তাহলেও শেষ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ব্যাংক ঋণে সুদের হার বেশি। এত বেশি সুদ দিয়ে কখনোই ব্যবসা করা যাবে না। বাজেটে সঞ্চয়পত্রের সুদহার পরিবর্তন হবে না বলেও মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনইসি সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় তিনি এ সব কথা বলেন। দেশের এনজিও নেতা, ইলেকট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক ও সাংবাদিক এবং ইকোনমিক রিপোর্টাস ফোরামের (ইআরএফ) কার্যনির্বাহী কমিটির নেতারা এতে অংশ নেন।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সঙ্গে বৈঠকের পর আমি বললাম বর্তমান বাজার যে খারাপ হচ্ছে এর পেছনে কেউ আছে। পরদিন ১০০ পয়েন্ট পড়ে গেল। যদি পুঁজিবাজার খারাপ অবস্থা বলতাম তাহলে কি হতো। সামনে বাজেট। পুঁজিবাজার বিষয়ে বাজেটে কিছু না কিছু প্রণোদনা থাকবে। এখন বাজার ভালো হওয়ার কথা। কিন্তু তা না হয়ে খারাপ হচ্ছে। এটি যারা করে তারা বুঝে শুনেই করে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর হব।

বাজারে দুটি পক্ষ রয়েছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ দুটি পক্ষের মধ্যে এক পক্ষ সিংহ অপরটি ছাগলের বাচ্চা। এ দুটোকে এক করা সম্ভব নয়। হয় পুঁজিবাজার নিজ থেকে ভালো হবে, না হলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া এ বাজার ভালো করা সম্ভব নয়। পুঁজিবাজার বুঝিয়ে ঠিক করা সম্ভব নয়। আমরা কতজনকে বুঝাবো। দেশব্যাপী বিনিয়োগকারী রয়েছে। পুঁজিবাজারে শত শত কম্পোনেন্ট। এর একটি ঠিক করে ভালো করা সম্ভব নয়। তাই আমাদের সবাইকে বোঝাতে হবে যেন পুঁজিবাজারে না বুঝে কেউ না আসে। পুঁজিবাজার দেশের অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পুঁজিবাজারের উন্নতি ছাড়া দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়।

বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজার নিয়ে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। দেশের অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন করা হবে। আমরা বারবার এ বাজারকে নিয়ে নাজুক অবস্থায় পড়তে চাই না। মানুষের গালাগালি শুনতে চাই না। এ জন্য আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নেব। অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক ঋণে সুদের হারকে অনেক বেশি। এত বেশি সুদ দিয়ে কখনোই ব্যবসা করা যাবে না। সুদের ওপর নতুন করে সুদ আরোপ করা হচ্ছে। আগামীতে সুদের হার অনেক কমিয়ে নিয়ে আসা হবে, যেন ঋণখেলাপি না হয়।

মুস্তফা কামাল বলেন, ব্যাংকিং ব্যবস্থা খুব ভালো আছে, এটা বলব না। তবে খুব খারাপও নেই। এ খাতের উন্নয়নে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি হচ্ছে। অনেকেই খেলাপি ঋণের বিপরীতে কোনো উদ্যোগ নিতে পারছে না। মামলা করতে পারছে না। এসব বিষয়ে আসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি উদ্যোগ নেবে। আমার ওপর বিশ্বাস রাখুন। অসততা আমাকে স্পর্শ করেনি, করবেও না। আমি অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছি। সাধারণ মানুষের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা রয়েছে। আমি অনুরোধ করব, এই দেশটা আমাদের। দেশের ক্ষতি হয়, দেশের মানুষের চলার পথে যেন প্রতিবন্ধকতা না হয়, সেজন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। সবাই সবার জায়গা থেকে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, ব্যবসা করলে লাভ বা লোকসান হতে পারে। যারা লোকসান দেয়, তাদের জন্য কোনো ব্যবস্থা থাকে না। ঋণখেলাপি হওয়ার পরও সব ব্যবসায়ীদের জেলে পাঠালে তো হবে না। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ যেসব পণ্য বিদেশ থেকে আসবে সেগুলো শতভাগ স্ক্যানিং হয়ে আসবে। আবার যেসব পণ্য রফতানি হবে সেগুলোও শতভাগ স্ক্যানিং করা হবে। তাছাড়া র‌্যান্ডম স্যাম্পলিংয়ের মাধ্যমে পরিদর্শন করার ব্যবস্থা করা হবে। দেশের ৪ কোটি মানুষ কর দেওয়ার যোগ্য হলেও কর দেন মাত্র ২৯ লাখ মানুষ। এজন্য ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স নির্ধারণ করা হবে।

আলোচনায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, সংবাদপত্রের পাঠক সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছে। এর ফলে আয়ও কমে যাচ্ছে। অনলাইনেও আয় তেমন নেই। সংবাদপত্র প্রকাশে বিভিন্ন খাতে ব্যয় বাড়ছে। ভ্যাট আইনে সংবাদপত্রে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া আছে। এরপরও এ খাতে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এ কর প্রত্যাহার করতে হবে। এসময় করপোরেট ট্যাক্স কমানোর প্রস্তাব করেন তিনি।

সাংবাদিকদের বাড়িভাড়া হিসেবে পরিশোধিত অর্থকেও শতভাগ করমুক্ত রাখার দাবি জানিয়ে মতিউর রহমান বলেন, মূল বেতনের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ি ভাড়ায় করমুক্ত রয়েছে। বর্তমান বেতন কাঠামোতে সাংবাদিকদের বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয় ৭০ শতাংশ। অবশিষ্ট ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়ায় কর প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশের গণমাধ্যম আর্থিকভাবে খারাপ সময় পার করছে বলে সভায় দাবি করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী। তিনি বলেন, ইলেকট্রনিং টেন্ডারের কারণে সরকারের বিজ্ঞাপনের পরিমাণ কমে এসেছে। বিজ্ঞাপন দেওয়া হলেও এর পরিধি থাকে তুলনামূলক কম। এ অবস্থায় সরকারি বিজ্ঞাপনের দর বাড়ানো ও বিজ্ঞাপনের ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব দেন তিনি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্রের সুদহারে কোনো পরিবর্তন আসবে না। সঞ্চয়পত্রের রেট ও রিটার্নে আমরা হাত দেয়নি, আর দেব না। তবে সঞ্চয়পত্রের সংস্কার নিয়ে কাজ চলছে। সঞ্চয়পত্রের যাদের জন্য করা হয়েছে শুধু তারাই এখানে বিনিয়োগ করতে পারবে। এক্ষেত্রে তারা কোনো ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। অনেক অবৈধ টাকায় সঞ্চয়পত্র কেনা হচ্ছে। ফলে যে পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হওয়ার কথা তার চেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। এটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button